পুজোর আর বাকি ৫২ দিন , তৈরী ওরা। বাঁধছে নতুন তাল দিন গুনছে বেরিয়ে পড়ার সময়
পরিবারের মানুষরা গোনেন বিসর্জনের দিন ,বোধন দিয়ে শুরু করে যারা পুজোর চারটা দিন মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক বাজিয়ে সবার মন ভরিয়ে দেন।ফেকাসে মুখে হাসি ফুটবে লক্ষি পুজোর সকালে।

শিউলির গন্ধ বাতাসে কাশফুলের দোলা সঙ্গে ঢাকে পড়ে কাঠি। একটু কান পাতলে চারিদিকেই শোনা যায় ঢাকের শব্দ।রোজ নিয়ম করে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত চলে ঢাকের বোলের অনুশীলন।
মহালয়ার দিন কাক ভোর কিংবা তার আগের দিন বেরিয়ে কলকাতার টিকিট কাটা। পোটলা পুলটি গুছিয়ে নিয়ে হাসি মুখে দরজা ভেজিয়ে চলে যাওয়া শহরের দিকে।ঢাকিপাড়ার পুরুষদের শহরে যেতে মন চায় না বাড়ির দুর্গাদের কাঁদিয়ে। কিন্তু কাঁচা পয়সা বড় যে দরকার। ফসলের দাম পাই নি এবার তাই আর উপায় নেই। শহরের পুজো মণ্ডপগুলিতে পরিবারের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতেই ছুটে যেতে হয় ।শুধু অপেক্ষা বাড়ির গৃহবধূ থেকে কচিকাঁচাদের চারটি দিন ধরে। বিসর্জনের বাজনা বাজলেই শুরু হবে তাদের পুজো। ফেরার সময় পাঁচ বাড়ি ঘুরে ঢাকিরা বাবুদের দেওয়া মুড়ি-মুড়কি নিয়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। তার পরেই চলে নতুন পোশাক কেনা। ঠাকুর ডুবিয়ে আসা ভাঙা প্যান্ডেলেই চলে তাদের ঠাকুর দেখা।বোধন দিয়ে শুরু করে যাঁরা পুজোর চারটা দিন মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক বাজিয়ে সবার মন ভরিয়ে দেন, তাঁদের পরিবারের মানুষ দিন গোনে বিসর্জনের।
বিশ্বকর্মা পুজো হল ঢাকিপাড়ার বোধন। তাই দুর্গাপুজোর আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন ঢাকিরা। ঢাকিপাড়াতে গেলেই দেখা যাবে দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পরে বাড়ির উঠোনে চলছে রেওয়াজ।নন্দী গ্রামের গোপাল ঘোড়ই বলেন, মহালয়ার দিনই কলকাতা চলে যেতে হয় তাঁদের। কারণ, বেশ কিছু বাড়ির পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকেই। কান্দির সহদেব দাস, সুন্দরার রঞ্জিত জানারা বেরিয়ে পড়বেন কলকাতা-মুম্বই-দিল্লির পথে।আর মহালয়ার দিন থেকেই নিঝুম হয়ে যাবে ঢাকিদের গ্রামগুলি। বলা বাহুল্য জেগে থাকবেন লীলাবতী-পারুল-পার্বতীরা।ওদের কথা নুন খাই পান্তা খাই সেই মানুষ তা তো সঙ্গে আছে , তবে কি জানেন আমাদের কাঁচা পয়সার খুব অভাব। দেখুক এবার ক টাকা আনে।
আর মহামায়ার মর্ত্যে আসার সময় হলেই ঢাকি পাড়ায় শুরু হয়ে যায় ঢাক ‘ছাওয়া’র ব্যস্ততা। মণ্ডপে যাওয়ার আগে পুরোদমে চলছে ‘বোল’ ঝালিয়ে নেওয়ার কাজ। তাই তমলুকের রামতারকহাট, কাখরদা কিংবা মহিষালের পাহালানপুর, সুন্দরা, নবগ্রাম অথবা কাঁথির সাতমাইলের ঢাকি পরিবারগুলিতে সারা বছরের জং ধরা ঢাকে এখন বেজে উঠেছে সুর।আরতি আর বিসর্জনের ছন্দে তালিমের তাল-মাত্রা, বোধন থেকে বিসর্জন জোরকদমে চলছে ।