এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতাল করতে করতে প্রাণ গেল মা ও সদ্যজাত শিশুর !
করোনার জেরে হয়রানি অন্যান্য রোগীদের, পাচ্ছেনা সময় মতো চিকিৎসা
@ দেবশ্রী : আবারও একবার অভিযোগ উঠল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তেলেঙ্গানায় এক তরুণী ও তাঁর সদ্যোজাত ছেলের মৃত্যুর খবরে গাফিলতির অভিযোগ উঠল একাধিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তাঁরা করোনা আক্রান্ত কিনা সেই সন্দেহে তাঁদের চিকিত্সায় দেরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই তরুণীর স্বামী। সোমবার তেলেঙ্গানার গাদোয়াল জেলার বাসিন্দা ২০ বছরের ওই তরুণীর মৃত্যু হয়। তার আগের দিনই মৃত্যু হয় তাঁর এক দিনের ছেলের। এই ঘটনার পরে তরুণীর স্বামী মহেন্দ্র সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছেন একাধিক হাসপাতাল তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের চিকিত্সায় দেরি করায় তাঁরা মারা গেছে।
জানা গিয়েছে, গত ২৪ এপ্রিল ওই তরুণীর প্রসব যন্ত্রণা হলে তাঁকে গাদোয়াল শহরের হাসপাতালে নিয়ে যান মহেন্দ্র। কিন্তু তরুণীর রক্তাল্পতা ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে গাদোয়াল লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। গাদোয়াল থেকে কুর্নুল মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে হলেও সেখানে স্ত্রীকে নিয়ে যেতে পারেননি মহেন্দ্র। কারণ, কুর্নুলে অন্ধ্রপ্রদেশের সবথেকে বেশি কোভিড আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাওয়ায় সেই জেলাকে কনটেইনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সেখানে কাউকে ঢুকতে বা বেরতে দেওয়া হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে মেহবুবনগরের একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান মহেন্দ্র। কিন্তু সেখান থেকেও তাঁদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং তাঁকে হায়দরাবাদ যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলে হায়দরাবাদের কোটিতে একটা সরকারি হাসপাতালে স্ত্রীকে নিয়ে যান মহেন্দ্র। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কোভিড পরীক্ষা করতে বলা হয়। কারণ, তাঁরা গাদোয়াল থেকে এসেছেন, যাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা যায়, পরের দিন তাঁদের কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তখন পেটলা বুর্জের একটা সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় তরুণীকে। সেখানে ২৬ এপ্রিল ছেলের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু সদ্যোজাতর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থাকায় তাকে নিলোফার হসপিটাল ফর চিল্ড্রেনে পাঠানো হয়। সেখানেই পরের দিন মারা যায় সদ্যজাত।
এদিকে মহেন্দ্রর স্ত্রীর অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাঁকে ওসমানিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সোমবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। স্বামী মহেন্দ্রর অভিযোগ, করোনা সন্দেহে তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে এত দৌড়ঝাঁপ না করতে হলে হয়তো তাঁর স্ত্রী সন্তান দুজনেই বেঁচে থাকত। এই খবর পাওয়ার পরে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের তরফে তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরকে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই করোনার জেরে আর কতজন এইভাবে চিকিৎসার জন্য হয়রানি হয়ে ঘুরে বেড়াবেন ?