মুখ্যমন্ত্রী আরো দায়িত্বশীল হন , সংবিধান মেনে চলুন : মতামত বিশিষ্ট জনেদের
" মুখ্যমন্ত্রী তার সংবাদনিক দায়িত্বকে অমর্যাদা করেছে, অবিলম্বে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং পদত্যাগ করা উচিত " - ভারতী মুৎসুদ্ধি

তিয়াসা মিত্র : গতকালের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বিশিষ্ট জনেরা মুখ খুললেন। রাজ্যের এই মুহূর্তের যে পরিস্থিতি সাবিকভাবে দুৰ্ভাগ্যপূর্ণ , যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে কোনো খবর এ সমাজ, এ রাজ্য আমাকে উপহার দেয়নি। বিগত কয়েকদিনে ‘ হাঁসখালি ‘ ঘটনাটি গোটা সমাজকে আলোড়িত করে রেখেছে। এবং সব থেকে বড়ো এবং আশ্চর্যজনক বিষয়ে এই ঘটনার যারা মূল ধৃত মূল অপরাধী তাদেরকে আপ্রান দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ‘সমাজের রক্ষকেরা ‘ (এই বিষয়ে কোনো রাজনৈতিন দলকে ইচ্ছাকৃত অপমান করা হচ্ছে না, রাজ্যের শাসনে যেই দল আসুক না কেন সমাজের দায়িত্বশীল মানুষ হিসাবে আমরা চাই নিরাপত্তা এবং সঠিক বিচার)
গতকালকের বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় হাঁসখালির নির্মম ঘটনা নিয়ে যে মন্তব্য করেছে তারই মধ্যে অনেক কথা এ সমাজ তথা এ বাংলার মানুষ মেনে নিতে পারেনি, বিশেষত মহিলারা। এই বিষয় নিয়ে আমি কথা বলে নিয়েছিলাম দুজন বিশিষ্ট এবং নারী কল্যাণ কার্যের সাথে নিজের যুক্ত রাখা মানুষের সাথে। রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্যা এবং একাধারে আইনজীবী শ্রীমতি ভারতী মুৎসুদ্ধি-এর সঙ্গে এবং কথা বলে নিয়েছি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর মহিলা সভানেত্রী ( পশ্চিমবঙ্গ) শ্ৰীমতী সুব্রতা দত্তের সঙ্গে। তাদের এই বিষয় বক্তব্য এবং মন্তব্যে গোটা সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তার একটি আঁচ পাওয়া গেছে।
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মন্তব্য গুলি যদি একটু আমরা দেখেনি তাহলে দেখা যাবে তিনি বলেছেন – ” আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লভ অ্যাফেয়ার বলবেন…না কি শরীরটা খারাপ ছিল, না কি কেউ ধরে মেরেছে… আমি পুলিশকে বলেছি, ঘটনাটা কী? ঘটনাটা খারাপ। গ্রেফতার হয়েছে। মেয়েটার নাকি লভ অ্যাফেয়ার ছিল শুনেছি।’’
এই বিষয়ে রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্যা এবং আইনজীবী শ্রীমতি ভারতী মুৎসুদ্ধি বলেন – ” এই মন্তব্বতে আমি স্তম্বিত হয়ে গেছি। মনে গেলো পার্কস্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডের সময়ে তিনি এই ধরণের মন্তব্য করেছিলেন। মেয়েটির চরিত্র নিয়ে এই দলের মন্ত্রিসভার লোকেরা কুৎসিত মন্তব্য করেছিলেন। এটি ওই রাজনৈতিক দলটির সংস্কৃতি। মেয়েরা যেখানে এইরকম জঘন্যতম অপরাধের শিকার হচ্ছে তখন সেই মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ানো এবং প্রতিকারের জন্য যে চেষ্টা সেটি না করার জন্য সব রকম চেষ্টা করে যাওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। এখানে বিষয়টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ করে তিনি একজন মহিলা কি ভাবে এই মন্তব্য করতে পারেন !? এই বিবেক কি বিবেক !? একজন নারী সন্মন্ধে একজন নারী হয়ে কি ভাবে এই কথা বলতে পারেন যা শুনে সমগ্র সমাজ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে ! ” এর পরিপ্রেক্ষিতে ওনার সামনে আমার প্রশ্ন ছিল মুখ্যমন্ত্রী মৃতার পরিবারের ওপর যে মন্তব্য করেন ” ঘটনাটির পরোক্ষনে কেন পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়নি ? ”

এই বিষয় আমরা সকলে সংবাদমাধ্মে থেকে কিছুতা কারণ জানতে পেরেছি। সেই বিষয়ে নিতে শ্রীমতি ভারতী মুৎসুদ্ধি বলেন – ” পরিবারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তিনি করেছেন সেই করার আগে অনেক দশবার ভাবা উচিত ছিল। ২০১১ সালের পর অসংখ ধর্ষণ কাঁদে আমি নিজে প্রত্যক্ষ ভাবে দেখেছি, অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের লোকেরা সেই ধর্ষণ কাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিল। এই স্পর্শকাতর ঘটনাটা সেই একই ঘটনা ঘটেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়েতেও সবটাই জানেন। তাই এই রকম মানসিকতা নিয়ে আর বেশিদিন ওনার রাজ্য শাসনের প্রযোজন নেই , তিনি এবার পদত্যাগ করুন। ” তিনি আরো বলেন- ” সংবিধানে বলা আছে এমন কোনো কথা বলা যাবে না যেই কথা নারীর মর্যাদা ক্ষুন্ন করে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কালের মন্তব্যে সেই করেছেন এবং আমরা আরো বেশি করে এর পর চাই যাতে তিনি পদত্যাগ করেন। “
এবং তারই সাথে আমি কথা বলেছিলাম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর মহিলা সভানেত্রী ( পশ্চিমবঙ্গ) শ্ৰীমতী সুব্রতা দত্তের সঙ্গে। ওনার কাছেও এই বিষয়ে আমি প্রতিক্রিয়া চাই এবং তিনি বলেন – ” কালকে আমরা সবাই দেখেছি এবং শুনেছি মুখ্যমন্ত্রী কি উক্তি করেছেন। খুব ভাবতে অবাক লাগে যেখানে একটি মেয়ে ধর্ষিতা এবং যেখানে তাকে কোনো রকম ময়নাতদন্ত ছাড়া রাতারাতি পুড়িয়ে ফেলা হলো তারপর তিনি কত কিছু বলছেন ( গতকালকের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ) এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে উনি এই ধরণের ক্রিমিনালদের দুষ্কৃতীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিজেপি শাসিত রাজ্যে যা অবস্থা তৃণমূল শাসিত রাজ্যেও তাই অবস্থা। হাতরস এবং হাঁসখালি-এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ মোদী এবং মমতা সাথে মাইল সারা ভারতবর্ষকে লুটেপুটে খাচ্ছে। ”

তার কাছে আর একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য কি এই তদন্ত-এর ক্ষেত্রে প্রশানকে প্রভাবিত করবেন? এর উত্তরে তিনি জানান, ” প্রশাসন তো এখন বাংলার প্রশাসন নেই। বিষয়টি এখন টিএমসি-এর প্রশাসন হয়ে গেছে। পুলিশকে যে ভাবে চালাচ্ছে পুলিশ সেই ভাবেই চলছে এই পরিণতি হয়েছে আমাদের বাংলার।”
উন্নত সমাজের একটি বিশাল বোরো বাধা হলো এই ধর্ষণ যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে ওঠে ভয়াবহ। এবং তার সাথে যে রাজনৈতিক যোগসাধন-এর একটি বিষয়ে সেই প্রমাণিত হোক বা নাই হোক কিন্তু যে বিষয়ে আমাদের বারবার বিবেকের কাছে ছোট করে। সেই বিষয়ে ‘ধর্ষণ ‘ তার নির্মূল করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। সেই মুক্তির পথ খোজ করা শুরু করতে হবে আজ থেকেই।