Culture

বাংলার পুতুল নাটক হারিয়ে যাচ্ছে ডিজিটালের দাপটে

কিছু মেলাতে টিম টিম মোমবাতির আলোতে এখনও ভেসে আছে , তবে কালের গতিতে কবে হারিয়ে যাবে কে জানে ?

নিউজ ডেস্ক : বাংলার পুতুল খেলা বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি বিনোদন খেলা। এই খেলাটি একটি দক্ষ কারিগর দ্বারা তৈরি করা পুতুল দিয়ে খেলা হয়। বাংলার পুতুল খেলা সাধারণত ছোট শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এবং মজার। এই খেলা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে এটা কি পূর্ব বাংলা না পশ্চিমবাংলার ?

খেলাটির প্রধান উদ্দেশ্য হল সবাইকে একসাথে মিলে কাজ করার সাথে সাথে নিজেদের ক্রিয়াশীলতা বাড়ানো। এই খেলাটি সাধারণত দুই দলে বিভক্ত হয় এবং প্রতিটি দলের নেতা পুতুল বানানো দেখায় ও তারই নির্দেশে চলে সব কাজ ।

এই খেলাটি একটি টীম খেলা হিসেবে খেলা যায়। প্রথমে একটি দল পুতুল নির্মাণ করে তাদের নেতা নির্বাচন করে। একইভাবে আরেকটি দল পুতুল নির্মাণ করে তাদের নেতা নির্বাচন করে। এভাবেই গড়ে ওঠে নাটকের প্রস্তাবনা , হতে পারে সেটা পৌরাণিক কিংবা কাল্পনিক অথবা ধর্মীয়। সেটা নির্ভর করে সমাজের চাওয়া কেমন , অর্থাৎ বাবু বিবিদের চাওয়া। নির্দিষ্ট ভাবে বলাও যায় না এটা কবে প্রথম শুরু করেছিল আর কে শুরু করেছিল ।

তবে শেষের ২০০ বছরে এই পুতুল নাটকের পালা বদলে গেছে আমূল , প্রথম দিকে দুপুর বেলার বিনোদন ছিল বাবুরা সেরেস্তায় গেলে বিবিরা এক খিলি পান মুখে দিয়ে শুরু হত পালা। আর বাবু বিবিদের খুশিতেই চলতো পুতুল পালাকার দের। এর পরবর্তী সময়ে সামাজিক অবস্থান নিয়ে নাটক হতে শুরু হয় , কিন্তু বাধা শুরু হয় ব্রিটিশ শাসকদের কড়া নজর। ব্রিটিশ বিরোধী কোনো প্রচার করা যাবে না , তাহলেই বরাদ্ধ থাকবে কড়া শাষন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মূলত এই নাটক সম্প্রদায়ের বায়না আসতো সরকারের সামাজিক উদ্যোগ প্রচার করতে। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের ডাকও আসতো, ওই ১৯৮৫ পর্যন্ত এর পর এই বায়না কমে যায়। এই সময় রেডিও ও টিভিতে সবে আকর্ষণ শুরু হয়েছে, আর অন্য দিকে গ্রামবাংলার প্রচলিত মিডিয়া মানুষের সামনে থেকেই আসতে আসতে অদৃশ্য হতে শুরু করলো। আর ফেরানো গেলো না সার্বিক ভাবে , না সরকার না রাজনৈতিক-সামাজিক সংঘটনের কোনো উদ্যোগ। আসতে আসতে বাঁচার তাগিদে অন্য পেষায় চলে গেল।

বাংলার পুতুল নাটক একটি ঐতিহ্যবাহী নাটক যা প্রায় দশক পর দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভারতে সম্পূর্ণ জনপ্রিয় ছিল। এখন প্রায় সকল প্রকার নাটক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে দেখা যায়, কিন্তু পুতুল নাটক আজকে সাধারণত বেশ কম উপস্থিত থাকে।

একটি কারণ হতে পারে পুতুল নাটকের টেক্সচারাল ইমেজ। বাংলাদেশ এবং ভারতে পুতুল নাটক একটি ঐতিহ্যবাহী শৈলী হিসাবে মনে করা হয়। এটি প্রায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মুছে যাওয়ার আগে প্রচলিত ছিল। তবে এখন পর্যন্ত সেই কারণগুলোর জন্য পুতুল নাটক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সাধারণত খুব কম উপস্থিত থাকে।

তবে কিছু পুতুল নাটক গ্রুপ এখনো জীবিত রয়েছে এবং কিছু জায়গায় এখনো নতুন পুতুল নাটক হচ্ছে। তবে এই ধরণের শিল্পীরা বাঁচার তাগিতে অন্য পেশায় চলে গেছে , তার ফলে রুগ্ন হয়ে পড়েছে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প। সরকারের সব প্রকল্প আছে এই সব ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচানোর , কিন্তু সে গুলো ওই ফাইল বন্ধি বা কুমির ছানা জোগাড় করেই সরকারীবাবুরা দায়িত্ব সারেন লম্বা রিপোর্টে। সব মিলিয়ে স্বপ্ন দেখায় আর বাস্তবে মেলে না আসার আলো।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button

Discover more from Opinion Times - Bengali News

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading