“মানুষের হাতে পয়সা নেই পুজোর বাজারে লোক নেই”: আজকে শ্যামবাজার থেকে !
শ্যামবাজারে ভিড় নেই হতাশ দোকানদার থেকে হকার : একটি রিপোর্ট ওপিনিয়ন টাইমস এর

শ্যামবাজারে সেভাবে কেনা কাটা শুরু হয় নি এখনও , আর বাকি মাত্র ২৭ দিন। তার পরেই পুজো শুরু। ওপিনিয়ন টাইমস বাজারের হাল হকিকত জানতে বিভিন্ন বাজারে কলকাতার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। ক্ষোভ উগলিয়ে দিলেন বিক্রেতা থেকে ক্রেতা।
মন খারাপ দোকানিদের , বড় দোকান থেকে হকার সকলেই হতাশ। একদম বিক্রি হচ্ছেনা না জামা কাপড়ের দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনী জিনিস। অনেকেই বলছে গত বছর এতটা খারাপ ছিল না। যে পর্যায়ে যাচ্ছে এই অবস্থা তাতে আত্মহত্যা ছাড়া আর পথ নেই জানালেন এক দোকানদার। বলছেন সারা দিনে দোকান চালাবার পয়সা নেই ওদের।
কি করবেন, মহাজনের ধার শোধ করবেন না নিজের সংসার চালাবেন। দিনে দিনে ধার বাড়ছে , দোকানদারী ছেড়ে ছোট কাজ খোঁজার চেষ্টা করছে অনেকেই। কিন্তু তাও অধরা। উত্তর নেই নিস্পত্তি কোন পথে , তবে কেওই সাহায্য করছেন না ‘রাজ্য না কেন্দ্র ‘ . সবই মুখের প্রচার।
এই শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী সংঘঠনের নেতা সোমনাথ গাঙ্গুলি বললেন “বহু মল হয়েছে কলকাতায় তার ওপরে অনলাইন ব্যবসা ভাগ বসিয়েছে মার্কেটে। তার ফলে আমাদের অনেটাই ব্যবসার সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কোন প্রচার নেই আর সেই পয়সাও নেই। সরকার কোন সাহায্য করছেন না । না ব্যবসার লোনের ব্যবস্থা না কোন সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ সুবিধে। জানালেন ১০০০ থেকে ১২০০ হকার আছে হকার এই শ্যামবাজারে , মূলত বেশি বিক্রি হয় বছরে ছয়মাস- হ্যা তবে সারা মাস চলে যাবার মত রোজগার ছিল , চৈত্র সেল থেকে পুজো পর্যন্ত আমাদের মূলত ব্যবসা । সেই সময় আমারা ১২০০০ থেকে ১৪০০০ টাকা প্রতিদিন বিক্রি ছিল। আর আজকে একমাস বাকি দেখুন বিকেল ৫ টা বাজে এখনো বাউনি হয়নি। আগে আমার দোকানেই ৫ থেকে ৭ জন লোক কাজ করতো আর এখন আমরা দুই ভাই মিলে কাজ করি , লোক রাখলে পয়সা দেব কি করে।”
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শ্যামবাজারের হকার দের অর্থনীতির কচকচানি। প্রাথমিক ভাবে বলা যায় এই শ্যামবাজারে যে ছয়মাস ব্যবসা হয় তাতে দেখা যাচ্ছে গড়ে ছোট বড় হকার মিলিয়ে প্রায় ১২০০। আর এই হকারদের কারোর বিক্রি ১৫০০০ টাকা দিনে আরার কারোর ব্যবসার ২০০০,৪০০০ ,৬০০০,৮০০০,১০০০০,১২০০০ সব মিলিয়ে বলা যায় গড় বিক্রি যদি ৬০০০ টাকাও দিনে হয় তাহলে ৭২ লক্ষ্য থেকে ১ কোটি টাকার বিক্রি হত প্রতিদিন আর ৩০ দিনে তা দাঁড়ায় ২১ কোটি ৬০ লক্ষ্য টাকা। ফলে ৬ মাসের যদি ব্যবসা ধরি তাহলে অঙ্কটা এরকমই দাঁড়ায় ১২৯ কোটি ৬০ লক্ষ্য টাকা কম বেশি। অর্থাৎ মহাজনের লোন মিটিয়ে ১২% লাভ করে দোকানদারা তাহলে অনেক টা এরকমই দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকার কম বেশি। এর ফলে সারা বছরের ব্যবসা করে বেঁচে থাকা টা হয়ে যাচ্ছিলো। সেই সঙ্গে এই হকার বাজারে কর্মীর সংখ্যাও কম নয় , তার ফলে বাজার অর্থনীতির মোটা মোটা পুঁথির বাইরে যাদের নাম তারা কিন্তু এই আর্থিক ব্যবস্থার অনেক বড় না হলেও, ফেলে দেবার মত নয়. তৃণমূল স্তরের অর্থনীতির অক্সিজেন এরাই মূলত যোগান দেন। ফলে শুকিয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে এদের যুক্ত না করে ফ্রেসিয়াল প্রজেকশন করলেই আবারো ভরা ডুবি হবে বলাই বাহুল্য।
যারা কিনতে আসছেন তারও বললেন কি বলবো হাতে পয়সা না থাকলে কি করবো , ব্যাঙ্ক এর সুদ কমেছে , রোজগার বাড়ছে না চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে সামাল দেব কি ভাবে , আনাজ থেকে ওষুধ সব কিছুতেই দাম বেড়েছে শুধু দাম কমেছে ভোটারদের। কি করবো বলুন, জানালেন গৃহবধূ কল্পনা মাইতি। .
রাজ্য সরকার থেকে কেন্দ্র সরকার সামাজিক সুরক্ষার নামে যে টাকা প্রচার করেন তার ৬০% টাকা এই ব্যবসায় সফ্ট লোন হিসেবে যোগান দেন তাহলে অবোধ্য আর্থিক ব্যবস্থাও বদলিয়ে যাবে দ্রুততার সাথে। কারণ সহজেই বোধমেও , এই ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যবসায়ী থেকে কর্মচারী যারা আর্থিক অন্তর ভুক্তি করণের মধ্যে নেই- ফলে ট্যাক্স দেন না বহু মানুষ।এর ফলে সরকারের আয় নেই। সেইজন্য অবৈধ্য আর্থিক ব্যবস্থা বেড়েই চলেছে। সুস্থ পরিকল্পনার বাইরে থাকার ফলে এদেরও সামাজিক সুরক্ষার বাইরেই থেকে যায়। এর ফলে আস্তে আস্তে অনলাইন ব্যবসা বাজার যখন করছে , পুরো বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণটাই চলে যাচ্ছে সংঘঠিত ব্যবসায়দের কাছে, ফলে সরকার যদি সঠিক ভাবে এদের কে নিয়ে না পরিকল্পনা নেয়, তাহলে হকার দের ব্যবসা বন্ধ হয় তা সময়ের অপেক্ষা।