মুখ্যমন্ত্রীকে ‘গৃহবন্দি’ বানিয়েছে দিল্লি পুলিশ, গুরুতর অভিযোগ আপ এর
কৃষকদেরকে পূর্ণ সমর্থন জানাতে তাদের সাথে সাক্ষাৎকার করেন কেজরিওয়াল, তার পরেই বাড়ির সামনে বসে পুলিশের অতিরিক্ত ব্যারিকেড

দেবশ্রী কয়াল : সকাল থেকে চলছে ভারত বনধ (Bharat Bandh)। কৃষিবিল (Agriculture Bill) ইস্যু নিয়েই এই ভারত বনধ। কিন্তু বনধের দিক সকালেই আম আদমি পার্টির (Aam Admi Party)তরফ থেকে দিল্লি পুলিশের উপর আনা হল গুরুতর অভিযোগ। অভিযোগ, ‘গৃহবন্দি’ করে রাখা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। গতকাল দিল্লিতে বিক্ষোভরত কৃষকদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন কেজরিওয়াল আর তারপর থেকেই তার বাড়ির সামনে ব্যারিকেড তৈরী করেছে দিল্লি পুলিশ। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সাথে দিল্লির বিধায়কদেরকেও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার অনুমতি মিলছে না। এদিন সকলেই আম আদমি পার্টির তরফে দাবি করা হয় যে, গতকাল দিল্লিতে কৃষকদের সাথে সাক্ষাতের পর থেকেই দিল্লি পুলিশ, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছে।
এরপর সাংবাদিক সম্মেলনে আপ বিধায়ক সৌরভ ভারদ্বাজ দাবি করেন, ‘গতকালই সিঙ্ঘু সীমান্তের কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের পাশে থাকবেন। কৃষকদের এই ইস্যুতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে সেখান থেকে ফেরার পরই দিল্লি পুলিশ ওঁর বাড়ির সামনে ব্যারিকেড করে দিয়েছে। তাঁকে রীতিমত গৃহবন্দি করে রেখে দিয়েছে। আর এই সমস্ত কিছুই হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ইশারায়।’ আপ বিধায়ক সৌরভ ভারদ্বাজের (Sourav Bharadwaj)দাবি,’মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সমস্ত সরকারি বৈঠক বাতিল করতে হয়েছে। দলীয় কর্মীরা দেখা করতে গেলে তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে।’
তবে অপরদিকে আম আদমি পার্টির এই অভিযোগ মানতে নারাজ দিল্লি পুলিশ (Delhi Police)। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (নর্থ) অ্যান্টো আলফান্সো জানিয়েছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে কোনো গৃহবন্দি করা হয়নি। কেবলমাত্র নিয়ম মেনেই বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে আপের সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ এড়ানো যায়।’
তবে এখন প্রশ্ন উঠছে, কে সঠিক, দিল্লি পুলিশের কথা মানলেও কী কেবলমাত্র রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়াতে এত কিছু ? আর বাড়ির সামনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হলেও, দলের কোনো কর্মীর সাথে কেন দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না ? বনধের দিন সকাল সকাল এমন ঘটনা তুলছে অনেক প্রশ্ন। কেজরিওয়াল-ই দিল্লির প্রথম এমন মুখ্যমন্ত্রী, যিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে চলা এই বিক্ষোভের পরিদর্শনে কাল যান। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের সব রকম দাবিকে আমি সমর্থন জানাচ্ছি। ওঁদের এই বিক্ষোভের পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমি এবং আমাদের দলের নেতারা প্রথম থেকেই কৃষক নেতাদের পাশে আছি। আন্দোলনের শুরুতে দিল্লি পুলিশের তরফে, ৯টি স্টেডিয়ামকে জেলে রূপান্তরিত করার জন্য আমাদের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চাপের মুখেও আমি অনুমতি দিইনি।’
এরপর তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলীয় নেতারা এবং আইনসভার সদস্যরা প্রথম থেকেই আন্দোলনকারীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করছেন। আর আমিও এখানে কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আসিনি, বরং একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি। কৃষকরা খুব বড় সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের উচিত্ তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। আগামী ৮ ডিসেম্বরের ভারত বনধ-কে আমরা সমর্থন করি।’
কিন্তু তাঁর গতকালের সাক্ষাতের পর থেকেই বাড়ির সামনে পড়েছে দিল্লি পুলিশের ব্যারিকেট। না তাঁর বাড়িতে এখন কাউকে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে আর না কাউকেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার অনুমতি দিচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গিয়ে কালকের এই পদক্ষেপের জন্যেই কী কেন্দ্রের নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে ‘গৃহবন্দি’ ?