নারী পুরুষ যদি সমাজে সমান স্থান পায়, তবে আলাদা করে নারী দিবসের মাহাত্ম কেন ?

তিয়াসা মিত্র : প্রশ্নটির উত্তর জানতে গেলে একটু ফিরে যেতে হবে অতীতে , হয়তো অনেকে জানেন আবার হয়তো অনেকে জানেনা, এই দিবসটি উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে।
এতো গেলো দিনটির আসল কারণ। তবে আমি নিজে একজন নারী হয়ে বুঝে উঠতে পারিনা নারীবাদী ভাবনার মূল বিষয়। হয়ত বা আমার ভাবনা ভুল কিন্তু যুক্তির আদলে দেখলে বোঝা যায়, নারীবাদী ভাবনাকে আমরাই সমাজে ভুল ভাবে অনেক ক্ষত্রে প্রচলন করে আসছি। নারী যদি নিজের সাবলম্বী হয় তবে তার জন্য দেশে বাড়তি আইনের প্রয়েজন কি ? মনে রাখতে হবে , সব পুরুষ যেমন সমান নয় তেমনি সব নারীও সমান নয়। পুরুষ তাকে নির্যাতন করেছে এই দোহাই দিয়ে অনেক নারী যেমন সমাজের সহাভূতি জোগাড় করেছে তেমনি অন্য দিক থেকে অনেক মহিলা রয়েছে যারা সত্যি পুরুষ হাতে নির্জাতিত তারা কিন্তু আর এইসবের শেষে সঠিক বিচারটি পায়না। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মহুলারা করেন এরকম কাজ খুঁজে পাওয়া দায়ে। এটি সত্যি গর্বের একটি বিষয়ে।
“নারী” কথাটি আজো আমাদের সমাজে অতীব রহস্ময়। কেন ? কারণ তার মানসিকতা, তার দেহ, দেহের প্রতিটি খাজকে আমাদের এই সমাজ প্রথাগত ভাবে রহস্যময় করে রেখেছে। নারীর ঋতুস্রাব, বক্ষযুগল , তাদের অন্তর্বাস , তাদের শারীরিক সমস্যা- এই সব আজো পুরাতন পন্থী। তবে নিজে একজন নারী হয়ে লজ্জা লাগে একটি বিষয়- সোশ্যাল মিডিয়াতে শরীর উন্মোচন করে কিছু মেয়ে তাদের নারীত্ব দেখাতে ব্যাস্ত থাকে। এবং এই ধরণের কাজের ফলে সমাজের অন্নান্ন নারীরা যে কত ভাবে লাঞ্চিত হচ্ছে তা বলা দায়ে। নারীবাদী বিষয়টি আজ এই নতুন প্রজন্মে একটি ফ্যাশন- এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বহুকাংশের কাছেই নারীবাদ বিষয়টি পরিষ্কার নয়, যার ফলে সেই বিষয়টির ভুল প্রযোগ ঘটে চলেছে প্রতি ক্ষেত্রে। নিজেকে লুকিয়ে রাখাও যেমন কোনো কাজেরটা কথা নয় তেমনি নিজেকে পুরোপুরিও উন্মোচন করা কোনো স্মার্টনেসের বেপার নয়। এবার হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে ” পতিতাদের” অধিকারে নারীবাদী অধিকার কাজ করে না ? অবস্যই করে। তাদের জীবনের ওপর আমি একবার কলেজ জীবনে একটি সমীক্ষা করতে গেছিলাম। তাদের যে সত্যি সাহায্যের প্রয়েজন এবং নারীবাদ বিষয়টি যে তাদের জন্য প্রযোজ্য তা সেদিন আরো বেশি করে বুঝেছিলাম। তাদের পেশাতে তাদের কি না কি সহ্য করতে হয় না হয় আর বললাম না। তবে সেখানে আলাপ হয়েছিল একজনের সাথে নামটা বলছি না আর- মহিলার একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি কলেজ শেষ করে এখনো উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজ্যের বাইরে চলে গেছে। এই যে একটি ভ্রান্ত ধারণা, ” বেশ্যার মেয়ে বেশ্যা হবে ” তা যে কত পরিমানে ভুল তা সেদিন বুঝেছিলাম। আবার একই ভাবে তথাকথিত ” ভালো বংশের” মেয়ে যে বংশের মান রাখবে তাও কিন্তু নয়।
সব শেষে যেটি বলার, নারী পুরুষ সব শেষে সন্মান করাটা নিজের কাছে পরিষ্কার থাকার মতন, তবে দুই ক্ষেত্রেই কোনো ওসমান জনিত কাজ বা যৌনঅত্যাচার এর বিরোধিতা করতে হবে এবং এটি আজীবন করে যেতে হবে কারণ সমাজ যতদিন চলবে এই বিষয়ে গুলিও থেকে যাবে। আর একটি বিষয়ে- মহিলারা মা হতে পারে তাই তারা সব করতে পারে এই ধারণা ভ্রান্ত কারণ,জীবনের নাট্য মঞ্চে ” মা” বিষয়টি একদমই আলাদা এবং শারীরকির দিক থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে মহিলাদের নিজের শরীরে সন্তান ধরণের ক্ষমতা আছে পুরুষদের নেই কিন্তু পুরুষ দেহের অংশ থেকেই যে সন্তান ধারণ করতে পারে নারীরা তা মাঝে মাঝে আমরা ভুলে যাই। তাই পুরুষ যেমন নারীর সাথে ওতপ্রয়ত ভাবে জড়িত তেমনি নারীও পুরুষের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই নারী পুরুষ সমান হোক, দলিত বিষয়টি সমাজ থেকে দূরে যাক।