ক্ষোভের আগুন বইতে পারলে বামেরাই প্রাসঙ্গিক : বাংলা থেকে সারা দেশ !

সময় এসে গেছে , শেষের ডাকও দিয়ে ফেলেছেন জনতা। আবেগ সর্বস্ব সংকটময় অবস্থানের সুযোগ হারালে অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে।

নগর কীর্তন : বামপন্থীরা ভারতীয় রাজনীতিতে যুক্তির আশ্রয় নিয়েই তাদের পথ চলা ,তবে ভারতের রাজনীতিতে অনেকাংশেই আবেকের অবস্থানে সাময়িক রাজনীতি তৈরি হয়েছে, এটা কেওই অস্বীকার করবে না কেও ।বর্তমান অবস্থায় যুক্তিবাদী ভাবনা ও আবেগের আগুন দুটোকে কাজে লাগাতে পারলেই বদল হবে সাধারণ জনতা থেকে সংবাদ মাধ্যমের অবস্থান। ২০১১ পর থেকে এই বাংলায় ক্রমশই গুটিয়ে গেছে বামেরা , দু পা পিছিয়েই এগোনোর কথা ভেবেছে বামেরা , কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয় নি। মানুষের সমস্যার কথা বরাবর বললেও বাস্তবে কাঁধের পশে কাঁধ নিয়ে সেভাবে দাঁড়াতে পারে নি বামেরা।নিয়মের গতে ৩৪ বছরে কিছু আন্দোলন ছাড়া সবটাই নিয়ম ভিত্তিক পার্টির অনুস্বাসন মেনে চলে যাওয়া সময় বামেরা আন্দোলন থেকে দূরে সরেছে আর মানুষ সরেছে বামেদের থেকে। বলা যায় ৩৪ বছরের ম্যানেজারি বড় ভারী হয়ে গেছে বর্তমানের ৯ বছরের বিরোধী অবস্থানে। তাই ভোটের বাজারেও ভালো ফলাফলতো দূরের কথা সন্মান জনক অবস্থান হারিয়েছে।

রাজনৈতিক লাইন , অবস্থান গত জায়গা , কৌশল গত অবস্থানের অনেক পরিবর্তন হয়েছে বামেদের মধ্যে সামাজিক চাহিদা অনুযায়। ২০১১ এর পরিবর্তনের পর থেকে তৃণমূল সরকারের বহু কাজ ও অকাজই বামেদের পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবার মত সুযোগ থাকলেও সেই সুযোগ কে কাজে লাগাতে ব্যর্থ। প্রবীণ নবীন নেতৃত্ব বদল ও পদের অবস্থানগত পরিবর্তনের মধ্যেই নিজেদের সীমা ঘিরে দিয়েছে। তার ফলে না বামেদের পাশে মানুষ থাকলো ভোটের বাজারে , না মানুষের পাশে বামেরা থাকলো সমস্যার দিনে। ফলে দলীয় বৃবিতেই থেকে থাকলো সব কিছু। অনেককে বলতে শোনা যায় যে ৩৪ বছর সরকার চালাবার পর নাকি মানুষ সাদ বদল করতে চেয়েছে। আবার অনেকে বলে মানুষ তার অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আবার বামেদের কাছে ফিরে আসবে। তখনি বামেরা ফিরবে নাকি। এই সবের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে তৃণমূলের রাজত্বে কেলেঙ্কারির পর কেলেঙ্কারি। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া তত্ত্বে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের বেড়েছে কয়েকশো গুন্ সম্পত্তি। আর রাজ্যে বেড়েছে কর্মহীন অবস্থান যা আজ একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

তবে বলা যায় বামেদের সমন্ধে অনেক বিরূপ মন্তব্য মানুষের মনে থাকলেও আজকের যুক্তির বাজারে বামেদের প্রাসঙ্গিকতা বাড়ে বাড়ে মানুষের ভাবনায় আবার বামেরাই যুক্তিযুক্ত বলে বিবেচিত হচ্ছে।NRC এর গুঞ্জন আর তারই সাথে CAB এর আইন পাস্ হয়ে যাবার সাথে সাথে সাধারণ মানুষের কাউকে এই বিষয় টি স্পর্শ করেনি এমন কেও নেই।আর এই নিয়ে চিন্তার আগুন ধরে নি এমন পরিবার নেই এই ভারতে।এই অবস্থার মোকাবিলা বামেরাই করতে পারেন কেনো না , এক সময় দেশ বিভাজনের সময় বামেদের ভূমিকা চোখে পড়ার মত ছিল। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সালে দলে দলে মানুষ পূর্ব বঙ্গ থেকে পশ্চিম বাংলার আসাকে কেন্দ্র করে যে ভূমিকা পালন করার মধ্যে দিয়ে যে অভিজ্ঞতা এখনও বর্তমান তা এখন কাজে লাগাতে পারেন। সেই সময় ভিটে মাটি ছেড়ে আসা মানুষের পুনর্বাসন , জঙ্গল সরিয়ে বাসস্থান করে দেবার মধ্যে দিয়েই বামেদের ভীত তৈরির কাজ করেছিলেন। আবার তেমনই ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ একটা বড় অন্যের মানুষ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত তাদের কেও কিন্তু আশ্রয়ের ছায়ায় বেঁধে ফেলেছিল এই বামেরাই। সরকারের আসার পর অনেকেই কিন্তু যথাযত যোগ্যতার ভিত্তিতে মন্ত্রী থেকে প্রশাসকের পদে আসীন ছিলেন অনেকেই। তার ফলে UCRC নিয়ে যারা কাজ করেছেন তারাই এই সময়ের মূল কারিগর হতে পারেন।

মানুষের মন বোঝার ক্ষেত্রে মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত অনেকাংশেই সফল বলা যায়। যেমন বামেরা ৭০ রের দশকে মানুষের মনের কথা পড়তে সক্ষম হয়েছিলেন সম্পূর্ণ ভাবে। তাই মানুষের মনের সাথে বাম সরকারের প্রথম ২০ বছরে সেভাবে দূরত্ব তৈরি হয়নি বললেই চলে। তার ফল স্বরূপ ৩৪ বছরের সরকার কেও হেলাতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তী ১৪ বছরে মানুষের সাথে দূরত্ব বেড়েছিল অনেকটাই , সেটা স্বীকার করেন তাবড় বাম নেতারা। আসল কথা বামেরা প্রতি দিনের সমস্যায় যতক্ষণ না দাঁড়াবে ততক্ষন এই দূরত্বের কমবে না। মানুষ ২০০৭ থেকে ২০১১ এর অনেক ঘটনার সাথে বামেদের যুক্তি মেলাতে পারেনি , তার মূল কারণ মিডিয়া ও বিপক্ষে থাকা তৃণমূল নেত্রীর উদ্যোগ। কিন্তু যারা বামেদের বিপক্ষে সার্বিক ভাবে সমর্থন করেছেন তারা আজ অনেকেই আফসোসের সাথে মতামত প্রকাশ করেন , সিদ্ধান্তের ভুলে বাংলা আজ বিপন্ন।

রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকারের বিকল্প ভাবনায় যদি মানুষের ভাবনার সাথে মেলে তাহলে কিন্তু ভোটের বাক্স অন্য কথা কলবে , যা এখনো অধরা রয়েছে। সাধারণ মানুষের মনভাব অনুযায়ী দলের কর্মসূচি নিলে সাধারণমানুষের গ্রহণ যোগ্যতায় চলে আসতে পারে নিমিষের মধ্যে।অঞ্চল ভিত্তিক সমস্যা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন অঞ্চলের বাম সংঘঠকরা , তার ফলে বিপদে অগত্যায় তৃণমূলের সরণা পর্ণ হয়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে পরিবর্তিত অবস্থায় বিকল্প বাম এই ভাবনা যতক্ষণ ভাবে না আসছে ততক্ষন মানুষের সিদ্ধান্ত বামেদের পক্ষে যাবে না।

বর্তমানে মূলত বাম নেতারা দলীয় মিছিল মিটিং আর নির্দিষ্ট কয়েকজন টিভিতে বসা ছাড়া সেভাবে দেখা যায় না। তবে ২০১৯ এর নির্বাচনের পর থেকে ঘুরে দাঁড়াবার মরিয়া ইচ্ছা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকাশ পেয়েছে। যেমন ভোটের আগে বামেদের ব্রিগেট তার পর আবার বেশ কয়েকটি জেলার মিটিং মিছিলে চোখে পড়ার মত সমাবেশ। কিন্তু থেমে যাচ্ছে ওখানেই। মানুষ চেয়েছিল রাস্তায় বসে দিনের পর দিন আন্দোলন বিভিন্ন ইস্যুতে। ২০১১ পর থেকে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল যে বিপক্ষে বামেরা কতটা মমতা কে সরকার চালাতে দেবে সেটাই দেখার , কেননা বামেরা বিপক্ষে থাকলে আন্দোলন হবে তীব্রতর। কিন্তু সেই ভাবনা ভুল প্রমান করেছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন কারণ দীর্ঘ্য ৩৪ বছর সরকার চালিয়ে আন্দোলনের ধারাপাত ভুলে গেছে। কেও আর চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি নয় তার ফলে বহু মানুষ দলের সাথে সম্পর্কের দূরত্ব ঘটিয়েছে । অর্থাৎ এই বাংলায় মমতার বিকল্প রাজনীতি তৈরি হয় নি। নিন্দুকেরা বলেন বিপক্ষের রাজনীতি করতে গেলে অনেক ঝক্কি সামলাতে হবে ,আসল কথা মানুষের বিপদ বইতে না পারলে মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হবে না। তার ফলে ভরসা যোগ্য বিশ্বাস যোগ্য নেতা-নেত্রীর অভাব রয়েছে। তবে বামেদের এখনও যোগ্য লোক বহু আছে এটাও কেও অস্বীকার করে না।

এদিকে বর্তমানের সহযোগী দল প্রদেশ কংগ্রেস কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ‘সংবিধান বাঁচাও – ভারত বাঁচাও’।কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে , “সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করা হবে ও বি জে পি যেভাবে হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করছে তার পাল্টা শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ‘ এর আদর্শ, শ্রী চৈতন্যদেব এবং স্বামী বিবেকান্দের বাণী প্রচার করা হবে। মহাত্মা গান্ধী, পন্ডিত জওহরলাল নেহরু, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ভীম রাও আম্বেদকরের ‘ভারত-ধারণা‘ প্রচার করে অমিত শাহদের অসত্য ইতিহাস তুলে ধরার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা হবে।

আর এই জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সিপিএমকে সামিল হওয়ার জন্য কংগ্রেসের কর্মসূচিতে । আলিমুদ্দিনের নেতারা এখনও ‘নরম হিন্দুত্ব’-এর ব্যাপার-স্যাপার দেখে সন্দিহান ।সিপিআইএম বসেছিলেন ফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে। প্রাথমিক ভাবে জানা যায় ‘আইডিয়া’ নেহাত মন্দ নয়।বাম নেতারা বড় ফাঁপরে পড়েছেন একদিকে বিজেপির হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে ‘সহি হিন্দুত্ব’ তুলে ধরা হবে জনমানসে। সোনা যাচ্ছে ছুৎমার্গ ফেলে ফেলে সিপিএম নেতাদেরও দেখা যাবে কর্মসূচি। রামকৃষ্ণ দেবের ‘যত মত তত পথ’ থেকে বিবেকানন্দের ‘ভারত দর্শন’ প্রচার করবেন সিপিএম নেতারা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধীরা তো থাকবেনই।

সিপিএমও বসে থাকার পাত্র নয় , এরইসঙ্গে রাজ্যজুড়ে প্রচারের কৌশলও নিয়েছে । সমান ভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা । তৈরি হয়েছে লিফলেটে তাতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করিয়ে কী করতে চাইছে বিজেপি? বিজেপির সামাজিক মেরুকরণ করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলাই মোদী-শাহ সরকারের লক্ষ্য। ফলে এই বার্তা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে গিয়ে যাতে সমস্যা না হয়, তারজন্য রাজনৈতিক ক্লাসের আয়োজন থাকছে। প্রতি সপ্তাহেই চলছে ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ। কৌশল গত ভাবে পাশাপাশি কাজে লাগানো হবে গণসংগঠনগুলিকে। গান, নাটক, লোকগীতির মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা হবে এনআরসি ও সিএবি-র নেতিবাচক দিকগুলি।

সব মিলিয়ে বলা যায় মাটিতে দাঁড়িয়ে যে কর্মীরা কাজ করছেন , বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী যদি আইনের সাহায্য না করতে পারে বাম নেতারা তাহলে অনেকেই সাহস করবে না পথে নেমে কাজ করতে। এর কারন হল ২০১১ পর থেকে একমুখী রাজনীতি তৈরি হয়েছে এই রাজ্যে , তাতেই ঘর ছাড়ার পরিমান খুব কম নয়।স্থায়ী অস্থায়ী রোজকার হারিয়েছে অনেকেই।যদি ভিটে মাটি হারিয়েছে ১০০ আর এক লক্ষ কর্মিরা ভয়ে সন্ত্রস্থ।ফলে পার্টির হয়ে ঝান্ডা কাঁধে নিয়ে রাস্তার হাঁটার পরিমান অনেক কমেছে। কিন্তু বর্তনামে বিজেপির অবস্থান নতুন ইঙ্গিত তৈরি করেছে রাজ্যে। ফলে মানুষের ক্ষোভ কে কেন্দ্র করে দলের অনুকূলে মানুষ কে আনতে গেলে যে ধরণের সাহায্য করতে হবে তার জন্য আলিমুদ্দিন এর নতুন পরিকল্পনা না নিলে ঘোষণায় সার হবে।তবে লক্ষ্যণীয় সময়ের সাথে নেতৃত্বের শারীরিক ভাষার পরিবর্তন এসেছে অনেকটাই , আসার আলো লং মার্চ তার মূল পরীক্ষায় উত্তীণ। তবে হাল ধরে রাখার মাঝি অবশ্যই আছে বামেদের মধ্যে কিন্তু সম্মানের সাথে তাদের সামনে এড়িয়ে না দিলে অবস্থার পরিবর্তন হবেনা। তাই যোগ্য কারিগরের যোগ্য সন্মান দিয়ে সময়ের আগুন বইতে হবে।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Back to top button
%d bloggers like this: