Culture

পুজোর রুটম্যাপ : সেরা পুজো দেখার তালিকা এক নজরে ! ”3”

নাগতলা , বালিগঞ্জ , গড়িয়া , টালি গঞ্জ , বসাদ্রোণী, সন্তোষপুর ,যাদবপুর, গড়ফা , তিলজলা , কসবা ও পাটুলি

সায়ন্তনী রায় // রায়ডাঙ্গা নব উদয় সংঘ: ৩৫তম বর্ষে শিল্পী সুব্রত ব্যানার্জির পরিকল্পনায় “ঠিকানা “।কিছু ছোট ছোট আশা আর অনেকটা ভালোবাসা নিয়েই গড়ে ওঠে মানুষের “ঠিকানা”, মানুষের অস্তিত্ব। কিন্তু বাস্তবে টানাপোড়েনে অসাধারনতত্ত্বের দ্বন্দে,গোটা দুনিয়ার ঐ ঠিকানার অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে। নানা দ্বন্দ্বের মাঝে পিষ্ট সাধারণ মানুষের মুক্তি চেতনাই আমাদের মূল ভাবনা। সম্পর্কের টানাপোড়েনে , অসহায়তা ও দ্বন্দ্বের বিমুর্ত রূপ প্রকাশ পেয়েছে শিল্পীর ভাবনায়

রায়পুর ক্লাব : ৭০ তম বর্ষে শিল্পী রায়পুর বসুর পরিকল্পনায় “খুঁটি পুজো ” একদিন নয় প্রতিদিন। ‘খুঁটি ‘ বা স্তম্ভ নির্মাণের মেরুদন্ড। যার কাঁধে ভর করে যুগ যুগ ধ’রে দাঁড়িয়ে থাকে স্থাপত্য। মানব সভ্যতার ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরানো।সময় গড়িয়েছে তার নিজের নিময়েই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে যাপনের সংজ্ঞা। প্রযুক্তির নিরন্তন উন্নতির প্রলেপ লেগেছে সভ্যতার পিলসুজের গায়ে।শুধুমাত্র দুর্গা পুজোর ম্যারাপ বাঁধার শুরুতে নয় , বছরভর খুঁটি পুজো এখন দিনযাপনের অঙ্গ। শুধু হো থাকেনা সবার কখন উৎসব আসে আর উৎসব যায়। মানুষের শিক্ষা , সংস্কৃত , সম্প্রীতির ভিত শক্ত হলেই তার ধর্মচারণ যথার্থ উৎসবের সার্থকতা পায়। ধর্মের দেবালয় ওঠে মানুষের দেবালয়।

সেবক সংঘ দুর্গা পুজো কমিটি : ৭০তম বর্ষে শিল্পী স্বপন সিলের পরিকল্পনায় “তুমি আছো তাই -আমরাও আছি “। যেদিন থেকে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে সেই দিন থেকে মানুষ স্থায়ী বসবাস পূর্ণ জীবন – যাপন শুরু করেছে। ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয়েছে মানব সভ্যতা তারপর থেকে মানুষ বুঝতে শিখেছে বেঁচে থাকার জন্য গাছের ভূমিকা। আজ আধুনিক যুগে আমরা উপলব্ধি করতে শিখেছি যে গাছ শুধু মাত্র খাদ্য নয় ,শ্বাস – প্রশ্বাস থেকে শুরু করে এই পৃথিবীর জলবায়ুর ভারসাম্য এই গাছের দ্বারাই রক্ষা হয়। তাই গাছকে দেবতা রূপে কল্পনা করা হয়। আমাদের বিশ্বাস আমাদের আরাধ্য দেবী মা এই গাছ রূপ ধারণ করে এই পৃথিবীতে আমাদের জীবন পথ সুগম করেছে। গাছ না থাকলে মানুষের কোনো অস্তিত্ব থাকবেনা। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য গাছের বেঁচে থাকার খুব প্রয়োজন।

পল্লী মঙ্গল সমিতি তালতলা গ্রাউন্ড : ১৯৬০ বর্ষে শিল্পী সৌরভ নাগের পরিকল্পনায় “উদ্দেশ্য দায়বদ্ধতার “। ‘এ -ভীষণ ব্যস্ততা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী’ ,তথাপি ঢাকের বাদ্যি কানে এলে যেন ছুটে চলে যায় এল ভেজা রাস্তার মাঝে। দায়বদ্ধতা হয়তো একেই বলে। উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন মেটানো সে যাই হয়ে যাক না কেন আমাদের পুজোর চারটে দিন এই মেলাবাসী লোকগুলি আনন্দের সঙ্গী। এই পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার উর্দ্ধে মানবিকতার সাথে তাদের এই সাদা কালো জৌলুস হীন জীবনের লড়ায়ে পাশে থেকে তাদের শারদীয়ায় অভিনন্দন ও প্রেরণা জানানোর এক নিরলশ প্রচেষ্টা।

সন্তোষপুর সাগ্নিক : ৩৪ তম বর্ষে শিল্পী পার্থ দাসের পরিকল্পনায় “ধোবিঘাট”। “ধোবিঘাট” শব্দটি শুনলেই যেটি মাথায় আসে সেটি হলো ‘ধোপা’।তারা প্রতিনিয়ত আমাদের পোষাক – পরিচ্ছদ এবং সাংসারিক বস্ত্রাদি জীবন দিয়ে পরিষ্কার করে চলেছে। এর প্রধান কারণই হলো বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা। কিন্তু আজকের দিনে বেশিরভাগ বাড়িতেই ‘পরিষ্কারের যন্ত্র’।সমাজ থেকে ‘ধোপা’ শ্রেণীটি অবলুপ্ত হয়ে যাবে এই কারণেই। বেশি দিন আর বাকি নেই সম্পূর্ণ ভাবে অবলুপ্ত হতে। কেবলমাত্র রয়ে যাবে অভিধানে।

পাটুলী সার্বজনীন দুর্গোৎসব : ৪৪তম বর্ষে শিল্পী অভিজিৎ ও অরিন্দমের পরিকল্পনায় “দুগ্গা থেকে দুর্গা”।শক্তিরূপিণী মা দুর্গার পুজোর কত আয়োজন , কত ধুমধাম অথচ কন্যাসন্তান আজও অবহেলিত। কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হলে শাখটা আজও নীরব থাকে। মেয়েরাই তো শক্তি , এবং আগামীর ধারক। সঠিক সুযোগ পেলে তারাই হয়ে উঠতে পারে সমাজের স্তম্ভ। তারাই হতে পারে এযুগের অসুর-বিনাশিনী। ঘরে ঘরে দু – হাতের দুগ্গাই হয়ে উঠুক দশপ্রহরধারিনী ,শক্তিরূপী ,জগজ্জননী দুর্গা।

মুকুন্দপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি : ১৯৭৫ বর্ষে শিল্পী ভ্রমর মিত্রের পরিকল্পনায় “প্রণামী তোমায়”।আজ সারা দেশ জুড়ে যে অহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণ তৈরী হয়েছে সেখান থেকে মুক্তির উপায় একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দেখানো মতো ও পথ-শিক্ষা মানবতা, সহিষ্ণুতা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শিক্ষার যে অমদ্য প্রয়াস,মাতৃ ভক্তি , জাতীয়তাবোধ,দেশপ্রেম , সমাজ সংস্কার আজকের প্রজন্ম প্রায় ভুলতে বসেছে। তাই সময় এসেছে, যে আলোকবর্তিকার সন্ধান তিনি দিয়েছিলেন তাকে আজীবন প্রজ্জলিত রাখার।এ দায়িত্ব আমাদের সকলের, তবেই বাংলা ভাষা বাঁচবে , বাঙালি বাঁচবে ,বাংলা বাঁচবে।

মহাতীর্থম দুর্গোৎসব : ১৫ তম বর্ষে শিল্পী তানিয়া ভট্টাচার্যের পরিকল্পনায় “স্বপ্নের দেশ”।বাস্তব জীবনের দুঃশ্চিন্তা, দূষিত পরিবেশ মনুষ্যকুলকে অর্থাৎ সমস্ত জীবকুলকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে।স্বপ্নের দেশ হলো সেই দেশ যে দেশে এসে মানুষ একটি রঙিন জগৎ কে খুঁজে পাবে। যেখানে বাস্তবের কোনো দূষণ নেই চিন্তা নেই। আছে শুধুই আনন্দ। সেই আনন্দোৎসবে সামিল হয়ে মানুষ যাহাতে সেই আনন্দ দ্বিগুনভাবে উপলব্ধি করতে পারে সেই প্রচেষ্টায় মহাতীর্থম দুর্গোৎসব ব্রতী হয়েছে।

ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব : ১০০ তম বর্ষে শিল্পী কমলেশ সেনের পরিকল্পনায় “প্রকৃত ও মানব সভ্যতা”।বাজেট ১৮.৩ লক্ষ টাকা। হৃদয় ও প্রকৃতির সমন্বয়ে সৃষ্টি আমাদের এই বসুন্ধরা। ‘প্রকতি’ সর্বদা নারী রূপে ভূষিত হন।অপরদিকে ‘পুরুষ’ হল অবিনশ্বর আত্মা। পুরুষ ও প্রকৃতি এই দুই-এর মিলন স্থল হল আমাদের পৃথিবী। প্রকৃতি বাঁচলে পৃথিবীটা আরও সুন্দর হবে। যে দেবী সকল পুরুষ দেবতার সমন্বয়ে সৃষ্টি এবং ওপর দিকে নিজগুনে মহিমান্বিত মা দুর্গার দশ রূপের এক রূপ দেবী ধূমাবতীর আবির্ভাব।

বাঘাযতীন বি ও সি ব্লক দুর্গোৎসব কমিটি : ৭০ তম বর্ষে শিল্পী দেবজ্যোতি জানার পরিকল্পনায় “আরণ্যা”। বাজেট ২৫ লক্ষ টাকা। কংক্রিট সভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। শুকিয়ে যাচ্ছে জ্বল,বাতাসে মিশছে বিষ। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে এক ঘোর অসময়ের দিকে। দেবী এসেছেন সবুজের উৎসবে অরণ্যের প্রতিমূর্তি রূপে।তিনি আগামী দিনের জন্য নিয়ে আসছেন সবুজ বার্তা। অতিআধুনিকতা আর প্রযুক্তির চরম উত্থানে এক গভীর অস্তিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে আছে সকল মানুষজন।

বাঘাযতীন বিবেকানন্দ মিলন সংঘ : ৭০ তম বর্ষে শিল্পী গিরিশ ঘোষের পরিকল্পনায় “এসো বাংলার কথা কই”।বাজেট ৬ লক্ষ টাকা। মা দুর্গা নিজেই এক থিম ও ভাবনা। মূল উদ্দেশ্য – আগামী প্রজন্মের কাছে বাংলা ঐতিহ্যকে তুলে ধরার পাশাপাশি মাটিকে ঘিরে লোক আঙ্গিকগুলির এক আধ্যাত্মিক চেতনার ভাবধারাকে উপস্তিত করে তোলা এবং বর্তমান সময়ে লোকশিল্পগুলির আদিরূপ খুঁজতে গিয়ে আজও বহু বৃদ্ধ , দরিদ্র শিল্পীদের ভেঙে পড়া মানসিকতাকে পুনরায় উজ্জীবিত করে তোলা এবং সামান্য হলেও অর্ধনৈতিক স্বচ্ছলতায় এগিয়ে নিয়ে চলা। ভারতীয় ঐতিহ্যে বাংলার লোকসংস্কৃতি এক বৃহৎ অংশ জুড়ে আজও বর্তমান।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Back to top button
%d bloggers like this: