মুখ্যমন্ত্রীর বদল চাই, উনি পারছেন না : বিস্ফোরক মন্তব্য সুজন চক্রবর্তীর
বাংলার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, করোনা মোকাবিলায় অন্য কাউকে দায়িত্ব দিন, নিজের জায়গা থেকে সরে দাঁড়ান। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মন্তব্য সুজনের
@ দেবশ্রী : করোনার দাপটে দিন দিন কিন্তু পরিস্থিতি বেহাল হচ্ছে বাংলার। তবে প্রশাসনের কথায় বাংলা নাকি এখনও সুরক্ষিত। যেখানে ২ হাজারের উপরে গিয়ে ঠেকেছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যু সংখ্যা ও প্রায় ২০০ ছুঁই ছুঁই। এর আগেও করোনা মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে বলে রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখেছিল বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী। তবে তার সরাসরি কোনো উত্তর বা কাজ কিন্তু দেখা যায়নি। যে হারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মানুষের মনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তা যেন কিছুতেই বিচলিত করছে না রাজ্য সরকারকে। আর এই নিয়েই ক্ষুব্ধ হলেন বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী।
তিনি বললেন, এই মুহূর্তে আমরা করোনার সংক্রমণের জেরে খুবই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সকলকেই বুঝে শুনে চলতে হবে, নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে আছেন, ভয়ঙ্কর এক বিপদের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। আর এই করুন অবস্থাতে বাংলায় যেন এক তুঘলকি রাজত্ব চলছে ? যেখানে রাজ্য সরকারের কোনো দায়বদ্ধতার চিহ্ন নেই, কখনো পরিকল্পনা নেই, কোনও রকম স্বছতা পর্যন্ত নেই। মানুষ খেতে পারছেন কী না আদেও সেই বিষয়ে কোনও মাথা ব্যাথা নেই। কত মানুষ লকডাউনে ভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার কোনো তাগিদ নেই। যা হোক না কেন তাঁদের। সরকারের যেন কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো রকম একটা গাইডলাইন পর্যন্ত নেই। বাইরের রাজ্যে যে সকল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা আটকে রয়েছেন তাঁরা আদতেও কবে ফিরতে পারবেন তাঁর কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। করণে মৃত্যু সংখ্যা ও আক্রান্তের সংখ্যায় দেখা দিচ্ছে গড়মিল। অন্যান্য রোগে যারা অসুস্থ তাঁরাও ঠিক মতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না রাজ্যে। কতজন কে আদতে ধোপার ঘাটে শ্মশানে পোড়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁরও কোনো হিসেবে নেই।
এর মধ্যে আশ্চর্যের বিষয় হল, রাজ্য সরকার তাঁর এই সকল গাফিলতিকে দেখতেও পাচ্ছে এবং সেটাকে স্বীকার ও করছে। রেশনে বন্টনে দুর্নীতি দেখায় প্রথমে খাদ্য দফতরের মুখ্য সচিব মনোজ আগারওয়ালকে তাঁর পদ থেকে সরানো হল এরপর আজকে, স্বাস্থ্য দফতর থেকে স্বাস্থ্য সচিব বিবেক কুমারকে সরানো হল গাফিলতির কারণে। ফলত স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে রাজ্য সরকার করোনার মোকাবিলা করতে কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে।
সুজন চক্রবর্তীর কথায়, এই সব কিছুর দায় কী একজন সচিবের ঘাড়ে সম্পূর্ণ ফেলে দেওয়া যায় ? আজ যদি সচিবরা গাফিলতি করছেন, তাহলে মন্ত্রী কোথায় ? কী করছেন তাঁরা ? স্বাস্থ্য দফতরে দুইজন মন্ত্রী, সেখানে স্বাস্থ্য সচিব তাঁদের ছাড়া কিন্তু চলতে পারে না। তাহলে পুরো দোষ কেন সচিবের ঘাড়ে যাচ্ছে, আর তাদের বদলি করা হচ্ছে ? কিছু দিনের অন্তরেই দুটি স্বাস্থ্য সচিব পাল্টানো হল ? তাহলে আসলে গাফিলতি কার ? সচিবরা যদি আজ নিজেদের গাফিলতির কারনে পদ হারান তাহলে মন্ত্রীরাই বা কেন তার থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে ?
তাঁর বক্তব্য, এই গোটা রাজ্যের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে বলেন, এর থেকে আর খারাপ পরিস্থিতি কিন্তু আর হতে পারে না। যদি একের পর এক এইভাবে সচিবদের কে বাতিল করতে হয়, মন্ত্রীদেরকে আড়ালে রাখতে হয়, তাহলে কিছুদিনের জন্যে নিজের স্থান থেকে সরে থাকুন। দলের বরিষ্ঠ কাউকেই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিন, যিনি সামলাতে পারবেন। তাঁর পরে আপনি আবার পুনরায় ফিরে আসুন। কিন্তু করোনার এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে, যেখানে তার সাথে মোকাবিলা করতে হবে সেখানে এই তুঘলকি রাজত্ব না করে, এই বাংলার মানুষের স্বার্থে আপাতত নিজের স্থান থেকে সরে দাঁড়ান। অন্য দলের কাউকে না, আপনি নিজের দলের কাউকেই এই দায়িত্ব দিন, কারন সত্যিই এই পরিস্থিতির থেকে আর খারাপ কিছু হতে পারে না।
যখনি কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে কারোর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এগুলি মোটেও ঠিক হচ্ছে না। তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এইভাবে হয় না। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, একজন কোভিড মুক্ত ব্যক্তি হাসপাতালে গেলে তিনি কোভিড যুক্ত হয়ে ফিরছেন। এর ফলেই কিন্তু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের চরম ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে। যাঁরা করোনা আক্রান্ত নন এমন রোগী, তাঁরাও কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছেন না, তাঁদের জীবন আরও বিপন্নে। চারিদিকে কেবল শুধুই হাহাকার। এই সময় প্রশ্ন উঠবেই যদি স্বাস্থ্য সচিবের গাফিলতি উঠে আসে তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর গাফিলতির কোথাও উঠে আসা উচিত। সচিবকে পদত্যাগ করতে বলা হলে, তাহলে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যদি পুরো সচিবকে রেহাই না দেওয়া হয় তাহলে পুরমন্ত্রী কেন রেহাই পাবেন সেই প্রশ্ন কিন্তু বারবার উঠবেই। তাই একটাই কথা, এর চেয়ে পরিস্থিতি আর খারাপ হতে পারে না। নিজের স্থান থেকে সরে দাঁড়ান এবং দলের অন্য কাউকে করোনা মোকাবিলায় দায়িত্ব সামলাতে দিন, যিনি দলের বরিষ্ঠ।