বিপদের মধ্যে দিল্লির মানুষ, বিপদের মধ্যে দিল্লির পরিবেশ, ক্রমশ বাড়ছে দূষণের পরিমান।
মানুষের শ্বাস নেওয়াও এখন হচ্ছে বিপজনক, মাস্ক ছাড়া বের হওয়া নিষিদ্ধ বাসিন্দাদের।

@ দেবশ্রী : অস্বস্তিকর পরিবেশ। একটা দমবন্ধ পরিস্থিতি। চারিদিকে শুধুই ধোঁয়া। দ্রুত কমছে দৃশ্যমানতা। গত সাতদিনে আরও ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছেছে দিল্লির দূষণ। প্রাণ ওষ্ঠাগত বাসিন্দাদের। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ বাতাসের গুণগত মানের সূচক (একিউআই-এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) ছিল ৪০৭। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে একিউআই-ও, যা বিপজ্জনক থেকে অতি বিপজ্জনকের জায়গায় পৌঁছে গেছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সাতদিনের মধ্যে আজ রেকর্ড জায়গায় পৌঁছে গেছে রাজধানীর দূষণ পরিস্থিতি। এন-৯৫ বা পি-১০০ মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে বাসিন্দাদের। দিল্লির থেকে আরও ভয়ানক পরিস্থিতি গাজিয়াবাদের। সেখানে বাতাসের গুণগত মানের সূচক ৪৭০। গ্রেটার নয়ডায় একিউআই ৪২২, ফরিদাবাদে ৩৯৮, অশোক বিহারে ৪৪৬, আর কে পুরমে ৩৯৯, দিল্লি ইউনিভার্সিটি নর্থ ক্যাম্পাসে ৪৪৬।
এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল অথরিটি (ইপিসিএ) তরফ থেকে জানা গেছে, দিওয়ালির পর থেকেই রাজধানীতে দূষণ সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। আতশবাজির ধোঁয়া, পার্শ্ববর্তী দুই রাজ্য পঞ্জাব ও হরিয়ানায় শস্যের গোড়া পোড়ানো, গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়ায় জেরবার দিল্লি ও তার সংলগ্ন এলাকা। এয়ার কোয়ালিটি মনিটর করার সরকারি সংগঠন SAFAR জানিয়েছে, বাতাসের গুণগত মানের সূচক বা একিউআই ৩০১-৪০০-র মধ্যে থাকলে তাকে বলে ‘ভেরি পুওর’ আর ৪০০ ছাড়িয়ে গেলে সেটাই তখন হয়ে ওঠে ‘সিভিয়ার’ বা অতি বিপজ্জনক। পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর দূষণের মাত্রাটা অন্যান্য বারের তুলনায় অত্যাধিক পরিমানে বেশি।
দূষণে জেরবার দিল্লির লাগোয়া এলাকায় চাষের জমিতে খড় পোড়ানো নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিল এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল অথরিটি (ইপিসিএ)। গত মাসে সুপ্রিম কোর্টে দূষণ মামলার শুনানিতে হরিয়ানা, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি সরকারের প্রতিনিধিদের বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও দীপক গুপ্তর বেঞ্চ জানায়, কোনও রাজ্য থেকে যদি ফসলের গোড়া পোড়ানোর খবর পাওয়া যায় তাহলে সেই রাজ্যের মুখ্যসচিব থেকে যে গ্রামে তা পোড়ানো হচ্ছে তার পঞ্চায়েত প্রধান— সকলকেই জবাবদিহি করতে হবে।
বেলাগাম দূষণে জেরবার দিল্লিবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দিতে রাজধানীতে কয়েক বছর ধরেই চলছে গাড়ির জোড়-বিজোড় ফর্মুলা। দূষণ অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে গেলে এক দিন জোড় সংখ্যার গাড়ি এবং পরের দিন বিজোড় সংখ্যার গাড়ি রাস্তায় নামার অনুমতি মেলে। কিন্তু সেই ফর্মুলায় যে বিশেষ কোনও লাভ হয়নি সেটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। পঞ্জাব-হরিয়ানায় খড় পোড়ানোর একটি বড় ভূমিকা রয়েছে দিল্লির এমন দূষণময় পরিস্থিতির পিছনে। সেটা বন্ধেও এ দিন কড়া নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তা না হলে, আগামী বছর গুলিতে আরও বাড়বে দূষণের পরিমান। আরও ভয়ঙ্কর হবে পরিবেশ।