হিন্দি গানের প্রকোপে বাংলা গান এখন কোনঠাসা : এফ এম রেডিও তে !
কি বলবেন বাংলা ভাষা নিয়ে যারা ভাবেন ?

নিজস্ব সংবাদদাতা : অনেকেই এই প্রশ্ন টা করে থাকেন যে , এফ এম রেডিও তে বাংলা গানের পরিমান খুব-ই কম , কি সকাল ৭ কি বা সন্ধে বেলা। সারা দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকলেও কথার মাঝে মাঝে হিন্দি গান-ই চালাচ্ছে এফ এম রেডিও সন্থা গুলো। এখন প্রশ্ন বাংলা গান কি মানুষ শুনতে চায় না ? এই প্রশ্ন অনেকের মুখে।
এক সময় আমার এফ-এম রেডিওতে বাংলা গান-ই বাজতো , কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। তার ফলে বর্তমানে যে এফ এম রেডিও কিন্তু সামান্য সময় বাংলা গান চালালেও হিন্দি গানের প্রভাব প্রায় ৮০ শতাংশ। কেন এই ধরণের সমস্যা , মার্কেটে কি বিজ্ঞাপন বাংলা গানে আসছে না। না এর পিছনে কি কোনো চক্রান্ত হচ্ছে কি না – কে জানে , প্রশ্ন টা অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে।
রেডিও যুগের পরিবর্তনে বর্তমানে চারদেয়ালের বাইরে এখন, পথ চলতি মানুষের কানে অথবা গাড়িতে বাজছে শুনছে অনেকে। এখন প্রশ্ন কোন বয়েসের মানুষ শুনতে চায় আর কারা বাধ্য হয়ে শোনেন। কলকাতা বিজ্ঞাপনের অভিজ্ঞ মানুষ সৌমেন রায় বললেন ১৬ থেকে ৩৮ পর্যন্ত একটা ঝোক আছে রেডিও শোনার। কিন্তু বাকিরা শুনতে হয় তাই শোনেন। আসলে ১৪% থেকে ১৮% মানুষ রেডিও শোনেন। সৌমেন বাবু বলেন দেখবেন এই টার্গেট গ্রুপ কে ধরার জন্য তাদের বিজ্ঞাপন নিয়ে হাজির হন এফ এম রেডিওতে। ফলে এই ১৬ থেকে ৩৮ বয়সের মানুষের পছুন্দ অনুযায়ী গানের তালিকা তৈরি হয় , বাকি টা এখন চলে কখনো-সখনো।
কলকাতা বিজ্ঞাপনের সন্থার পরিচালক সুজাতা শেঠ বলেন যে , বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারছে না , আজকের ছেলে মেয়েরা যারা স্কুলের উপরের দিকে বা কলেজ পড়ে তারা দেখবেন বাংলা ভাষাযা কথা বলায় সময় কিছু হিন্দি আর কিছুটা ইংরেজিতে কথা বলে , কি কারণ ? ওরা সকলেই জীবন যুদ্ধের প্রতিযোগিতার মধ্যে আছে। তার ফলে কোনো যুক্তি ওদের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না। কারণ বাংলার ছেলে – মেয়ে বলে কিছু নয় তারা সকলেই চায় জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে , ফলে কাজের বাজার এখন হিন্দি ও ইংরেজিতে আটকে গেছে। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবে আজকের প্রজন্ম ছুঁটে যাচ্ছে এই দিকে। আর এর মাঝখানে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে হিন্দি ভাষা ও চটুল সনস্কৃতি।
এফএম রেডিও স্টেশনগুলো কেন বাংলা গান বজায় না এর পাঁচটি কারণ হতে পারে –
১। বাংলা গান ভান্ডার অনেক , কিন্তু যে সংখ্যায় মানুষ শোনে তারা পছুন্দ করছে আজকের দিনের গান । অর্থাৎ শ্রোতা ধরে রাখার ক্ষমতা নেই বাংলা গানের , এই রকমই অভিযোগ । এর ওপরে দাঁড়িয়েই এফএম রেডিও স্টেশনগুলো নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী প্রোগ্রাম সংযোজন করে এবং এতে ব্যবহৃত সংগীতের সিলেকশন নির্বাচন করে।
২। অনেক স্টেশনে অনুষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র হিন্দি ভাষার সংগীতে ভরা হয়ে থাকে। দেখা যাচ্ছে পুরোনো গানে কিছুটা শ্রোতা থাকলেও নতুন গানে সেভাবে শ্রোতা দের আটকে রাখতে পারছে না , হাতে গোনা কিছু গানের বাইরে।
৩। বিজ্ঞাপনদাতারা এফ এম রেডিও নির্বাচনের আগে দেখে নেন যে , কত শ্রোতা এই চ্যানেল টি কে বেছে নিয়েছেন । তার ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞাপন। ফলে আর উপায় থাকে না এফ এম চ্যানেল কর্তৃপক্ষের , ঝুকে পড়েছে হিন্দি গানের দিকে।
৪। পশ্চিমবঙ্গে এফএম রেডিওগুলো কেন বাংলা গান বাজায় না এর পেছনে আর একটি কারণ হতে পারে , কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাযা রেডিও লাইসেন্স নিয়ে যাওয়ার নিয়ম এবং নির্দেশাবলী যা দ্বারা রেডিও স্টেশনগুলো পরিচালিত হয় তা কেউই মানেন না ।
৫। বাংলা গানের প্রযোজকরা সেভাবে বাংলা গানের ওপর আর বিনিয়োগ করতে চাইছে না , যেহেতু বিনিয়োগের বাণিজ্যিক ফল খুবই নিন্মমানের। কলকাতায় বড় বিজ্ঞাপনের সন্থার অফিস হাতে গোনা। সবই মুম্বাই ও হায়দ্রাবাদ, এর ফলে হিন্দির প্রভাব তো থাবায় এমন টা বলছেন অনেকে।
৫। এর পাশাপাশি বলা যেতে পারে বাংলা দেশে , রেডিও লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেডিও অথবা প্রত্যেক এফএম স্টেশনকে নিয়মিতভাবে বাংলা গান বাজানোর জন্য সুপারিশ করে থাকে। এছাড়া প্রতিটি রেডিও স্টেশনে মানসিক ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবেশের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় গানের নির্বাচন করা হয়। কিন্তু ভারতে ভাষা ভিত্তিক লাইসেন্স থাকলেও সেভাবে দেখার কেউ নেই।