চিটফাণ্ডে প্রতারিত, অত্যাচারিত মানুষগুলিকে অবিলম্বে দিতে হবে ক্ষতিপূরণ, নইলে জনগণ কিন্তু নামবে রাস্তায় !
সরব হয়েছেন সুজন ও মান্নান, ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে মমতাকে কড়া চিঠি
দেবশ্রী কয়াল : চিট ফান্ডের ঘটনা এখনও কেউ ভোলেনি, যাঁর জেরে বহু মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। তাই এই চিটফান্ড (Chit Fund)কাণ্ডে প্রতারিত লক্ষ লক্ষ মানুষের টাকা ফেরত এবং প্রতারক ও সুবিধাভোগীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে আবারও একসাথে সরব হয়েছে বাম পরিষদীয় দল ও কংগ্রেস পরিষদীয় দল। এই নিয়ে ফেসবুক লাইভে সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakrabarty)ও আব্দুল মান্নান (Abdul Mannan)নিজেদের মন্তব্য ও দাবি তো রেখেইছেন। এর পাশাপাশিই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)লিখেছেন চিঠি। তাঁরা চিঠিতে জানিয়েছেন, আজ মুখ্যমন্ত্রীর নিজের উদাসীন ও সরকারের নেতিবাচক মনোভাব এর জেরেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা আরও বেশি করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সারদা, রোজভ্যালি, এমপিএস এমন অনেক চিটফান্ড ঘটে গেছে বিগত সাত বছরে। সেই সময় মানুষের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল তা এখনও অনেকের মনে গেঁথে রয়েছে। কিন্তু সরকারের বিশেষ গঠিত তদন্তকারী টিম এর রিপোর্ট গত ৭ বছরে এখনও আসেনি, সমগ্র কার্যের তদন্ত প্রক্রিয়া এগোয়নি পর্যন্ত। আজও অনেক রিপোর্ট বিধানসভায় অপ্রকাশিত।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে চিঠিতে এই দুই দল চিঠিতে মমতা ব্যানার্জিকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ” আপনি নিশ্চয় অবগত যে চিটফাণ্ডে প্রতারিত মানুষের আন্দোলন এবং তাঁদের আইনি লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court) একটি নির্দিষ্ট রায় ঘোষণা করেছে। এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার এবং তা বিক্রয় অথবা নিলামের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ প্রতারিত মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata Highcourt)কমিটি গঠন করেছে এবং তাতে সম্পূর্ণ সাহায্য করার জন্যে সকলকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার যে এই বিষয়ে যথাযথ সাহায্য করছে না তেমনি অভিযোগ কিন্তু উঠে আসছে। আর কেবল রাজ্য না, কেন্দ্রের তরফে ও অসহযোগিতার খবর উঠে আসছে। উভয় সরকারের দিক থেকেই অনাগ্রহের শিকার হচ্ছেন চিটফাণ্ডে প্রতারিত হয় মানুষগুলি, কিন্তু তা অবিলম্বে নিরসন করা প্রয়োজন।
আজ সুজন চক্রবর্তী বলেন, চিটফান্ড কাণ্ডে তৃণমূল দলের আশ্রিত রাজনৈতিক দালাল, গুন্ডা এবং বলা যেতে পারে পুলিশের একাংশের চেইপ কিন্তু কমবেশি প্রায় ৩০০ মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন। আর আজ এতগুলি বছর পরেও কিন্তু তাঁর মাশুল গুনতে হচ্ছে অনেক মানুষকেই। কিন্তু এই সকল আত্মহত্যাকে রাজ্যের পুলিশ, পারিবারিক বিবাদ বলে রেকর্ড করেছেন যাতে রাজ্য সরকার এই ক্ষতি গ্রস্থদের দায় এড়িয়ে যেতে পারে। তাই অবিলম্বে রাজ্য সরকার এমন নির্দেশ দিক যাতে সব জেলার ডিএম ও এসপি কে এই সকল ক্ষেত্রে পুনরায় নথি পরিবর্তন করে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিক ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একজন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিক।
চিটফান্ডের সময় জেলায় জেলায় সালিশি সভা করে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে এবং এই ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা অতি নিন্দা জনক। একদিকে তাঁরা চিটফাণ্ডে সর্বস্ব খুয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন তাঁর উপর তাঁদের উপর হয় অত্যাচার। তাই এই ক্ষেত্রে যদি কারোর অভিযোগ থাকে তিনি কোর্টে আবেদন করুন অভিযোগ জানান। কোনো রাজনৈতিক নেতা বা গ্রামের কোনো মাতব্বরের অধিকার বা ক্ষমতা নেই যে আইন নিজের হাতে তুলে নেব, সেই ক্ষমতা একমাত্র আছে বিচার ব্যবস্থার। কিন্তু বছরের পর বছর এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা, যারা এই সালিশি সভা বা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য আবেদন জানাবো।
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে যৌথ কমিটি করুন তাতে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় হবে, এর ফলে বিচার প্রক্রিয়া থেকে টাকা ফেরতের বিষয় ত্বরান্বিত হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ আমানতকারীরা প্রকৃত রূপে উপকৃত হবেন। কারন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের থেকে তাঁদের অনাধিকার দীর্ঘ দিন ধরে কেড়ে রাখা যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিশ্রুত ৫০০ কোটি টাকা ফেরত দেবার জন্য যে কর ধার্য্য করেছিলেন তার বিনিময়ে কত টাকা এখনও পর্যন্ত রাজকোষে জমা হয়েছে, সেই বিষয়ে রাজ্যের মানুষ কে জানান ও শ্যামল সেন কমিশনের অব্যবরিত টাকা মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিন যাতে এই অর্থ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ আমানতকারীরা প্রকৃত উপকৃত হবেন।
নিয়ম অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে জনগণ থেকে কর সংগ্রহ করে অন্য কোন বিষয়ে খরচ করতে গেলে তার জন্য বিধান সভায় তা পাস করাতে হবে। কিন্তু ২০১৪ থেকে আজ পর্যন্ত রাজ্য জানালোই না যে কত টাকা এই কর বাবদ এখনও পর্যন্ত জমা পড়েছে রাজকোষে। এবং আশ্চর্য জনক ভাবে এই বিষয় বছর শেষের অডিট রিপোর্টেও কোনো রকম উল্লেখ নেই। এই বিষয়ে এডিটর জেনারেল কোনো তদন্ত করছেন না। জনগণ তাঁর কষ্টার্জিত অর্থ কোথায় গেল তা জানতে চাইছে। তাই সাহস থাকলে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন ৩০ দিনের মধ্যে নাহলে মানুষ রাস্তায় নামবে। কারন সময় এসে গেছে, এবারে আর মুখ বন্ধ করে থাকা যাবে না।