এক দিনের ইভেন্ট নয়, মানুষ চাইছে বারোমাস পাশে : জনতার রায়
বামেদের সাধারণ ধর্মঘট নিয়ে কী বলছেন জন সাধারণ

দেবশ্রী কয়াল : এখনও পর্যন্ত অনেকটাই সফল হয়েছে বামেদের (Cpim)ডাকা সাধারণ ধর্মঘট (Strike)। মিলেছে বেশ আশাতীত ফল। কিছু জায়গায় পরিস্থিতি খানিক বেসামাল হলেও বলা যেতে পারে যে সফলতা পাছা এই ধর্মঘট। ২০২১ এর বিধানসভার ভোটের আগে বামেদের এমন পদক্ষেপ ট্রেড ইউনিয়নস (Trade Unions)এবং কৃষি (Farmers Agriculture Bill) ভাইদের জন্যে তা অবিলম্বে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তা তাদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে। তবে আজকের এই একদিনের ধর্মঘট নিয়ে মানুষ কী ভাবছেন, তাদের মতামত কী তা জানতে চেয়ে বেরিয়ে পড়ে ওপিনিয়ন টাইমস।
আজকের ধর্মঘটের বিষয়ে যাদবপুরের এক চা বিক্রেতার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ” বিজেপি তো আমাদের এই বাংলাকে কিনতে চাইছে, নাকি বলছে বাংলাকে তারা গুজরাট বানিয়ে তুলবে। কিন্তু আমরা তো তা চাইনা। এতদিন লকডাউন হয়েছে অনেক আর্থিক খেয়েছে ঠিকই। কিন্তু আর এদ্দিন না হয় নিজেদের স্বার্থে লকডাউন করলাম। বামেদের এই ধর্মঘটকে আমি সমর্থন জানাচ্ছি। বাংলাতে এইবার তাদের ফিরে আসতেই হবে। তবে একদিন না বারবার অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে হবে তাদের। একদিন গলা তুলে প্ৰতিবাদ করে চুপ করে কিন্তু কিছুই হবে না। তাহলে এর কোনো সুফল পাবে না তারা। তবে সবসময় ধর্মঘট করতে হবে সেটাকেও বলব না। নানান পন্থা খুঁজতে হবে যা অবশ্যই সৎ হতে হবে। আর সেই ভাবেই এগোতে হবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে হবে। আজ আমার দোকান বন্ধ তবে এই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এই সাধারণ ধর্মঘটকে সমর্থন জানাচ্ছি। “
দমদমের এক অটোচালককে তাঁর মত জানতে চাইলে বলেন, “এসব তো আমাদের জন্যেই, তাই আমরা সমর্থন না জানালে কী করে হবে। এই ধর্মঘটকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি আমরা। আবার বাংলাতে ফিরে আসার জন্যে তারা যেভাবে সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে তা সত্যিই চোখে পড়ার মত। আবারও মনে হচ্ছে সেই পুরানো ৩৪ বছরে ফিরে গেছি। তারা যেভাবে এগোচ্ছে বলব ভালো। তবে আরও দ্রুত গতিতে এগোতে হবে তাদেরকে। আমাদের জনসাধারণের জন্যে ভালো কাজ করলে অবশ্যই বারো মাস পাশে থাকবো। যে দল জনসাধারনের জন্যে কাজ করবে আমি তাকেই নিজের সমর্থন জানাবো। “
বর্তমান পরিস্থিতির জেরে এখন দূরত্ব একটা বেড়াজাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই টেলিফোনিক মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয় আলিপুরদুয়ার জেলার এক স্কুল শিক্ষকের সাথে। এই ধর্মঘট নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” আমার এখন স্কুল বন্ধ, বাড়িতেই রয়েছি। স্কুল থাকলে হয়ত স্কুলে যেতেই হত। তবে আমি নিজের ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে বলব এই ধর্মঘটকে আমি সমর্থন জানাচ্ছি। বামেদের প্রচেষ্টা বেশ লক্ষণীয়। শ্রমিকদের জন্যে এবং কৃষকদের জন্যে ভাবে কজন এখন ? ভোটের জন্যে হোক কিংবা সত্যিই মানুষের স্বার্থে হোক, হচ্ছে যে এটাই বড় বিষয়। আবারও একবার মানুষের ভরসা জিততে গেলে কিন্তু এইভাবেই তাদেরকে তাদের উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে, তা থামালে হবে না। “
আজকের এই ধর্মঘটের দিনে যাঁরা অফিস যাত্রী তাঁদের অনেককেই খানিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে রাস্তায় কম যানবাহনের জেরে। তবে এই ধর্মঘট নিয়ে তারা কী বলছেন জানতে বেহালার শ্রীলেখা ব্যানার্জিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ” আজ যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, তা শুধু শ্রমিকদের জন্য নয় কখনোই। এতে যে দাবি জানানো হয়েছে তাতে সকল স্তর এর জনসাধারণের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। অস্বাভাবিক হারে মুল্যবৃদ্ধি, ততোধিক হারে বেকারত্ব আরো নানা অরাজকতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা সবাই। তবু এর উত্তর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নেই। ফলে এই পদক্ষেপ টা ভীষণ দরকার ছিল। আমার মতে, নরমপন্থী হয়ে বিপ্লব হয়না। এরকম ভাবে গলা তোলা হয়েছে বলেই সব মাধ্যমে আজ ধর্মঘটের মাধ্যমে জনসাধারণের কথা অনেকদিন পরে শোনা যাচ্ছে। আমরা সকাল থেকে শুনছি যে কোথায় কোথায় প্রতিবাদ গড়ে উঠছে, কৃষক, শ্রমিক রা নিজেদের লড়াই লড়ে নিচ্ছে। এভাবেই ফের সাম্যতা ফিরে আসবে এই আমার আশা। এভাবেই প্রয়োজন পড়লে সবাই যেন এক হয়ে গলা তোলে এটাই চাই।”
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে জনসমর্থন কুড়াতে বেশ সক্ষম হয়েছে বামেরা। সাধারণ মানুষ চায় তারা এইভাবেই যেন এগিয়ে যায়। প্রয়োজনে গলা তুলতে হবে, প্রতিবাদ জানাতে হবে। তবে একটা পদক্ষেপ নিয়েই শান্ত হয়ে গেলে কিন্তু চলবে না। এইভাবে প্রয়োজনীয় বিষয় গুলিতে প্রতিবাদ জানাতে হবে। সারা বছর মানুষের জন্যে কাজ করতে হবে নিঃস্বার্থ ভাবে। একমাত্র তখনই পাওয়া যাবে জনসাধারণের সমর্থন। আর তখনই হয়ত আরও একবার বদলাতে পারে বাংলার রানীতিতে হাওয়া বদল।