কৃতি প্রবীণ শিল্পী এখনো কোন সম্মান পান নি , অভিমান কে আড়াল করে নিজ গুনে মহাগুরু : শিল্পী কালী চরণ পাল, কুমারটুলি
আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে দিয়ে পুরাতনের মধ্যে নতুনের খোঁজ। মন খারাপ আর করেনা ,সব কিছু সয়ে গেছে কালের গতিতে। তাই নিজের কাজ নিয়ম করে কাজ করে চলেছেন স্বীকৃতির আশা ছেড়ে । যা পেলেন তাতেই খুশি, সরকারের সম্মান না পেলে আক্ষেপ কিছু নেই !
পুজো আসছে সাজসাজ রব ,কুমোরটুলির অলিতে গলিতে সারা বছর এমনিতেই ভিড় থাকে ,আর পুজোর সময় তিল ধরণের জায়গা থাকে না , তবে এবার এখনও সেভাবে জমে উঠেনি কুমার টুলির বাজার ।পুজোর বাজারে স্পন্সর নেই এবার ।ক্লাবের ভাঁড়ারে টান পড়েছে প্রায় সকলেরই । তাই পা মেপে চলছে ক্লাব কর্মকর্তারা ,দরদাম করেই হচ্ছে বায়না। একটু পিছিয়ে এবার কুমোরটুলির দূর্গা বাজারে।
দাম বেড়েছে মাটি থেকে রং তুলির সহ অন্যান্য জিনিস। এঁদো ঘড়ে বেঁচে থাকতেই খুশি এই প্রবীণ শিল্পী , আশা করেন ভালো কিছু আগামী প্রজন্মের জন্য হোক । এখনো খোলার বাড়িতে দিন কাটে এই ৮২ ছুঁই ছুঁই কুমোরটুলির শিল্পী ।এখন যে কজন প্রবীণ শিল্পী কাজের মধ্যে আছেন তার মধ্যে অন্যতম শিল্পী কালীচরণ পাল। হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পীর নাম প্রচারের আলোতে থাকায় প্রকৃত গুণীরা প্রচারের আলোর বাইরেই থেকে গেলেন।
রাজ্য সরকার কে কোন দোষ দিলেন না , বললেন আমি কিছুই আশা করিনা। শুধু দুবেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারলেই হয়। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই , একচিলতে ঘরে কাটিয়ে দিলেন ৮১ বছর। প্রতি বছর ব্যাঙ্কের লোন নেন কয়েক মাসের জন্য , ফিরিয়ে দিতে হয় সবটাই সুদসহ ওই বছরের মধ্যে। দারিদের চাপ স্পষ্ট তবু মাথা নোয়াতে রাজি নন , করবেন না কোন তদবির। খোশামোদের বাইরে চলা স্রোতের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে এই অনন্য লড়াই।
থিমের পুজোর রমরমা , আর্টকলেজের প্রশিক্ষিত শিল্পীরা এখন অনেক বেশি আর্থিক সচলতার মধ্যে কাজ করেন সেই ক্ষেত্রেও এই প্রবীণ শিল্পী বললেন ” ওরাই তো বাঁচিয়ে রাখবে এই শিল্প , কাজের নতুন ধারা সৃষ্টি করছে এটাই ওদের কাজ। আর আমরা পুরানো ধারায় কাজ করি , ওদের সাথে বিরোধ না থাকলেও কোথাও একটা সম্পর্ক আছেই। আমরাও চেষ্টা করি ওদের কাজ থেকে শিখতে। “
বিদেশে অনেক ঠাকুরই এই প্রবীণ শিল্পী হাত থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর। দেশ জুড়ে তার ডাক পরে কাজের ক্ষেত্রে , আজ নিয়ম করে কাজ করে চলেছেন। তবে আগামী প্রিপ্রজন্ম আস্তে চায় না। কারণ কুমোরটুলির কোন সার্বিক উন্নতি হয় নি। বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে একই তীরে আছে। জলের কষ্ট , অসুস্থ কর অবস্থা। ড্রেনের সমস্যা , ডেঙ্গু থেকে অন্যান্য আসুক নিত্য সঙ্গী। তাতেও কোন আক্ষেপ নেই। বললেন ভালো আছি।
তরুণ শিল্পীদের কাজের ভূয়সী প্রসংশা করলেন , থিমের পুজো কোন ভুল নয়। এটাই ঠিক যুগের গতিতে ভাবনার পরিবর্তন আসবেই আর সকলকেই মানতে হবে এটা। রাজ্য সরকারের অনেক প্রকল্প থাকলেও এদের জন্য বিশেষ কিছু নেই , আর কেন্দ্র সরকারের সুযোগ সুবিধে থাকলেও কুমোরটুলির কেওই পাইনি সেই সুযোগ। তাতেই হতাশ নন।কালীচরণ বাবু জানালেন সরকার মেলা করেন আমাদের ডাকে , সব সময় যেতে পারি না।আরো বললেন রেডরোডের শো হয় সেটা ভালো লাগে , আমরা উৎসাহিত বোধকরি।
চাওয়া পাওয়ার মাঝে বারেবার উঠে এলো দেশের কথা , আগামী দিনে দেশ কে এগিয়ে দেবে এই শিল্প। উঠে আসবে অনেক নতুন শিল্পী, যাদের জানবে সারা বিশ্ব। আর ওদের মধ্যেই বেঁচে থাকতে চান। এই বিরল ভাবনাই কষ্টদায়ক কিন্তু আশাবাদী জীবৎকালে যদি কোন স্বীকৃতি পান শিল্পী কালীচরণ পালেদের মত প্রবীণ কৃতী মানুষ , তবেই প্রকৃত গুরুকে সন্মান দেওয়া হবে। তবে এই বিষয়ে রাষ্ট্র বড় উদাসীন , খোঁজের বড় অভাব , ইচ্ছে নেই দপ্তরের আধিকারিকদের। গতানুগতিকতার মধ্যে দিয়ে চলার ফলে নিখোঁজ হচ্ছেন এই কৃতি মানুষজন ।