“গঙ্গা দূষণ যে করেই হোক রুখতে হবে”, আদেশ দিলেন বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত
গঙ্গায় ভাসান দেওয়া যাবেনা রীতি বন্ধ করার জন্য চিঠি পাঠানো হলো পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১১টি রাজ্যকে।
সায়ন্তনী রায় : মাকে বিদায় জানানোর পর্ব শেষ। দশমী এসে যাওয়া মানে মাকে বিদায় জানাতে হবে। মাকে বিদায় জানাতে কেউই চাননা ।সকলের মন খারাপ এখন।মাকে বিদায় জানাই আমরা গঙ্গায় ভাসান দিয়ে।কারণ এ শহরে প্রায় পাঁচ হাজার উমাকে গঙ্গায় ভাসান দেওয়া হয়।স্বাভাবিক ভাবেই অসুর, সিংহ এবং দুর্গার সন্তান-সহ কাঠামোর সংখ্যা আরও বেশি।প্রায় ৪০ হাজারের মতো।এখন পরিবেশবিদদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হলো বিপুল সংখ্যক কাঠামোর জন্য কি বিকল্প জলাশয় করা সম্ভব নাকি ডাঙাতেই ভাসানের আয়োজন করতে হবে ?…..‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ (এনএমসিজি) সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১১টি রাজ্যকে একটি চিঠি পাঠিয়ে গঙ্গাও তার শাখা-প্রশাখায় ভাসান দেওয়ার রীতি বন্ধ করতে বলেছে। সেই সঙ্গে তাঁদের আদেশ , ওই নদীগুলির পাশে কোনও অস্থায়ী জলাশয় তৈরি করে সেখানে ভাসানের ব্যবস্থা করা হোক।অবশ্য জাতীয় পরিবেশ আদালত সূত্রের খবর, ভাসানের জন্য এনএমসিজি যে আদেশ দিয়েছে, তা তারা আগেই উল্লেখ করেছিল। জলাশয়ে একটি সিন্থেটিক লাইনার রাখা হবে, যেখানে ভাসানের বর্জ্য জমা হবে। ভাসানের পরে তা সরিয়ে ফেলা হবে।২০১৭ সালেই একটি মামলার প্রেক্ষিতে পরিবেশ আদালত নদীর ধারে ওই কৃত্রিম জলাশয় তৈরির কথা বলেছিল।যদিও দু’বছর পরেও তা মানা হয়নি।এ দিকে এ বছর থেকে যমুনায় ভাসান পুরোপুরি বন্ধ করা গিয়েছে। এ জন্য ভাসানের কৃত্রিম জায়গা তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই ভাসান দিতে হয়েছে ক্লাবগুলিকে।গঙ্গার পাড়ে সে রকম জায়গাও নেই যেখানে অস্থায়ী জলাশয় বা পুকুর তৈরি করা যায়। ফলে পরিবেশবিদদের আলোচনায় গঙ্গায় ভাসানের পরিবর্তে নানা বিকল্প ব্যবস্থার কথা উঠে আসছে।যেমন ২০১৭ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে নদী, জলাশয়ে ভাসান নিয়ে একটি মামলায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা উঠে এসেছিল। ওই বিকল্প ব্যবস্থায় বলা হয়েছিল, ভাসানের জন্য কোনও একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেতে পারে।কেন্দ্রীয় জ্বালানি গবেষণা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী তথা ওই মামলার আবেদনকারী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘গঙ্গা দূষণ যে করেই হোক রুখতে হবে”। ‘কার্নিভালের কারণে বড় পুজো উদ্যোক্তারা গঙ্গায় আসেন। দক্ষিণ কলকাতা থেকেও অনেক পুজো উদ্যোক্তা গঙ্গাতেই ভাসান দেন। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে স্থানীয় ভাবে ভাসানের দিকে জোর দিতে হবে। সেখানে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে।তা হলে উৎসবও হবে, পরিবেশও বাঁচবে।ফলে ভাসানে কি গঙ্গাই গতি, না কি পরিবেশবান্ধব বিকল্প কোনও ব্যবস্থা উঠে আসবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।