করোনা প্রকোপে বন্ধ হতে মহানগরীর সিনেমা হল
সব জায়গায় একই প্রোগ্রাম, কন্টেন্ট নেই... মুশকিলের মধ্যে হল কর্তৃপক্ষ গুলি

দেবশ্রী কয়াল : করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ৬ মাস পর খুলেছে সিনেমা হল। বলা হয়েছিল মাত্র ৫০ শতাংশ নিয়েই মাত্র হল খোলা যাবে। তখন থেকেই চিন্তার মধ্যে ছিল সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। মাত্র ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে সিনেমা হলের খরচ আদেও উঠবে কী না সেই নিয়ে ছিল প্রবল সংশয়। তবে পুজোর সময় বেশ কিছু বাংলা সিনেমা মুক্তির পর খানিক আশার আলো দেখছিলেন সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরেই আবার রীতিমত মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা। করোনা প্রকোপ পড়েছে সেখানে। জনসমাগম এর সংখ্যার প্রচন্ড অভাব লক্ষ্যনীয়। ফলত মহানগরীর কিছু প্রেক্ষাগৃহ আপাতত বন্ধ করার কথা ভাবছে। হয়ত আগামী ৬ নভেম্বর অর্থাৎ শুক্রবার থেকে কেউ কেউ সিনেমা হলের দ্বার বন্ধ করে দিতে পারে। এমনটাই ভাবনাচিন্তা করছেন অশোকা, প্রিয়া, বসুশ্রী এবং মেনকা সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে অন্যান্য সিঙ্গল স্ক্রিনের পরিস্থিতি আরও বেশি শোচনীয়। বড় বাজেটের হিন্দি ছবি জাতীয় স্তরে মুক্তি না পেলে এবং মহারাষ্ট্রে সিনেমা হল না খুললে পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা এখন প্রায় নেই বললেই চলে।
এই বিষয়ে ‘প্রিয়া’ সিনেমা হলের (Priya Cinema) কর্ণধার অরিজিত্ দত্ত জানান, ‘আমি এই মুহূর্তে সিকিমে রয়েছি। ৫ নভেম্বর কলকাতায় ফিরে তারপরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। তবে মনে হচ্ছে আপাতত হল বন্ধ করতেই হবে। কারণ এই মুমূর্তে কোনও ছবি নেই। সবমিলিয়ে খুব খারাপ পরিস্থিতি। চারটে শোয়ের জায়গায় এখন মাত্র দু’টো করে চলছে। মাত্র চারজন-পাঁচজন করে দর্শক আসছে, এটা কর্মচারীদের জন্য এবং আমার জন্যও সাইকোলজিক্যালি খুব ডিপ্রেসিং। যদি টাকাপয়সার কথা নাও ধরি, নতুন কোনও কনটেন্ট না থাকলে তো এভাবে হল চালানো সম্ভব নয়।’
‘অশোকা’ সিনেমা হলের (Asoka Cinema Hall) মালিক প্রবীর রায় এই বিষয়ে জানান, ‘পুজোতে যে বাংলা ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছিল, সেগুলো প্রথম সপ্তাহ যাওয়ার পর থেকেই খুব খারাপ অবস্থায়। কোনো সিনেমারই টিকিটের তেমন বিক্রি নেই। শেষ শুক্রবার থেকে আমরা দু’টো করে শো চালাচ্ছি। কিন্তু এরপর তো ৬ নভেম্বর থেকে আর কোনও কনটেন্ট নেই। তাহলে চালাব কী? যতক্ষণ না মহারাষ্ট্রে সিনেমা হল খুলছে ততদিন হিন্দি ছবির কোনো সাপ্লাই আসছে না। শুধু বাংলা ছবি দু’-এক সপ্তাহ অন্তর রিলিজ হলে আমরা কী করে চালাব? হল একদম বন্ধ করার ইচ্ছে নেই কিন্তু কনটেন্ট না পাওয়া গেলে তা অটোমেটিকালি বন্ধ করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি যতক্ষণ খুলে রাখা যায়। তবে বিক্রি একদম নেই। দু’জন-তিনজন করে লোক হচ্ছে। তাই অন্য কোনও কারণে নয়, কনটেন্ট নেই বলে হল বন্ধ করার ভাবনাচিন্তা চলছে।’
‘বসুশ্রী’র (Basusree Cinema) অন্যতম কর্ণধার সৌরভ বসুর বলেন, ‘পুজোতে রিলিজ করা ছবিগুলোর কোনওটাই তেমন চলেনি। তারপর দর্শক না আসায় শো কমাতে বাধ্য হয়েছি। আগামী দিনে নতুন বড় রিলিজ বা হিন্দি ছবি না এলে কী হবে বলা মুশকিল। তাই ইচ্ছা না থাকলেও ৬ তারিখ থেকে মনে হচ্ছে হল বন্ধ রাখতে হবে।’
‘মেনকা’ সিনেমার (Menoka Cinema Hall) তরফ থেকে মালিক প্রণব রায় বলেন, ‘একদম বন্ধ করার কথা ভাবছি না। কিন্তু এখন তো কোনও ছবি নেই। আর ছবি না থাকলে সিনেমা হল কীভাবে চালাব? মহারাষ্ট্রে তো হল খুলছে না। ওখানে কবে খুলবে সেই বিষয়েও কোনো সঠিক তথ্য নেই। যে ছবিগুলো আসার কথা ছিল, সব পিছিয়ে গিয়েছে। যেমন- ‘৮৩’, আর ‘সূর্যবংশী’ ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আসার কথা ছিল। সেগুলো এখন চলে গিয়েছে এপ্রিল-মে মাসে। এই অবস্থায় হাউস খুলে তো কোনও লাভ নেই। খুলে চালাব কী? দিওয়ালিতে একটা বাংলা ছবি এলে, একটা শো চলতে পারে। সেই ছবিই কিন্তু প্রত্যেক হাউসে চলবে। কারণ এই মুহূর্তে কারওরই কোনও প্রোগ্রাম নেই। একটা ছবি সব হাউসে লাগিয়ে কি বিক্রি হতে পারে?
এরপর তিনি আরও বলেন, “ধরুন বড় ছবি, ‘কাকাবাবু’ বা ‘বেলাশুরু’র মতো ব্র্যান্ডেড ছবি এলে তবু লোকজনের প্রত্যাশা থাকে। সেক্ষেত্রে দু’টো করে শো দিলে, দু’-তিনটে সপ্তাহ চলে যেতে পারে। এমনিতে একটা ছবি পড়ার পর বোঝা যায় চলবে, কি চলবে না। আপাতত সামনের শুক্রবার থেকে বন্ধের কথা ভাবছি। কারণ এই মুহূর্তে আর প্রোগ্রাম নেই। পুজোতে যা রিলিজ হয়েছে, একমাত্র ‘ড্রাকুলা স্যর’ একটু ভাল চলেছে। বাকি একটাও নয়। সেগুলোও তো দু’সপ্তাহ চলেছে। আর কতদিন চালানো যায়? তাই ছবির সাপ্লাই আবার এলেই হল খুলে যাবে। কনটেন্ট থাকলে বন্ধ করতাম না। দিওয়ালিতেও যদি হঠাত্ মিরাকল হয়, ছবি এসে যায়, তাহলে হল খুলে যাবে।’