দূর্গা পুজোর মাহাত্য অষ্টমী পুজো ঘিরে !
অষ্টমীর অঞ্জলি ,কুমারী পূজা ও সন্ধি পুজোর মধ্যে দিয়ে নবমীতে প্রবেশ
অষ্টমী পূজা হলো দূর্গা পূজার একটি গুরুত্ব পূর্ণ অংশ। এই অষ্টমীর দিনে অনেক মানুষ পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে দেবী দূর্গা কে নিজের মনের ইচ্ছা জানাই। এই দিন চামুন্ডা রূপে দেবী দূর্গা কে পুজো করা হয়। এই দিন বিভিন্ন মন্দিরে চালকুমড়ো,চিনি প্রভৃতি বলি দেবার রীতি প্রচলিত আছে। এই দিন অষ্টমীর সন্ধি পুজোর সময় ৬৪ টি ডাকিনী যোগিনীর পুজো করা হয়। এই দিন বেশিরভাগ মন্দিরে দেবী দূর্গা কে লুচি সুজির ভোগ দেওয়া হয়। এই মহা অষ্টমী হল দূর্গা পূজার মধ্যে একটি অন্যতম সেরা দিন।
কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেযে়র পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে এবং কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে।
কুমারী পূজাঃ সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমী তিথিতে ষোলো বছরের কম রয়স্কা কোন কুমারী বালিকাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করার রীতি আছে। বৃহদ্ধর্মপুরাণে আছে দেবী অম্বিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হয়ে বেলগাছে দেবীর বোধন করতে নির্দেশ দেন।
তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবীকে কুমারী নামে অভিহিত করা হয়েছে।দক্ষিণ ভারতে কন্যকুমারীর মন্দিরে কুমারী প্রতিমার পূজা দেবীর নামের ঐতিহ্য বহন করছে, যেহেতু কুমারী পূজা তান্ত্রিক মতবাদের প্রতিফলন তাই ভারতের সব শক্তিপীঠেই কুমারী পূজা হয়।
১৯০১ খৃষ্টাব্দের ১৮ই অক্টোবর স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার প্রবর্তন করেন।রঘুনন্দন প্রণীত তত্ত্ব অনুসারেই পূজা নিষ্পন্ন হয়। সারদা দেবীর নামে সংকল্প হয়। পশুবলির ব্যবস্থা করা হলেও তা হয়নি।
কুমারী পূজায় বিভিন্ন বয়সের কন্যাকে বিভিন্ন নামে পূজা করা হয়। এক বছরের কন্যা সন্ধ্যা, দুইবছরে সরস্বতী,তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে কালিকা, পাঁচ বছরে সুভগা, ছ’বছরে উমা, সাত বছরে মালিনী, আট বছরে কুঞ্জিকা, ন’বছরে কালসন্দর্ভা, দশ বছরে অপরাজিতা, এগারো বছরে রুদ্রাণী, বারো বছরে ভৈরবী, তেরো বছরে মহালক্ষ্মী, চোদ্দ বছরে পঠিনায়িকা, পনেরো বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোলো বছরে অম্বিকা নামে অভিহিতা হয়।তন্ত্রে উক্ত আছে, কন্যা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত তারা এইসব নামে পূজিত হবে। আরও বলা হয়েছে যে একটি কুমারী কন্যাকে খাওয়ালে বিশ্বভুবনকে খাওয়ানো হয়।
দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অধ্যায় হল সন্ধিপূজা । দূর্গাপূজার অষ্টমীর দিন হয় এই বিশেষ পূজা , এই পূজার সময়কাল ৪৮ মিনিট। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা। যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগ স্থলে এই পূজা হয় তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা অর্থ্যাৎ সন্ধি-কালিন পূজা। এই পূজা দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অঙ্গ, এইসময় দেবী দূর্গাকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়ে থাকে। এই পূজা সম্পন্ন হয় তান্ত্রিক মতে। এই পূজায় দেবীকে ষোলটি উপাচার নিবেদন করা হয়, হয় পশুবলি সেই বলিকৃত পশুর স্মাংস-রুধি (মাংস ও রক্ত) এবং কারণ (মদ) প্রদান করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে।