পুজোর রুটম্যাপ : সেরা পুজো দেখার তালিকা এক নজরে !
নজর কাড়বে এবার : নাগতলা , বালিগঞ্জ , গড়িয়া , টালিগঞ্জ ,বাঁশদ্রোণী, সন্তোষপুর ,যাদবপুর, গড়ফা , তিলজলা , কসবা ও পাটুলি
বোসপুকুর তালবাগান সার্বজনীন : শিল্পী পূর্ণেন্দু দের ভাবনায় ২৮ তম বর্ষের নিবেদন আলো ছায়ার খেলায় মেতে উঠবে এবারের পূজা প্রাঙ্গন। মূলত বন ছায়ার আকর্ষণকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছে এবারের কাজ। “ছায়া ঘনাইছে বনে বনে // গগনে গগনে ডাকে দেয়া ” আজও যেন জনমানুসে বড় প্রাসঙ্গিক। ইটকাঠ পাথরের জঙ্গলে মধ্যে প্রকৃতির একঝলক পাওয়া তাই আজকের দিনে বড় বিস্ময় । সুস্থতার অনুভূতি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে , সেখানে পাওয়া যাবে আলোছায়াতে জোনাকির খেলা , জ্যোৎস্নার মায়াবী রহস্য সহ শীতের স্নিগ্ধতা সঙ্গে পেতে পারেন কুয়াশার আঁকিবুকি। আপনি কিছুক্ষনের জন্যে হলেও নস্টালজিক হয়ে উঠতে পারেন , আর যারা এখনকার তাদের সাথে পরিচয় ঘটাবে ” যা কিছু হারিয়ে গেল” । সব মিলিয়ে একেবারে অন্য পথে এবার হাটতে চলেছে বোসপুকুর তালবাগান সার্বজনীন।
সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক সার্বজনীন দুর্গোৎসব পূজা কমিটি : শিল্পী অসীম পালের ভাবনায় এবারের উপস্থাপনায় ” বিস্মৃতি ” . আপনি ফিরে পেতে পারেন ফেলে আশা দিনগুলো , মনে পরে আপনার শৈশব যা আজ প্রায় ফিকে হয়ে এসেছে , বড় ঘড়ির ঢং ঢং আওয়াজ , উনানের ধোঁয়া , গ্রামাফোন ,রুটির মত রেকর্ড প্লেয়ার , প্রথম দিকের রেডিও সব মিলিয়ে বেশ নজর করা বিষয় নিয়ে কাজ উপস্থাপনা।বেশ কিছু দেখা আর বেশ কিছুটা স্মৃতির রোমন্থন করা। সব মিলিয়ে এবার নজরে থাকবে সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের পুজো।
নাকতলা উদয়ন সংঘ : শিল্পী ভবতোষ সুতারের ভাবনায় এবারের নিবেদন ” জন্ম ” // নাচে জন্ম , নাচে মৃত্যু // শহরের নজরকাড়া উপস্থাপনা শেষের দশ বছরে দূর্গা পুজোর উৎকর্ষতা বাড়িয়েছে নাকতলা উদয়ন। শিল্পী ভবতোষের ভাবনায় একদম আলাদা ঘরানায় তৈরি হচ্ছে এবারের উপস্থাপনা “জন্ম ”
জন্ম আর মৃত্যুর মধ্যে- আগে -পরের অবস্থান কে নিয়ে কাজ। খুবই কঠিন প্রয়াস , পৃথিবীতে প্রাণের হিল্লোল , আর জন্ম- মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা জীবন সংগ্রামের সময় সভ্যতাকে সামনে রেখে এক অনুভূতি পূর্ণ অবস্থান কে উপস্থাপনা সহজ ব্যাপার নয়।ভাবনা ও বাস্তবের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করবে এক অনন্য নিবেদন , আশায় আছেন ক্লাবের উদ্যোক্তারা।
বোস পুকুর শীতলা মন্দির : শিল্পী দেবাশীষ গুছাইত সুনিপুন হাতে রূপ পেতে চলেছে এবারের উপস্থাপনা ” খুঁজে দেখো আপন আলো ” . বোসপুকুর শীতল মন্দির বরাবরই নামি পুজোর তালিকার ওপরের দিকে থাকা পুজো ক্লাব। ভারের পান্ডের নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে যা দূর্গা পুজোর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।এবার ভাবনা বেশ অভিনবত্বের দারো করে। জীবনের আলো সৃষ্টি করে চেতনা , আর চেতনা তৈরী করে বিকাশের পথ আর এই সব কিছুই শিক্ষা থেকে সৃষ্টি। শিশু মনের বিকাশের মূল সোপান হল শিক্ষা। অজানার সাগরের বৈতরণী পার করতে পারে একমাত্র শিক্ষা , আর জীবনের ওঠা পড়ার সিদ্ধান্ত যদি ভুল হয় তাহলে জীবন আপনাকে ক্ষমা করবে না। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত যদি ঠিক হয় তাহলে আপনার আগামী সুখময় হবে।ভাবনার জোর অনেকটাই তবে উপস্থাপনার সাথে সঙ্গতি রেখে কাজ হলে , নজর কাড়বে বোস পুকুর শীতল মন্দির পূজা কমিটি।
নেতাজি জাতীয় সেবাদল : ৬৯ তম বর্ষে দেবাশীষ বারুই এর ভাবনায় ” শ্রমের জয় ” অণু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত, বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্রম। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এই পৃথিবীর সব কাজ- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা- যা কিছু দৃশ্যমান সবই অর্জিত হয়েছে শ্রমের দ্বারা। পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, “লাইসা লিল ইন্সানে ইল্লা মা সাত্তা।” অর্থাৎ, মানুষের জন্যে শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই নেই। জ্ঞানীর জ্ঞান, বিজ্ঞানের অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার, ধর্মসাধকের আত্মোপলব্ধি, ধনীর ধনৈশ্বর্য, যোদ্ধার যুদ্ধে জয়লাভ সবকিছুই শ্রমলব্ধ।
মানুষ কোনো কাজ সম্পন্ন করতে যে শারীরিক বা মানসিক শক্তি দিয়ে থাকে তাকে শ্রম বলে। শ্রম সাধারণত দু’ধরণের । যথা: মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। পৃথিবীতে জীবন-যাপন করতে হলে সব মানুষকেই কম-বেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম করতে হয়। প্রত্যেক মানুষই তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বলা যায় ভাবনায় সান দিতে হলে আপনাদের আসতেই হবে এই পূজা মণ্ডপে। তবে বলা বাহুল্য যে , ভাবনার বিন্যাস খুবই কঠিন , কারণ তার অবয়ব কি ভাবে রচনা করবে সেটাই দেখার আগ্রহ তৈরি করবে।
এভিনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল সমিতি : সুশান্ত পাল এর ভাবনা ও রূপায়ণে ” প্রতিচ্ছবি ” হাজারো মনের ভিড়ের মাঝে আমি খুঁজে চলেছি তাঁরে যারে পাই না // নিজেকে খুঁজি, তাঁহারে খুঁজি কাউকেই নাহি খুঁজে পাই // এ বাড়ি, সে বাড়ি, এ দেশ, ও দেশ কোথাও কেহ নাই // সব ঘর শুন্য, সব কম দামে কেনা পণ্য // আর এই ভাবনায় ঈশ্বরের আরাধনার বিস্তারের ভিতরে নিরন্তর অনন্ত রূপ ও মহিমা যখন সর্বত্রই। তখন ঘরের কোনে নিভৃতে ঠাকুরের আসনে বসে নিষ্ঠার প্রকাশে দীর্ঘ পথের ক্লান্তি এসে মেসে তখনি ঈশ্বরের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর এই নিয়ে এবারের ভাবনা প্রতিচ্ছবি। পুরো পাড়া সেজে উঠেছে সন্তোষ পুর সাউথ পল্লিমঙ্গল সমিতিতে। ভাবনার তারিফ করতেই হবে কেননা বক্তব্যের সাথে বাস্তব উপস্থাপনা খুবই কঠিন। অপেক্ষার আর ১৫ দিন (চলবে ).