Culture

সেকালের চলচিত্রের রাজনীতিতে হারিয়ে গেলেন অংশুমান রায় : আজও সেই ধারা অব্যাহত !

বঙ্গবন্ধুর স্নেহ ভাজন গায়ক অংশুমান রায় বাংলায় মান পেলেন না এই বাংলায়। “শোন একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি” : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গাওয়া আজকের দিনেও যা সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। গায়ক ভাস্কর রায়ের সাথে "পুজোর আগে পুজোর কথা "।

” পুজোর আগে অপূজোর কথা ” সন্ধে বেলার আড্ডায় বেশ আবেগ ঘন পরিস্থিতির মধ্যে বেরিয়ে এল অনেক যন্ত্রণার কথা। অংশুমান রায়ের সুযোগ্য পুত্র সুকণ্ঠের অধিকারী ভাস্কর রায়, এ প্রজন্মের প্রজন্মের শিল্পী হয়েও কিন্তু রীতি ভাঙার চেষ্টা করেন নি। ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর পারিবারিক ঘরানাকে । লাজুক স্বভাবের মিষ্টভাষী ভাস্কর বাবু ৩০ বছর সংগীতের সাথে যুক্ত হয়েও রেয়াজ ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। তিনি মনে করেন অনেক শেখার বাকি এখনও।আজকের মালিক খুশি করার দৌড়ে নেই ভাস্কর রায় , নিজের কাজ নিয়ে খুশি মনে চূড়ান্ত ব্যস্ত , তারই মাঝে ওপিনিয়ন টাইমস কে কিছুটা সময় দিলেন।

“পুজোর আগে পুজোর কথা” নিয়ে কলকাতায় ঘুরছে ওপিনিয়ন টাইমস এর ক্যামেরা ঘুরছে , খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই সব গুণী শিপ্লীদের যাদের পরিচয়ে বাংলার সংস্কৃতি সম্ব্রিদ্ধ। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কেমন আছেন।অতীত স্মৃতি ঘটে কিচুটা যদি নস্টালজিক কেও হয় হোক না, ক্ষতি কি ? তবুও তো বরণীয় যারা তাদের কে স্মরণকরে আগামীর পথে চললে মন্দ কি। তাদের খোঁজে ওপিনিয়ন টাইমস।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গাওয়া “শোন একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি” গানটি। এক আড্ডাসভায় বসে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল এই গানটি রচনা করেন এবং সেদিনই শুধু হারমোনিয়াম বাজিয়ে গানটি গান অংশুমানবাবু। আকাশবাণীর “সংবাদবিচিত্রা”র দায়িত্বপ্রাপ্ত উপেন দরফদার সেই আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন এবং তিনিই তাঁর টেপ রেকর্ডারে গানটি রেকর্ড করেন এবং সেই রাত্রেই গানটি “সংবাদবিচিত্রা”য় সম্প্রচারিত হয়।

টেক সেবী সমাজে আজও বর্তমান অংশুমান রায় , গায়ক ,সুরকার ও গীতিকার। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই অমর শিল্পী অংশুমান রায়।নিজের কাজ শুধু এই দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক যা আজ এক ইতিহাস । ১৯৩৬ সালের ১৯ শে অগাস্ট ঝাড়গ্রাম শহরের বুকেই বাছুরডোবা অঞ্চলে জন্ম হয় অংশুমান রায়ের।ছোটবেলা থেকেই চারিপাশে লালমাটি – শালবন পিয়াল এর পথ ধরে ছুটতে ছুটতে কখন গলায় সুর বেঁধে নিতো কেও তা আন্দাজ করতে পারতো না। মুখে মুখে বোল তৈরিতে পটু ছিলেন এই সনামধন্য শিল্পী। অকুতোভয় মানুষ ছিলেন , রার বঙ্গের প্রতিটি ছাপ বহন করেছেন সারা জীবন ধরে। আর সন্ধ্যে নামলেই মাদলের তালে তালে ঝুমুর, টুসু, ভাদু গান শুনে তিনি বড়ো হয়ে ওঠেন। পরিবারের এক পূর্বপুরুষ বাঁকুড়ার এক জমিদার সভায় সভাগায়ক ছিলেন এবং তাঁর গানে মুগ্ধ হয়ে সেই জমিদার তাঁকে “রায়” উপাধিতে ভূষিত করেন।

বর্তমানের অনেকেরই অজানা ও র্একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা হল প্রথম মাদল নিয়ে আকাশবাণীর “রম্যগীতি”তে একটি গান গেয়েছিলেন। এই গানটিই একাধারে ঝুমুর গানকে বাংলার লোকগীতির জগতে একটি নতুন ধারা হিসেবে তুলে ধরে এবং অন্যধারে মাদল নামক বাদ্যযন্ত্রটিকে বাংলার সঙ্গীতসমাজের মূলধারার সামনে নিয়ে আসে। বাংলা গানের ইতিহাসের চিরকালীন শিল্পীত্রয়ী: হেমন্ত-শ্যামল-মান্নার উপস্থিতিতেও অংশুমান রায় তৎকালীন বাংলা সঙ্গীতের জগতে একটি স্বতন্ত্র জায়গা করে নেন।

বাংলার চলচিত্রে সেভাবে অংশুমান রায় কে পাওয়া যায়নি , কি তার কারণ আজও অজানা। একই মঞ্চে হেমন্ত , মান্না , শ্যামল, সন্ধ্যা সঙ্গে কিছুটা আরতি মুখোপাধ্যায় এর সমান সমাদর ছিল অংশুমান রায়ের। কিন্তু কালের কালের রাজনীতিতে হারিয়ে গেলেন চলচিত্র থেকে অংশুমান রায়। শোনা যায় অনেক মঞ্চে অংশুমান রায়ের গানের পর আর কেউ গান করবার সাহস করতেন না , কারণ যে ভঙ্গিমায় গান করতেন তার পর আর দর্শকের মনে কোন জায়গা থাকতো না বিনোদনের রসস্বাধনে নতুন কিছু নেওয়া ।

সারা বাংলা জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায় এবং তখনকার মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতেও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে অংশুমানবাবুর নাম। রাঢ় বাংলার লোকগীতি, আধুনিক বাংলা গান বা রবীন্দ্রসঙ্গীত পেরিয়ে তিনি গাইলেন এমন একটি গান যা দুই বাংলার ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়ে গেলো। এই গানটির জন্য ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান নিজে অংশুমান রায়কে সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে “বঙ্গবন্ধু গোল্ড মেডেল” দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: আমন্ত্রণপত্র হাতে নিয়েও তিনি বাংলাদেশ যেতে পারেননি, কারণ তাঁর কিছুদিনের মধ্যেই আততায়ীর হাতে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। এই গানটি সেই সময় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখনো বাংলাদেশে গানটিকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয় এবং প্রতিটি সরকারী অনুষ্ঠানে বাজানো হয়। এই গানটির জন্যই ২০১২ সালে তাঁকে “মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মরণোত্তর মুক্তিযোদ্ধা সম্মান” দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে।

কোন সরকার এদের জন্য কিছু করেন নি , বাংলার গান পাগল মানুষ হিসেবে আমরাও অভিমানী ও সমগ্র বাংলার সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষও স্তম্ভিত এক্ষত্রে । এই গুণী শিল্পীর কে কোন সন্মান জানান হয় নি আজও । অনেক কিছু হলেও এদের সৃষ্টি নিয়ে কোন গবেষণাগার তৈরী করার উদ্যোগ কেও নেয় নি কেন প্রশ্নের মুখে সরকার।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Back to top button
%d bloggers like this: