চার হিংস্র জীব মিলে বাঁচতে দিল না, প্রিয়াঙ্কাকে !
কোনো মেয়েকেই সুরক্ষা দিতে পারছে না প্রশাসন। তাও ধর্ষকের উপর আঙ্গুল না তুলে, প্রশ্ন উঠছে ধর্ষিতার উপর....
@ দেবশ্রী : হায়দরাবাদ কাণ্ডে উঠে এল নুতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা প্রত্যেকটা মানুষের গায়ের কাঁটা শিউরে দিচ্ছে। কিভাবে কেউ এতটা হিংস্র হতে পারে, তা ভাবা যায় না। প্রথমে ৪ জন মিলে পরিকল্পনা করে, তারপর তার উপর করে, নরকীয় শারীরিক অত্যাচার। আর তার পরে দেওহাটাকে পুড়িয়ে ফেলে। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ছক কোষ হয়েছিল বেশ কয়েকঘন্টা আগেই। পরিকল্পনা অনুসারেই, পশু-চিকিৎসক তরুণীর স্কুটারের চাকা ফাঁসানো হয়েছিল, সারিয়ে দেওয়ার নাম করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই স্কুটার। তারপর ৪ মিলে করে গণধর্ষণ সেই তরুণীকে। শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি তাঁর, তাকে খুন করে, পেট্রোল-ডিজেল ঢেলে তার দেহকে পুড়িয়ে ফেলে।
তেলঙ্গানায় গত বুধবারের এই ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। গত কাল ২৬ বছরের তরুণী প্রিয়াঙ্কার আধপোড়া দেহাংশ উদ্ধার করা হয়। আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে সাইবারাবাদ পুলিশ। মহম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু (২০) নামে এই চার জনই ট্রাকের কর্মী। হায়দরাবাদের কাছে শামশাবাদ টোল প্লাজ়ায় গত বুধবার রাতে যাদের দেখে বোনকে ফোন করে তরুণী বলেছিলেন, ‘‘প্রচুর অচেনা লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। আমার সঙ্গে কথা বলতে থাক।’’ ফোনের মধ্যে তাঁর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল বোনকে। তরুণীর বোন তাকে বলে ক্যাব করে বাড়ি ফায়ার চলে আসতে কিন্তু তার কিছুক্ষন পর থেকে তরুণীকে আর ফোনে পাওয়া যায় না। তার ফোন সুইচ অফ হয়ে যায়।
আর সেই ফোন নিয়েই প্রশ্ন তুলে বিতর্ক তৈরি করেছেন তেলঙ্গানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ মাহমুদ আলি। তিনি বলেছেন, ‘‘ওই মহিলা শিক্ষিতা হয়েও পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন না-করে বোনকে ফোন করলেন কেন? তাতে হয়তো বেঁচে যেতেন।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে অনেক সমালোচনা। যেখানে সরকার মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, ধর্ষকদের শাস্তি দিতে পারে না, সেই জায়গাতে দাঁড়িয়ে এমন কথা বলেন কিভাবে ? আর এই সময় এই কথা কী শোভা পায় ? তেলঙ্গানার ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র এ দিন সব রাজ্যকে ‘অ্যাডভাইসরি’ পাঠিয়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনায় আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে বলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি জানান, তেলঙ্গানার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা।
কল্লুরু গ্রামের একটি পশু-হাসপাতালে কাজ করতেন তরুণী। তদন্তে পুলিশ জানতে পারেন, ঘটনার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে প্রথমে গোচিবাওলিতে এক চর্মচিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের স্কুটারটি শামশাবাদ টোল প্লাজার কাছে রেখে ট্যাক্সি নিয়ে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে তিনি দেখা করতে যান। ফিরে এসে দেখেন, স্কুটারের পিছনের চাকাটি পাংচার হয়ে গিয়েছে।
হায়দরাবাদ শহর থেকে শামশাবাদ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। তরুণী ওই টোল প্লাজা থেকে রাত সওয়া ৯টা নাগাদ বোনকে ফোন করে বলেন, দুই ট্রাকচালক তাঁকে সাহায্য করবে বলছে। তাঁর আপত্তি সত্ত্বেও টায়ার সারিয়ে দেবে বলে স্কুটার নিয়ে চলে গিয়েছে এক জন। বোন তাঁকে পরামর্শ দেন, স্কুটারটি রেখে ট্যাক্সি ধরে চলে আসতে। সে-ই শেষ কথা। পৌনে ১০টায় বোন আবার ফোন করে দেখেন, মোবাইল বন্ধ। পরের দিন সকালে শামশাবাদের আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসের নীচে পাওয়া যায় ওই চিকিৎসকের পোড়া দেহাংশ।
পুলিশ জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ টোল প্লাজ়ায় তরুণী চিকিৎসককে স্কুটার রাখতে দেখেই তাঁকে ধর্ষণের ছক কষেছিল চার অভিযুক্ত। সেখানে বসে মদ খাচ্ছিল তারা। তরুণী ট্যাক্সিতে চলে যেতেই স্কুটারের চাকা ফাঁসিয়ে দেয় নবীন অভিযুক্ত। তরুণী ফিরে আসার পরে আরিফ বলে, চাকা তারা সারিয়ে দেবে। স্কুটার নিয়ে শিবা চলে যায়। তখন আরিফ, নবীন এবং চিন্তকুন্ত টোল প্লাজ়ার কাছেই একটি ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তরুণীকে। চাকা সারিয়ে ফিরে এসে ধর্ষণ করে শিবাও। তরুণীর মুখ চেপে ধরে আরিফ। তরুণী নিথর না-হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মুখ থেকে হাত সরায়নি সে। এর পরে স্কুটারটি নিয়ে কয়েক বোতল পেট্রল কেনে দু’জন। অন্য দু’জন আরিফের লরিতে দেহ নিয়ে যায় আন্ডারপাসে। কিছুটা ডিজেল বার করা হয় তরুণীর স্কুটার থেকেও। এর পরে আন্ডারপাসের এক কোণে দেহ নামিয়ে তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পালায় তারা। পরের দিন ভোরে এক দুধ-বিক্রেতা সেখানে দেহটি জ্বলতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ কমিশনার ভি সজ্জনার বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ কাজে এসেছে।’’ আজ একই এলাকায় পাওয়া গিয়েছে আরও এক মহিলার মৃতদেহ। এর সঙ্গে চিকিৎসক খুনের যোগ আছে কি না, স্পষ্ট নয়।
কোন দিকে এগোচ্ছে সমাজ ? কোনো মেয়েই এখানে সুরক্ষিত না। বয়স দেখে না ওই হিংস্র জন্তু গুলো। গত দুই সপ্তাহের হিসাবে দেখা গেলে, বহু মেয়ে শিকার হয়েছে এই নরকীয় অত্যাচারের। এর মধ্যে অনেক কেস তো সামনেই আসে না। এছাড়া দুই সপ্তাহ তো অনেক দূরের কথা। যেদিন পশু চিকিৎসক তরুণীর উপর হয় অত্যাচার, সেদিন দেশের আরও অন্য প্রান্তে ৪ জনের সাথে এই প্রকার অত্যাচার হয়। একদিনে দেশের ৫টি মেয়ের উপর হয় গণধর্ষণ, তাও সরকার গ্রেফতার করা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। দিতে পারছে না কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আর এই নরকের কীটরাও সাহস পাচ্ছে, তাদের এই সাহস পাওয়ার কারন হয়ত এখনও নির্ভয়াকান্ডের অভিযুক্তেরা বেঁচে আছে।
সারা দেশ করছে প্রতিবাদ, তারা চায় এমন শাস্তি দিতে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার আগে ১০০ বার ভাবে পরিণতির কথা, কিন্তু প্রশাসন রয়েছে চুপ।