রেকর্ড ভাঙা এই শীতে, গৃহহীন মানুষেরা রাত কাটাচ্ছে ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে !
নাইট শেল্ডারে নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, কষ্টের মধ্যে রাত কাটছে দিল্লির গৃহহীন মানুষদের।

@ দেবশ্রী : দিল্লিতে এই মুহূর্তে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। বাড়িতে বের হওয়ার উপায় নেই। যেন জমে যাচ্ছে প্রত্যেক মানুষ। ঠান্ডা এতো পরিমানে বাড়ছে যে প্রত্যহ, একটা করে পুরানো রেকর্ড ভাঙছে। দিনের বেলাতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে চলছে কার রাতের দিকে তাপমাত্রার মান হচ্ছে, ২ থেকে ৪ ডিগ্রির মধ্যে। তবে এই রেকর্ড ভাঙা ঠান্ডায় গৃহহীন অবস্থা তে রয়েছে অনেক মানুষ। তাঁদের কাছে এখন একমাত্র ভরসা নাইট শেল্টার।
কিন্তু সন্ধ্যার আগেই সেই শেল্টারগুলিতে কার্যত ‘হাউসফুল’ বোর্ড টাঙানোর অবস্থা।তাই অগত্যা, ফুটপাথেই বিছানা পাততে হচ্ছে সেই সব গৃহহীন মানুষদেরকে। এই হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেও, দিল্লির বুকে অনেক সম্বলহীন মানুষদের রাত কাটাতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
রাতের দিল্লির এইমস চত্বর, সফদরজং, সরাই কালেখাঁ, আনন্দ বিহার, কাশ্মীরি গেট এলাকায় ঘুরে ফুটপাথে এমনই চিত্র ধরা পড়ল রাতের সময়ে। এইমসের সামনে ফুটপাথে জুড়ে শুয়ে রয়েছেন তাঁরা। আর শরীরের উপর চাপানো রয়েছে কেবল একটা পাতলা সস্তার চাদর। তার ওপর পলিথিন। আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস ঠান্ডায় এটাই ওঁদের একমাত্র সম্বল। রাজধানীর ফুটপাথেই লেখা হয় ওঁদের রোজনামচা।
খোলা আকাশের নীচে দিব্যি ‘ভাল’ আছেন অমিত কুমার, মায়া দেবী কিংবা সুশীল যাদবরা। বছর পঁয়ষট্টির মায়া দেবী বলছিলেন, ‘অস্থায়ী নাইট শেল্টার রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে আমাদের ঠাঁই হয়নি। নাইট শেল্টারে বেড রয়েছে ৩০টি, সেখানে ৫০-এর বেশি লোক জড়ো হয়েছে।’ আক্ষেপের সুরেই মায়া দেবী বললেন, ‘ঠান্ডা আমাদের সহ্য হয়ে গেছে।’
সফদরজং হাসপাতালের অনতিদূরে থাকা অস্থায়ী নাইট শেল্টারের ভেতরে ঢুকেই জানা যায় আসল ছবিটা। একটা ছোট জায়গায় গাদাগাদি ভিড়। যাঁরা আছেন তাঁদের গায়ে একটি পাতলা কম্বল। বেড না পেয়ে মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন বেশ অনেকেই। নাইট শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া বিনোদ শর্মা বলছিলেন, ‘গত কয়েকদিনে যেভাবে ঠান্ডা পড়েছে, খোলা আকাশের নীচে থাকা কঠিন ছিল। ভাগ্যিস এখানে আশ্রয় পেয়েছি।’
কয়েক বছর আগে দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকায় গৃহ হীনদের থাকার জন্য দিল্লি আরবান শেল্টার ইমপ্রুভমেন্ট বোর্ড তৈরি করে রেন বসেরা। চলতি কথায় যাকে বলা হয় নাইট শেল্টার। সব মিলিয়ে ২২১টি এমন আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ৭৮টি স্থায়ী বিল্ডিং, ১১৫টি পোর্টা কেবিন, আর ২৮টি তাঁবু। ২২১টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৭ হাজার ৯৬০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু, বিশাল সংখ্যক গৃহ হীনদের জন্য রাত্রি যাপন কেন্দ্রের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। সরাই কালেখাঁ এলাকায় এমনই এক আশ্রয় কেন্দ্রে দেখা যায়, সেখানেও পর্যাপ্ত বেডের অভাব। মেঝেতেই কম্বল পাতা হয়েছে। কয়েকজন অভিযোগ করলেন, পর্যাপ্ত বেড নেই। মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। রুম হিটার থাকলেও কাজ করে না। অব্যবস্থার অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা।
সরাই কালেখাঁ রেন বসেরা থেকে কয়েকশো মিটার দূরে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছে ২০-২৫টি পরিবার। ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা বলছিলেন, নিজের বাড়ি নেই। শেল্টারে জায়গা নেই। খোলা আকাশের নীচেই তাঁদের ভরসা। পঞ্চশীল গার্ডেন এলকার নাইট শেল্টারের কেয়ারটেকার বললেন, ‘৪০ বেডের জায়গা থাকলেও মাত্র ২০টি বেড রয়েছে। গৃহহীনদের কম্বল-সহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মেঝেতে ম্যাট্রেস পেতে বিছানার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।’
গত কয়েকদিনে তীব্র শীতের কামড়ে কাবু হয়ে রয়েছে রাজধানী দিল্লি। শৈত্যপ্রবাহের জেরে ১২০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। সব মিলিয়ে ঠান্ডার সঙ্গে পাঞ্জা কষে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রাজধানীর সকল সম্বলহীন, গৃহহীন মানুষেরা।