“আমি আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক।”: রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব !
নতুন বছরের সাত সকালেই সকল ঠাকুর বাড়িতে পুজোর ডালি নিয়ে ১৩৩ বছর আগের রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের অমূল্য বাণী আজও বড় প্রাসঙ্গিক , বর্তমান ভারতে NRC থেকে বেরোজকারী। হতাশাময় অবস্থায় বড় প্রাসঙ্গিক চর্চা হয়ে উঠলো ঠাকুর বাড়ি প্রাঙ্গন , তবে আড়ালে আবডালে।
নিজস্ব সংবাদদাতা : বছরের প্রথম দিনের সাত সকালে সকলের জন্য শুভ কামনা আর সকলের উন্নতির প্রার্থনা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন ঠাকুর বাড়িতে বিশেষ সমারোহে পালিত হচ্ছে কল্পতরু উৎসব।মঙ্গলারতি, চণ্ডীপাঠ, উপাসনা, গীতি আলেখ্য— নানা আয়োজন শ্রীরামকৃষ্ণের কল্পতরু উৎসবে। দীর্ঘ নিঃস্বাস আর হতাশার পরিবর্তে খুঁজতে চাইছে মানুষ শান্তি আর স্বস্তির পথ। আমার ভালো সবার ভালো এই মতেই মাথা দোলাচ্ছে সবাই। বড় অশান্তি মনে , অনেক শঙ্কা – কি হবে কি হবে। দেশের চর্চা এক দল মানুষ কে বার করে দেওয়া হবে, কত ঘর বেঘর হবে , ঝুলছে ফারা মাথার ওপর আর এই নিয়ে আইন পাস্ থেকে সরকারি নিদানে চলছে তার প্রস্তুতি।সব মিলিয়ে অস্থির অবস্থানে স্বস্থির নিঃস্বাস খোঝাই যে বড় বিষয়।
আজকের দিনে ১৮৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি প্রথম কল্পতরু উৎসবের দিনটিতে রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর অনুগামীদের জীবনে ছিল এক “অভূতপূর্ব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।” রামকৃষ্ণ পরমহংস সেই সময় দুরারোগ্য গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থারও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছিল। উত্তর কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলের একটি বাগানবাড়িতে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১ জানুয়ারি একটু সুস্থ বোধ করায় তিনি বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর অনুগামী নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার কী মনে হয়, আমি কে?” গিরিশচন্দ্র বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে রামকৃষ্ণ পরমহংস “মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবতীর্ণ ঈশ্বরের অবতার।” রামকৃষ্ণ পরমহংস বলে, “আমি আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক।”এরপর তিনি সমাধিস্থ হয়ে তাঁর প্রত্যেক শিষ্যকে স্পর্শ করেন। রামকৃষ্ণ-অনুগামীদের মতে, তাঁর স্পর্শে সেদিন প্রত্যেকের অদ্ভুত কিছু আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল।
রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, সেই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন।তিনিই এই দিনটিকে কল্পতরু দিবস নাম দিয়েছিলেন, যা পরে কল্পতরু উৎসব নামে পরিণত হয়েছিল।উল্লেখ্য, এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের গৃহস্থ শিষ্যরাই তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যেরা সেই দিন তাঁর কাছে ছিলেন না।
১৮৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি এই উৎসব শুরু হয়েছিল। এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর অনুগামীদের কাছে নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষণা করেছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব পালিত হলেও কাশীপুর উদ্যানবাটীতে (বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটি শাখাকেন্দ্র) এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। এখানেই রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবনের শেষদিনগুলি অতিবাহিত করেছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীরা এই উৎসবকে “ঠাকুরের বিশেষ উৎসব”গুলির মধ্যে অন্যতম উৎসব হিসেবে গণ্য করেন। আর এই নিয়ে আধ্যাত্বিক চেতনার মাঝে সামাজিক অস্থিরতার ভাবনা বেশ অনেকটাই ঘিরে ধরেছে উপস্থিত ভক্তদের আলোচনায়।