১৯৬৮ সালের রেজিস্ট্রি অফিসের আগুনের উত্তাপে এনআরসি তে দগ্ধ মহিলারা !
খুঁজে পাচ্ছেন না কূল-কিনারা অসমের মহিলারা, সাহায্যের আশায় রয়েছে সরকারের দিকে তাকিয়ে....
@ দেবশ্রী : এনআরসি নিয়ে চিন্তিত সবাই। শেষবার যখন এনআরসির তালিকা প্রকাশ হয়েছিল, সেই সময় বহু মানুষের নাম সেই তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। তারপর মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে এই বাংলায় তিনি এনআরসি হতে দেবেন না। তবে এই এনআরসি নিয়ে উঠে আসে আর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। নাগরিক পঞ্জী থেকে বাদ গিয়েছে অনেক মহিলার নাম। প্রথমে তারা ছিলেন এই রাজ্যের ই। কিন্তু পরে বিবাহসূত্রে এখন তাঁদের অনেকেই অসমের বাসিন্দা। যেখানে এইমুহূর্তে নাগরিকত্ব নিয়ে চলছে টানাটানি। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে না পারায় নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ গেছে বহু মহিলার নাম। ১৯৬৮ সালে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কোচবিহারের রেজিস্ট্রি অফিস। তাই ১৯৬৮ সালের আগের কোনও জমির দলিলের কপি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর জমির কপি দিতে না পারাতেই তাঁদের নাম এনআরসি তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
তুফানগঞ্জ মহকুমা শাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে সোমবার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাঁদের। মহিলাদের এই বিপদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাশে দাঁড়াক, এমনটাই চাইছেন এ রাজ্যের মেয়ে, অসমের বধূ ওই মহিলারা। অসমের এক বধূ জানালেন, তাঁর বাবার নামের জমির কাগজ ১৯৬৪ সালের। কিন্তু সেটি হারিয়ে যাওয়ায় এনআরসির নাগরিকত্বের প্রামাণ্য হিসেবে জমা দিতে পারেননি তিনি। তাই এনআরসি তালিকা থেকে বাদ গেছে তাঁর নাম। ওই দলিলের কপি চেয়ে সোমবার মহকুমাশাসক অরবিন্দ ঘোষের কাছে স্মারকলিপি দিতে এলে তিনি তা গ্রহণ করেননি। তাঁরা বলেন, ১৯৬৮ সালে কোচবিহারের রেজিস্ট্রি অফিস আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়াতে ১৯৬৮ সালের আগের কোনও জমির দলিলের কপি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ দিন কেন তিনি অসমের বাসিন্দা ওই মহিলাদের স্মারকলিপি তিনি গ্রহণ করলেন না, সে ব্যাপারে কিছুই বলতে চাননি তুফানগঞ্জ মহকুমা শাসক অরবিন্দ ঘোষ। গত বছরের ৩০ জুলাই ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল অসমের প্রায় ৪০ লক্ষ আবেদনকারীর নাম। চলতি বছরের ৩১ অগস্ট নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়েন ১৯ লক্ষ মানুষ। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ এসেছেন অসমে। সেই নিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে তৈরী হয়েছে অনেক অশান্তিও। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সংশোধন করতে বলে। এর ফলে রাজ্যের ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষকে প্রমাণ করতে হচ্ছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে তাঁরা অথবা তাঁদের পরিবারের লোকজন ভারতীয় ছিলেন কী না। আর প্রমান করতে না পারলে, তাদের পেতে হচ্ছে বিদেশী তকমা। এই দেশের নাগরিক বলে গণ্য হচ্ছেন না তাঁরা। এই মুহূর্তে চিন্তিত অসমের মহিলারা। তারা চিন্তিত তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে।