গায়ে আগুন লাগার পর দমে যায়নি, নিজেই সাহায্যের জন্য ফোন করেন পুলিশকে
উন্নাও -এর ঘটনা শিউরে দিয়েছে সকল মানুষকে। জীবন্ত অবস্থাতেই পুড়িয়ে মারার চেষ্টা !
@ দেবশ্রী : সারা শরীরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, কিন্তু তাতেও দমে যায়নি নির্যাতিতা। জলন্ত অবস্থাতেই এক কিলোমিটারেরও বেশি পথ চিৎকার করতে করতে ছোটেন নির্যাতিতা। তারপরে ওই অবস্থাতেই একজনের মোবাইল চেয়ে, সাহায্যের জন্য পুলিশের কাছে ফোন করেন। তারপরেই ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
উন্নাওয়ের ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার ঘটনায় এমনই ভয়ঙ্কর এক তথ্য সামনে উঠে আসে। রবীন্দ্র প্রকাশ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশকে। তাঁর কাছেই প্রথম সাহায্য চান উন্নাওয়ের নির্যাতিতা। বৃহস্পতিবার সিন্দপুরের এই ভয়াবহ ঘটনায় শিউরে উঠেছেন প্রত্যেকটা মানুষ। একজন ধর্ষিতার উপরে এমন পৈশাচিক আক্রমণ ! সিন্দপুরের গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গায়ে আগুন নিয়েই সাহায্যের জন্য ছুটছিলেন তরুণী। বেশ খানিকটা পরে রবীন্দ্র প্রকাশকে দেখতে পান তিনি।
রবীন্দ্র প্রকাশ পুলিশকে তাঁর বক্তব্যে জানান, ‘মেয়েটি দৌড়ে আসছিল, ‘বাঁচাও বাঁচাও’ করে চিৎকার করছিল। ও এমনভাবে জ্বলছিল, আমি নিজেই প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। আমি সামনে পড়ে থাকা একটা লাঠি কুড়িয়ে নিই আত্মরক্ষা করার জন্য। আমিও চিৎকার করছিলাম ভয়ে। ওই অবস্থাতেই মেয়েটি নিজের পরিচয় দেয়। কিন্তু তবু আমি কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম। ও আমার ফোনটা চায়। দিয়ে দিই। তখন ১১২ ডায়াল করে পুলিশে খবর দেয় ও নিজেই।’ নারকীয় এই ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন পুলিশ। নির্যাতিতার বয়ান সংগ্রহ করার পরেই অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৩০৭, ৩২৬, ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্তরা এই মুহূর্তে রয়েছে পুলিশ হেফাজতে।
বৃহস্পতিবার সকালে ধর্ষণের মামলায় শুনানির জন্য তরুণী যখন আদালতে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর রাস্তা আটকে দাঁড়ায় শিবম সহ অভিযুক্ত পাঁচজন। তরুণী সেই সময় ছিলেন রেলগেটের কাছে। তাঁকে টেনে হিঁচড়ে পাশের ধান ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। সেখানেই তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তরুণীর আর্তনাদে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। খবর যায় পুলিশে। তরুণীকে যখন ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাঁর শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।অসুস্থ অবস্থাতেই তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।
সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, পাঁচ অভিযুক্তের নাম বলেছেন নির্যাতিতা। পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টায় অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ধর্ষণে অভিযুক্ত। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরেই তারা তরুণীর খোঁজে গ্রামের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। বৃহস্পতিবার আদালতে যাওয়ার সময় নির্যাতিতার পিছু নেয় তারা। রেলগেটের কাছে নির্জন জায়গা দেখে সেখানেই তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে।
এদিকে তরুণীর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে ক্রমশ ফলে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় নির্যাতিতা তরুণীকে বিমানে করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লখনউয়ের হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তরুণীকে গ্রিন করিডর করে নিয়ে আসা হয় বিমানবন্দরে। ১৩ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম হয় মাত্র ১৮ মিনিটে। এখন কামনা করা হচ্ছে ওই নির্যাতিতা যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। আর অভিযুক্তেরা কড়া থেকে কড়া শাস্তি পায়।