Weather

প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ

লাগাতার বৃষ্টিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সিকিম-ডুয়ার্সে। নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে পাহাড়ে আরও ৪ দিন প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা, জারি চূড়ান্ত সতর্কতা।

লাগাতার বৃষ্টিতে কার্যত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গ তথা ডুয়ার্সের একাধিক জায়গা। ইতিমধ্যে তিস্তা বাঁধ থেকে জল ছাড়াও শুরু করেছে সেচ দফতর। কয়েক দিন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির কারণে ফুঁসছে পাহাড়ের নদীগুলি। বৃষ্টির জেরে ধস এবং গাছ ভেঙে উত্তরের জেলাগুলিতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আপাতত বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই মিলছে না। দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং জেলায় আরও কয়েক দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ে ধসের কারণে বিপর্যস্ত শিলিগুড়ি-গ্যাংটক যোগাযোগ। ভুটান এবং ডুয়ার্সে টানা বৃষ্টিতে ফুলে ওঠা নদিগুলির জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায়, বন্ধ ডুয়ার্সের ট্রেন পরিষেবাও। সংলগ্ন এলাকায় জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা।

পঞ্জাব থেকে উত্তরপ্রদেশ-বিহার হয়ে এ রাজ্যে উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে নাগাল্যান্ড পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা অবস্থান করছে। তার জেরে আগামী রবিবার অবধি উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি চলবে। এ রাজ্য ছাড়াও সিকিম, অসম, মেঘালয়েও বৃষ্টি চলবে। অসংখ্য পর্যটক স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সঙ্গে ধস এবং বন্যার পরিস্থিতির জন্য বিপদে পড়েছেন। বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন গ্যাংটক-সহ সিকিমের বিভিন্ন জায়গায়। অনেক পর্যটক সিকিম যেতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। দার্জিলিঙেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য পরিস্থিতি ভালো নয়। এখনই বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে উঠেছে পাহাড়ের নদীগুলি। আগামী কয়েক দিন লাগাতার বৃষ্টি হলে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে পারে। সে কারণে আবহাওয়া দফতর চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে। শুধু পাহাড়ের জেলাগুলিতেই নয়, দুই দিনাজপুর এবং মালদহতেও এর প্রভাব পড়বে।

সেবক থেকে কালীঝোড়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি ধসপ্রবণ এলাকা রয়েছে। বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সকালে ফের এই সেবক এবং কালীঝোড়ার মাঝে অন্তত তিন জায়গায় ধস নামে। ফলে আটকে পড়েন সিকিমগামী এবং সিকিম থেকে শিলিগুড়ির দিকে আসা কয়েকশো গাড়ি। গত কয়েক দিন ধরে বার বার ধসে সিকিমগামী রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ধস সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করলেও, ফের অন্য জায়গা ধসে পড়েছে।

গ্যাংটক ফেরত বহু পর্যটক নির্দিষ্ট সময় তাঁদের ট্রেন বা বিমান কিন্তু ধরতে পারছেন না। আবার অনেক পর্যটক সিকিমগামী রাস্তা বন্ধ থাকায়, সিকিম যাওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করে দার্জিলিং যাওয়া মনস্থ করেছেন। বিআরও এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আশা, নতুন করে ধস না হলে বিকেল পর্যন্ত সিকিমগামী রাস্তা খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে বৃষ্টি না থামায় ফের ধস হওয়ার আশঙ্কা যে যথেষ্ট রয়েছে, তা স্বীকার করেন রাস্তা মেরামতির সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। রাস্তা বন্ধ থাকায় কালিম্পং অথবা পেশকের পথ ঘুরে দার্জিলিং হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছচ্ছে কিছু গাড়ি। পরিস্থিতি যথেষ্ট সঙ্গীন ডুয়ার্সেও। পাহাড়ে এবং ভুটানে ভারী বৃষ্টির জন্য উপচে পড়ছে ডুয়ার্সের নদীগুলির জল। জলসীমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জলের তোড়ে জায়গায় জায়গায় বাঁধ ভেঙে পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার রেলপথে সেতু জলের তোড়ে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ঘিস নদীর উপর নবনির্মিত রেলওয়ে আন্ডারপাসের স্তম্ভ ধসে রেললাইনের মাটি সরে গিয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেই রেল সেতু মেরামতির কাজ চলছে। ওই পথের সমস্ত ট্রেন জলপাইগুড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, মাল ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় তিস্তার জল ঢুকে প্লাবিত করেছে এলাকা। জলবন্দি প্রায় ৭০০ পরিবার। জেলা প্রশাসন ব্লক স্তরের আধিকারিকদের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।

উত্তরবঙ্গ প্রবল বৃষ্টিতে ভাসলেও, দক্ষিণবঙ্গে বারিধারার কোনো দেখাই নেই ! কলকাতাতে তেমন বৃষ্টি নেই। তবে আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বিহার, ঝাড়খণ্ডের উপরে আরও একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হচ্ছে, তার ফলে দক্ষিণেও কয়েক দিনে বৃষ্টি বাড়বে। কিছুটা বেশি বৃষ্টি হতে পারে দুই ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলায়। সমুদ্রে মৎসজীবীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে উত্তরের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হলেও এ রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Back to top button
%d bloggers like this: