Sports Opinion

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

সুপার ওভারও টাই, বাউন্ডারির হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।

একেই হয়তো বলে বিশ্বকাপ ফাইনাল। ৪৪ বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার।প্রথমে ১০০ ওভারের খেলা, তারপর সুপার ওভারেও হলো না নিষ্পত্তি। শেষ পর্যন্ত বাউন্ডারির হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ঘরের মাঠে প্রথম বিশ্বকাপ জিতল ইংল্যান্ড। সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড করে ১৫ রান। বেন স্টোকস আর জোস বাটলার মিলে ট্রেন্ট বোল্টের ওভারে ১৫ রান তোলে। অন্যদিকে নিউ জিল্যান্ডের জিমি নিশাম ও মার্টিন গাপটিল মিলে সুপার ওভারে তোলে ১৫ রান। কিন্তু শেষ বলে গাপটিল রান আউট হয়ে যান। একটি উইকেট পড়ে নিউজিল্যান্ডের। বেশি বাউন্ডারি মারার সুবাদে ইংল্যান্ডকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে আইসিসি।

প্রথমে ব্যাট করে হেনরি নিকোলসের ৫৫ ও টম ল্যাথামের ৪৭ রানের দৌলতে ৫০ ওভারে ২৪১ তোলে নিউজিল্যান্ড। হোম টিমের হয়ে ওকস ও প্লাঙ্কেট ৩টি করে উইকেট নেন। প্রথমার্ধের খেলা দেখে মনে হয়েছিল এই টার্গেট হয়তো সহজেই তাড়া করে ফেলবে ইংল্যান্ড। কিন্তু নিখুঁত পরিকল্পনা করে নেমেছিলেন কেন উইলিয়ামসন। নতুন চ্যাম্পিয়ন যে এবার ক্রিকেট বিশ্ব পেতে চলেছে তা আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে নিউ জিল্যান্ড। ২০১৫ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে কিউইরা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স হয়েই থাকতে হয় তাদের। দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠেও সেই রানার্স তকমা ঘোচাতে পারল না ব্ল্যাক ক্যাপসরা। অন্যদিকে চতুর্থবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে শেষ পর্যন্ত রানার্স তকমা ঘুচিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিল ব্রিটিশরা।নতুন চ্যাম্পিয়ন যে এবার ক্রিকেট বিশ্ব পেতে চলেছে তা আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে নিউ জিল্যান্ড। ২০১৫ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে কিউইরা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স হয়েই থাকতে হয় তাদের। দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠেও সেই রানার্স তকমা ঘোচাতে পারল না ব্ল্যাক ক্যাপসরা। অন্যদিকে চতুর্থবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে শেষ পর্যন্ত রানার্স তকমা ঘুচিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিল ব্রিটিশরা।

প্রথম থেকেই নির্দিষ্ট লাইন লেন্থে বল শুরু করেন ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্টরা। বাউন্ডারি এলেও উইকেটের সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছিল। প্রথম ধাক্কা দেন হেনরি। জেসন রয়কে ১৭ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে পাঠান তিনি। তারপরেই ধস নামে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে। জো রুট ৭, ও মরগ্যান ৯ করে আউট হন। বেয়ারস্ট কিছুটা চেষ্টা করলেও ৩৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ৮৬ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে গিয়েছিল হোম টিম।২৪২ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম বলে জেসন রয়ের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউ-র আবেদন। আম্পায়ারস কলে বেঁচে যান। এরপর ঝড় তোলার চেষ্টা করেন রয়-বেয়ারস্টো জুটি। কিন্তু ১৭ রানে ম্যাচ হেনরির বলে আউট বলেন রয়।জো রুটকে ৭ রানে ফেরালেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম।ফার্গুসনের বলে বোল্ড হয়ে ৩৬ রানে ফিরে যান বেয়ারস্টো। ৯ রানে নিশামের বলে দুরন্ত ক্যাচ ধরে ইয়ন মর্গ্যানকে ফেরালেন লকি ফার্গুসন। এরপর জোস বাটলার এবং বেন স্টোকস জুটি ইংল্যান্ডকে টানতে থাকে। শতরানের পার্টনারশিপে জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে ব্রিটিশরা। কিন্তু ৬০ বলে ৫৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন জোস বাটলার। লড়াই চালিয়ে যান বেন স্টোকস। ৪৯ তম ওভারে জিমি নিশামের জোড়া ধাক্কা। ৫০ তম ওভারে টান টান উত্তেজনা। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। বোল্টের দ্বিতীয় বলে ছক্কা আর তার পরের বলে ২ রানের পাশাপাশি ওভার থ্রোতে আরও ৪ কান। শেষ বলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২ রান । এক রান নিলেও দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হলেন উড। ২৪১ রানে অল আউট ইংল্যান্ড। স্কোর সমান সমান। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে জিমি নিশাম ও লকি ফার্গুসন ৩টি করে উইকেট নেন।

তারপরে লড়াই করলেন বাটলার ও বেন স্টোকস। দু’জনে মিলে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দু’জনেই নিজেদের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল বাটলারকে। কিন্তু ৫৯ রানে বাটলার আউট হয়ে যাওয়ায় ফের ম্যাচ ঘুরে যায় কিউয়িদের দিকে। একদিকে স্টোকস থাকলেও অন্য দিকে উইকেট পড়ছিল।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৫ রান। প্রথম দুই বলে রান হয়নি। তৃতীয় বলে ছক্কা মারতে যান স্টোকস। বাউন্ডারির মধ্যে বোল্ট ক্যাচ ধরলেও তাঁর পা লেগে যায় বাউন্ডারিতে। ফলে ছক্কা পান স্টোকস। পরের বলে আরও চমক। দু’রান নিতে গিয়েছিলেন স্টোকস। তাঁকে রানআউট করার জন্য রকেট থ্রো করেন গাপটিল। কিন্তু সেই বল স্টোকসের ব্যাটে লেগে চার রান ওভার থ্রো হয়ে যায়। ফলে সেই বলেও ৬ রান হয়। অর্থাৎ বলা যায়, ভাগ্য হোম টিমের সঙ্গে ছিল। কিন্তু শেষ বলে দু’রান নিতে পারেননি তিনি। ফলে খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। স্টোকস ৮৪ করে নটআউট থাকেন।

লর্ডসে মেগা ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। হেনরি নিকলস ধীরে শুরু করলেও কিছুটা আক্রমনাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন আর এক ওপেনার মার্টিন গাপটিল। কিন্তু বিশ্বকাপে অফ ফর্মে থাকা গাপটিলকে ১৯ রানে ফিরিয়ে কিউই শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ক্রিস ওকস। এরপর অবশ্য নিকোলস ও উইলিয়ামসন জুটি নিউ জিল্যান্ডকে টানতে থাকে। কিন্তু ৩০ রানে উইলিয়ামসনকে ফেরান লিয়াম প্লাঙ্কেট। নিকলসকেও ৫৫ রানে ফেরান সেই প্লাঙ্কেট। ১৫ রানে আউট রস টেলর। জিমি নিশাম করেন ১৯ রান।১৬ রান করেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। শেষ দিকে টম লাথাম করেন ৪৭ রান। শেষ পর্যন্ত নিউ জিল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান তোলে। ইংল্যান্ডের হয়ে লিয়াম প্লাঙ্কেট ও ক্রিস ওকস ৩টি করে উইকেট নেন। সুপার ওভারেও নাটক। প্রথমে ব্যাট করে ১৫ তোলেন বাটলার ও স্টোকস। নিউজিল্যান্ড ব্যাট করতে নামলে দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মারেন নিশাম। ফলে খেলা ঘুরে যায় নিউজিল্যান্ডের দিকে। শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। কিন্তু সেই বলে রানআউট হয়ে যান মার্টিন গাপটিল। ফলে সুপার ওভারও টাই হয়। কিন্তু ম্যাচ চলাকালীন বেশি বাউন্ডারি মারার হিসেবে ম্যাচ জিতে যায় হোম টিম।

লর্ডসের গ্যালারিতে তিনটে রং মিশে গিয়েছিল এ দিন। ইংল্যান্ডের হাল্কা নীল, ভারতের নীল আর নিউজ়িল্যান্ডের কালো। এর মধ্যে ভারতের নীল সমর্থন করছিল ইংল্যান্ডের নীলকে। সম্ভবত নিউজ়িল্যান্ডের কাছেই হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বলে।এই জয়ের ফলে ২৭ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে বিশ্বকাপ জিতল ইংল্যান্ড। অন্যদিকে লড়াই করে হারল নিউজিল্যান্ড। পরপর দুই বিশ্বকাপে রানার্স আপ হয়েই থাকতে হলো তাঁদের। এখানেই ভাগ্যের মার। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জন্ম নেওয়া এক বাসিন্দার কাছেই বিশ্বকাপ হারতে হলো তাঁদের। সেই ক্রিকেটার আর কেউ নন, বেন স্টোকস। কিন্তু উইলিয়ামসনদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানালো ক্রিকেট দুনিয়া।

বিশ্বজয়ের নতুন সকালে ঘুম ভাঙে যেনো নতুন ইভ উৎসবে। বিশ্বকাপের দুনিয়ায় স্বাগত, বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড !

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Back to top button
%d bloggers like this: