অত্যন্ত কঠিন নিয়ম-নীতি পালনের মধ্যে দিয়েই সম্পন্ন হয় সূর্যদেবের আরাধনা
এই দিন নিষ্ঠাভরে অবাঙালিরা সূর্যদেবের কাছে পরিবারে সুখ এবং শান্তির জন্য কামনা করেন

পল্লবী কুন্ডু : উৎসবের মরশুম যেন শেষ হতেই চায়না। দুর্গাপূজা তারপরেই লক্ষী পুজো। এবার আসছে ধনতেরাস, দীপাবলি আর তারপরেই ছটপুজো। বাকি সবকিছু নিয়ে আমরা অবগত থাকলেও ছটপুজো(Chhath Puja) নিয়ে চিরকাল-ই একটা আগ্রহ রয়েই যায়। তাহলে আজ তা নিয়েই খানিক আলোচনা করা যাক। এই ছট পূজা মূলত অবাঙালিদের পুজো। এই পুজো তারা সূর্য দেবতার আরাধনা করে পালন করেন। কঠোর নিয়ম পালন করে নিষ্ঠাভরে অবাঙালিরা সূর্যদেবের কাছে পরিবারে সুখ এবং শান্তির জন্য কামনা করেন।
কথিত আছে এই ছট পুজো তে কিছু বিশেষ নিয়ম না মেনে চললে এই পুজোতে পুণ্যার্জন করা সম্ভব নয়। যদি আপনি মানতে পারেন কিছু নিয়ম, তাহলে অচিরেই আপনার সংসার গড়ে উঠবে সুখ এবং সমৃদ্ধিতে। দূর্গা পূজার মত চার দিন পালন করা হয় ছট পুজো। নিয়ম অনুসারে প্রথম দিন স্নান করে নিরামিষ খায়, দ্বিতীয় দিন খরনা, তৃতীয় দিন অর্ঘ্য, এবং চতুর্থ দিন সূর্যোদয় অর্ঘ্য। এই পুজো রীতিনীতি অন্যান্য পুজোর থেকে অনেকটাই কঠিন। সূর্যদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য কঠোর ভাবে পালন করতে হয় সমস্ত রীতি নীতি।
কঠিন হলেও প্রতি বছর বহু মানুষ মন দিয়ে নিষ্ঠা সহকারে আরাধনা করে সূর্য দেবের। মূলত উত্সবের দিন সকালবেলা স্নান করে পরিষ্কার কাপড় জামা পড়ে রান্না করেন বাড়ির মহিলারা। এই দিন দুপুর বেলা তারা লাউ ভাত খান। অর্থাত্ শুধুমাত্র ভাতের সঙ্গে লাউয়ের তরকারি খাবেন তারা। তবে কোন রান্নায় নুন ব্যবহার করা চলবে না। উত্সবের দ্বিতীয় দিন আরো গুরুত্বপূর্ণ। যিনি ব্রত রাখেন তিনি সারা দিন উপবাস পালন করেন। ওই দিন সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে সূর্য দেবতার পুজো করেন মহিলারা। দেবতাকে অর্পণ করা হয় ক্ষীর, রুটি এবং কলা। এরপর মূল উপকরণ ঠেকুয়া বানানোর কাজ শুরু করেন বাড়ির মহিলারা।
উত্সবের দ্বিতীয় রাত থেকে ছটের ডালা সাজানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এরপর বিকেলে কোন নদীর ধারে গিয়ে ডুবন্ত সূর্য কে দেখে পুজো করতে হয়। পুজো হয়ে যাবার পর সেই প্রদীপ জলাশয় তে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই পুজোর ডালা তে ফল ছাড়াও থাকে মূল উপকরণ ঠেকুয়া। উত্সবের শেষ সকালে সূর্য উদয় হওয়ার আগে বাড়ির মহিলারা আবার চলে যান জলাশয় তে। সেখানে অর্ঘ্য দিয়ে তবে এই পুজো শেষ করতে হয়। পুজো শেষ হবার পর ঠেকুয়া, আদা, জল, গুড় খেয়ে উপবাস ভাঙ্গেন মহিলারা। আর এই সমস্ত নিয়ম-নীতি পালন করেই গৃহের মহিলারা তার পরিবারের সুখ-শান্তির কামনা করেন এবং বাড়ির সকলের জন্য সূর্যদেবের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন।