হোয়াটস অ্যাপ-এর সাহায্যেই চলছে কিশোরীদের উপর যৌন নিগ্রহ !
সময়ের সাথে সাথে পাচারকারীরা পাল্টিয়েছে তাদের পদ্ধতি। আরও ভয়ঙ্কর ভাবে চলছে কিশোরীদের উপর অত্যাচার।
@ দেবশ্রী : সোশ্যাল মিডিয়া, যতটা ভালো, অনেকক্ষেত্রে তা খুবই ভয়ংকর রূপ নেয়। কখন যে কার জীবনে অন্ধকার নিয়ে আস্তে পারে তা বলা যায় না। হোয়াটস অ্যাপ এমন একটি মেসেঞ্জার যেটা, মানুষের কাছে খুবই গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়। আর এবারে সেই মেসেঞ্জারের সাহায্যেই চলছে যৌন ব্যবসা। যত দিন যাচ্ছে, নারী পাচার, বা যৌন ব্যাসায়কারীরা নিজেদের কাজের পদ্ধতি পাল্টিয়েছে। যদি যৌন পল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে পুলিশ বা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার চোখে পড়তে পারে কিন্তু লোকালয়ে, সাধারণ জনবসতিতে রাখলে কারোর সন্দেহ হবে না। তাই এখন যৌন ব্যবসা চলছে, রমরমিয়ে। শুধুমাত্র হোয়াটস অ্যাপে মেয়ের ছবি পাঠানো হলেই সেখান থেকে খদ্দের পাওয়া যেত। এইভাবেই সকলের নজর এড়িয়ে চলছিল ব্যবসা। গত কয়েকমাস ধরে, কলকাতার বেশ কিছু জায়গাতেই, ও দক্ষিণ শহরতলিতে কিশোরীদের দিয়ে চালানো হচ্ছিলো ব্যবসা। তবে ঘটনা যখন প্রকাশ্যে আসে তখন কলকাতার পুলিশ, বারুইপুর পুলিশ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বেশ নড়েচড়ে বসে।
এক সংস্থা জানায় যে, কয়েক মাস ধরেই তারা খবর পাচ্ছিল, শহরের বেশ কিছু জায়গাতে কিশোরীদেরকে জোর করে নিয়ে গিয়ে তাদের এই ব্যবসায় নামার জন্য বাধ্য করছে। তখন কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়। তারপর কলকাতা পুলিশ, অ্যান্টি-হিউমান ট্র্যাফিকিং ইউনিট কে সাথে নিয়ে বেহালার একটি আবাসনের মধ্যে তাদের অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে উদ্ধার হয় ১৪ বছরের এক কিশোরী। কিশোরী বরানগরের বাসিন্দা। বাড়িতে অভাবের কারনে সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলো। আর সংসারে সাহায্য করার জন্য খোঁজ করছিল একটা ভালো কাজের। আর কাজের লোভ দেখিয়েই তার কিছু বন্ধু তাকে ঠেলে দেয় এই জঘন্য দুনিয়াতে। সে কলকাতাতে এসে ভালো কাজ করার স্বপ্ন দেখেছিলো কিন্তু তাঁর সব ভুল কলকাতায় পা দেওয়ার সাথে সাথে ভেঙে যায়। তার সাথে হতে থাকে যৌন নিগ্রহ। উদ্ধারের পর কিশোরী জানিয়েছে প্রত্যহ দিন তার উপর গড়ে ১০ জন যৌন নিগ্রহ ছালাত।
কিশোরীকে উদ্ধার করার পর, তার সাহায্যে, পুলিশের হাতে ধরা পরে একাধিক পাচারকারীরা। আর সেই পাচারকারীদের সূত্রে খোঁজ মেলে বেহালার এক কিশোরী। তার মা ও রিকশাচালক বাবা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর, এক প্রতিবেশী তাকে কাজের কথা বলে বাটানগরে বিক্রি করে দেয়। সেখানে একটা বাড়িতেই তাকে আটকে রাখা হাত। সেখানেই নানা লোক এসে তার উপর অত্যাচার চালাত। গত সেপ্টেম্বরেও বারুইপুরের এক বাড়ি থেকে, ১৪ ও ১৬ বছরের দুই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়ছিল।
সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানায় যে, ২০১৬ সালে তারা একটি সমীক্ষা করেছিল, আর সেখান থেকে উঠে এসেছিলো যে, যৌন ব্যবসার সে সামগ্রিক বিস্তার ঘটেছে তার প্রায় ১৮ শতাংশ চলছে বসতি এলাকায় এবং তা চলছে নাবালিকাদের দিযে। এর জন্য এলাকার লোকজনেরও অনেককসময় বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে। এক পুলিশ অধিকারীকে জানান, পাচারকারীরা, কিশোরীদের কাজ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ঠেলে দিচ্ছে এই দুনিয়াতে। তাদের জোর করছে এই দেহ ব্যবসাতে নামার জন্য। আর যৌন নিগ্রহের পর তাদের আপত্তিকর ছবিও তুলে রাখা হচ্ছে, যাতে পরে রাজি না হলে তা দিয়ে ভয় দেখিয়ে কাজ করানোর জন্য। এই যে ঘটনা গুলি তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। জনসাধারণের মধ্যে লুকিয়ে যে ব্যবসা চলছে তা অত্যন্ত ঘৃণ্য।