আন্দোলনে উপস্থিত থাকলে, দেখাতে হবে ‘শো-কজ়’
দিন যাচ্ছে কেটে, অনশনে অসুস্থ হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ! তাও কোনো জবাব দিতে নারাজ সরকার।
@ দেবশ্রী : নিজেদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়, রাজ্যের পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তারা চালাচ্ছে অনশন। মারা যান, ২ জন। কিন্তু তবু এ বিষয়ে রাজ্য সরকার কোনোরকম বক্তব্য করছিলেন না। তবে এই বিষয়ে এবার উঠে এল, নতুন নোটিশ। রাজ্যের কোন কোন পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকা ‘স্কুল কামাই’ করে অনশন আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, তা খুঁজতে নেমেছিল বিকাশ ভবন। আর তা খুঁজে বের করার পরে, এ বার তাঁদের কে ‘শো-কজ়’ বা কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হচ্ছে।
জবাব যদি সন্তোষযোগ্য বলে মনে না হয়, তাহলে গোটা বিষয়টি, সমগ্র শিক্ষা মিশনের রাজ্য প্রকল্প অধিকর্তার কাছে যাবে বলে জানা গেছে।
পূর্ণ সময়ের শিক্ষকের মর্যাদা, নির্দিষ্ট বেতনহার ইত্যাদির দাবিতে ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলন। ১৫ নভেম্বর থেকে চলছে অনশন। ১১ থেকে ২২ নভেম্বর কারা অনুমতি ছাড়াই গরহাজির, সমগ্র শিক্ষা মিশন তা জানতে চেয়েছিল। ২৯ নভেম্বর মিশনের রাজ্য প্রকল্প অধিকর্তার তরফে জেলা শিক্ষা আধিকারিকদের কাছে একটি নির্দেশ পাঠানো হয় এবং তাতে বলা হয়, কিছু পার্শ্ব শিক্ষক ফিল্ড ডিউটিতে ছিলেন বলে জানানো হলেও বিষয়টির সত্যতা যেন যাচাই করা হয়। ২২ নভেম্বরের পরেও যাঁরা অনুপস্থিত, তাঁদেরও শো-কজ় করা হবে বলে স্কুলশিক্ষা দফতরের খবর।
স্কুলে অনুপস্থিত থেকে আন্দোলনে গেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই জানান। সোমবার বিধানসভায় পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারি বিবৃতির দাবি জানায় বাম ও কংগ্রেস দল। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী সভায় থাকা সত্ত্বেও তাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি। হইচই শুরু করে দেন বাম ও কংগ্রেস বিধায়কেরা। কিন্তু এটা দৃষ্টি আকর্ষণের মতো কোনো বিষয় নয় বলে জানান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী পরে সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, ‘‘পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে সরকার একটা বিবৃতি দেওয়ার সাহস দেখাতে পারল না ! মন্ত্রী চুপ। সরকার যদি এরপরেও চুপ করে থাকে তাহলে বিধানসভা চালাতে দেব না। এর পরে পার্শ্ব শিক্ষকদের বিষয়ে মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করা হবে।’’ কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকার খেলা, মেলা, ক্লাবে মুড়িমুড়কির মতো টাকা খরচ করছে। কিন্তু পার্শ্ব শিক্ষকদের সমস্যার সুরাহা খুঁজছে না। সরকারের উচিত নমনীয় হয়ে ওঁদের সঙ্গে আলোচনা করা।’’ সুজন চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘‘শিক্ষকদের এই দাবি খুবই সাধারণ দাবি, তা না শোনার তো প্রশ্ন ওঠেনা।’’ আর যে অনশনের জেরে ২ জন মারা গেছেন, সেই বিষয়ে আগে দৃষ্টিপাত করা উচিত। অন্তত তাদের কথা শোনা উচিত। কিন্তু সরকার তেমন কিছুই করছে না।
রাতে শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন এবং মেসেজ করেও কোনোরূপ কথা বলা যায়নি। আন্দোলনকারীরা শিক্ষামন্ত্রীকে দু’বার এই বিষয়ে চিঠিও দিয়েছেন। নজরুল মঞ্চে আলোচনার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের প্রধান ভগীরথ ঘোষ জানান, এ বার সরকার ‘শো-কজ়’ করে ভয় দেখিয়ে আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করছে। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাঁরা আদালতে যাবেন। ভগীরথবাবু আরও বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে আমরা আন্দোলন করছি। আর অগণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করছে সরকার। আমরা তা মেনে নেব না।’’ কোর্টের অনুমতি প্রদানের পরেই হচ্ছে এই আন্দোলন। সেখানে এই ধরনের বাঁধা কখনও মানানসই নয়।