একদিকে করোনার দাপট চূড়ান্তে, অপরদিকে অনুষ্ঠানে জমায়েতের অনুমতি মুখ্যমন্ত্রীর
পুজার পর সংক্রমণ বাড়ার আরও আশঙ্কা, সরকারের সিদ্ধান্ত জাগাচ্ছে উপরি ভয়

দেবশ্রী কয়াল : আর মাত্র কয়েকদিন পরেই হবে মা এর আগমন, চারিদিক যেন উৎসবের সাজে সেজে উঠেছে। করোনা আবহে মানুষ এই পুজাতে একটু আনন্দের সুখ তৃপ্তি লাভ করার জন্যে মুখিয়ে রয়েছেন। কিন্তু এই পূজার পর যে করোনার সংক্রমণ আরও উর্দ্ধমুখী হবে সেই আশঙ্কায় প্রতিটি মুহূর্তে ভুগছে সবাই। আর এরই মাঝে পূজার মরশুমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমায়েতের ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। অর্থাৎ করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আর এক বড় আশঙ্কা। আর জমায়েত সৃষ্টি মানেই সংক্রমণের আশঙ্কা, যেখানে বারবার বলা হচ্ছে জমায়েত এড়িয়ে চলতে, সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখতে সেখানে রাজ্য সরকার নিল এমন একটি পদক্ষেপ।
রাজ্য সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বড় জায়গা (উন্মুক্ত বা হল) হলে এবার পুজোয় করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বাধিক দুশ জন জমায়েত করতে পারবেন। সাধারণভাবে একশ জন অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন। গতকাল মঙ্গলবার এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাজ্যের করোনা বৃদ্ধির হার ও দুর্গা পুজোর ভিড় নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, শিল্পীদের কথা বিবেচনা করেই নাকি রাজ্য সরকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে পুলিশকেও সহযোগিতার অনুরোধ করেছেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘কোভিড প্রটোকল মানলে রাজ্যের তরফে পুজোর সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানের জন্য একশো মানুষের জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বড় জায়গা থাকলে এখন সেই সংখ্যা সর্বাধিক বাড়িয়ে দুশো পর্যন্ত করা হছে। তবে, পুজো মণ্ডপের কাছেই যেন সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা না হয়। মণ্ডপের কাছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে ভিড় সামলানো পুলিশ ও পুজো কর্তাদের পক্ষে অসুবিধা হতে পারে।’
সেক্ষেত্রে পুলিশকেও কিছুটা নমনীয় হওয়ার অনুরোধ করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, লকডাউনের ফলে বহু শিল্পী কর্মহীন। তাঁদের কথা বিবেচনা করেই সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘সুযোগ থাকলে ছোট সাংস্কতিক অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে তা সেখান থেকে যেন সংক্রমণ না ছড়ায়। কোভিড প্রটোকল মেনে অনুষ্ঠান করলে প্রশাসনের কোনও আপত্তি থাকবে না।’
অপরদিকে পুজোর পরে সংক্রমণ বিপুল হারে বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে চিকিত্সকদের সংগঠন। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেও উত্সব শেষে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পরেই অনুষ্ঠানে জমায়েতের নির্দেশ দিয়ে দেন। এখানে প্রশ্ন উঠছে তিনি আগাম পরিস্থিতির আশঙ্কার কথা জেনেও তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ! অনেকের মতে এমন সিদ্ধান্তের বদলে যদি মুখ্যমন্ত্রী শিল্পীদের পরিবার পিছু কিছু অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে পারতেন। তাহলে হয়ত যাদের পেটের দায়ে কাজ করতে হচ্ছে তাঁরা হয়ত বাড়িতে সুরক্ষিত ভাবে থাকতে পারতেন। এই বৎসর পূজাতে প্রতি ক্লাব পিছু সরকার একটা অর্থের সংখ্যা দিচ্ছে। আর তাতে কোনো বিতর্ক ও নেই। কিন্তু যে সব শিল্পীদের এই মুহর্তে বেশি প্রয়োজন তাহলে তাঁদের কিছু টাকা দিতে পারতেন তিনি। এবং জমায়েতের সিদ্ধান্ত না নিতে পারতেন। কারন জমায়েত মানেই করোনার সংক্ৰমন বেড়ে যাওয়ার আরও প্রবল আশঙ্কা।