Education Opinion

শিক্ষক নেই কেন প্রশ্নের মুখে সরকার, দিদি কি শুনছেন ?: হেয়ার স্কুলে অভিভাবকদের অবরোধ ,

অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে হেয়ার স্কুলের সামনে অবস্থান করছেন অভিভাবকরা , অভিভাবকদের দাবী শিক্ষা মন্ত্রী কই ,আসুন কথা বলুক , নাতো তিনি দিদি কে বলুক , শিক্ষক পাঠাতে।

অনেক দিন যাবৎ টালবাহানার পর আজ ক্ষোভ উগলিয়ে দিলেন স্কুলে আসা অবিভাবকরা। আগে দু’টো পিরিয়ড হয়ে স্কুল ছুটি হয়ে যেত। এখন মেরে কেটে একটা ক্লাস হয়।শিক্ষা দফতরতো আশ্বাস দিয়েছিল শিক্ষক পাঠাবে , তা আজ বাস্তবে কাজ হল না।ভাবাই যায় না হেয়ারের মত স্কুলে এই ঘটনা।

ঐতিহ্যবাহী এই হেয়ার স্কুলে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক।সকালে কলেজ স্ট্রিটে অবরোধে করেন অভিভাবকরা।শিক্ষক নেই কেন স্কুলে , হাতে গোনা শিক্ষকের সংখ্যায় আপত্তি জানায় অভিভাবকরা ।আগে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসেও মেটেনি সমস্যা।এই নিয়ে অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে গণ অবস্থান হেয়ার স্কুলের অবিভাবকদের। অবরুদ্ধ কলেজ স্ট্রিট। বন্ধ যান চলাচল। কলেজ স্ট্রিট সন্নিহিত বেশ কয়েকটি জায়গায় এই অবরোধের প্রভাব পড়েছে সাতসকালে।

বাস্তবে হেয়ার স্কুলে বর্তমানে ছাত্রের সংখ্যা সাড়ে পাঁচশো কিন্তু অথচ শিক্ষক মাত্র আট জন।এর মধ্যে গত মাসে এক জন শিক্ষক চলে গেছেন।এ মাসে চলে যাবেন টিচার ইন চার্জ তনুশ্রী নাগ ফলে শিক্ষকের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে সাতে। পড়াশুনা হবে কিভাবে , বহু দিনের দাবি সরকারের কাছে কিন্তু কেউ শোনেনি।আগে দু’টো পিরিয়ড হয়ে স্কুল ছুটি হয়ে যেত। এখন মেরে কেটে একটা ক্লাস হয়।১৭ জুলাইয়ের পর ফের ২৮ অগাস্ট। হেয়ার স্কুলের সামনে ফের অবরোধ অভিভাবকদের।সমস্যা মেটানোর আশ্বাস থাকলেও তা পূরণ না হওয়ায় ফের অবরোধ শুরু করেন অভিভাবকরা।এই দাবিকে সামনে রেখে বুধবার সকালে স্কুলের সামনে অবরোধ শুরু হয়।

গত ২৩ জুলাই কথা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় , অন্য স্কুল থেকে শিক্ষক এনে এখানে দেওয়া হবে । প্রশ্ন উঠেছে কেন পার্মানেন্ট শিক্ষক নয় কেন ? অথচ ঘটছে সব ঠিক তার উল্টোটা। এই স্কুলে অগাস্টে অবসর নিয়েছেন এক শিক্ষক।পয়লা সেপ্টেম্বর অবসর নেবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তনুশ্রী নাগ ।

হেয়ার স্কুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহরে অবস্থিত একটি বিদ্যালয়। এটি কলকাতার প্রাচীনতম বিদ্যালয়গুলির অন্যতম। স্কুলটি বর্তমানে মাধ্যমিক ও পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের অধীনে প্রথম হতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করে থাকে। শিক্ষাব্রতী ডেভিড হেয়ার রাজা রামমোহন রায় এর সহযোগিতায় ঊনবিংশ শতকে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। কত সালে এটি স্থাপিত হয়, তা নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে স্কুলের বরাত অনুসারে এটি ১৮১৮ সালে স্থাপিত হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতবর্ষে পশ্চিমী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলনে স্কুলটি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে।আর এই গৌরবময় ইতিহাসের পাশাপাশি দুর্ভাগ্য এই যে ছাত্ররা পড়তে আসে সেখানে শিখন নেই। কবে মিলবে শিক্ষক তা কেউই বলতে পারছেনা। তাও আবার হেয়ার স্কুলের মত স্কুলে।

এশিয়ার প্রাচীনতম পাশ্চাত্য শৈলীর বিদ্যালয় হিসাবে এই স্কুল সম্মানিত। হেয়ার স্কুল ও হিন্দু (Presidency) কলেজের মিলিত প্রাঙ্গণ কলকাতার অন্যতম বৃহত্তম শিক্ষা প্রাঙ্গণ। ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি এই স্কুলের সুবিশাল অলিন্দে দুই শতাব্দী জুড়ে পদচিহ্ন রয়েছে কত মহান ব্যাক্তিত্বের যারা বাংলা তথা বাঙালীকে গর্বিত করেছে বিশ্ববাসীর কাছে। এই স্কুলেই শিক্ষালাভ করেছেন মহান বিজ্ঞানীরা যথা আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ যাঁরা বিজ্ঞান জগতে ভারতের স্থান শীর্ষে নিয়ে গেছেন। এই স্কুলেরই ছাত্র গণিতজ্ঞ রাধানাথ শিকদার যিনি প্রথম মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা নির্ণয় করেন। এই স্কুলের মাঠেই ১৮৭৭ সালে প্রথম ফুটবল খেলার প্রচলন করেন এই স্কুলের ছাত্র নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী যাকে ভারতীয় ফুটবলের জনক বলা হয়। ভারতের প্রথম ফুটবল খেলার ঐতিহ্যবাহী এই মাঠের বর্তমান নামকরণ ওনার নামেই হয়েছে। এই স্কুলে পড়েই বাংলা সাহিত্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন রাজনারায়ণ বসু, অক্ষয়কুমার বড়াল, রামতনু লাহিড়ী, দীনবন্ধু মিত্র, পিয়ারীচরণ সরকারের মত মানুষরা। নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অভিনেতা গুরু দত্ত, পরিচালক ও অভিনেতা প্রমথেশ বড়ুয়া, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, কলকাতার প্রথম শেরিফ দিগম্বর মিত্র, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দাবায় গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া -এরা সবাই এই স্কুলেরই প্রাক্তনী।দুর্ভাগ্য বাংলা ও বাঙালির এই গর্বের ইতিহাস আজ ধুলোয় মিশেছে , নির্বিকার সরকার অজুহাত টেনে বেড়াচ্ছে। দিদি কি শুনছেন ? প্রশ্ন উঠে আসছে সকলের।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Back to top button

Discover more from Opinion Times - Bengali News

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading