কোরোনার বিধি শিকেতে তুলে, ছুটির রেশ কলকাতা জুড়ে
"এই পরিস্থিতিতেও উৎসবই যাঁদের কাছে শেষ কথা, তাঁদের কিছু বলার নেই।"- ডঃ কুনাল সরকার
তিয়াসা মিত্র : ২৫শে ডিসেম্বরের ভিড়-এর পর হুহু করে বেড়েছে কোরোনার গ্রাফ এবং তার দোসর অমিক্রনের দাপট। সংক্রমণের গ্রাফ নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছিল প্রতিদিন, এখন একটু স্বস্তি পেলেও প্রতিদিনই সংক্রমের খবর আমরা পেয়ে চলেছি। কিছু ক্ষত্রে করোনা প্রোটোকল বোধ দেওয়া হয়েছে। স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে আছে, যার দরুন বাচ্চাদের ভবিষৎ আজ সংকটের মুখে। কোভিডের আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে শহরের দর্শনীয় স্থানগুলি। যদিও এক শ্রেণির মানুষের বেপরোয়া উৎসব-যাপন তাতে বন্ধ হয়নি। চিড়িয়াখানা বা মিলেনিয়াম পার্কের বদলে বুধবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের সকাল থেকেই দেখা গেল, পিকনিকের নামে প্রবল ভিড় ময়দান চত্বরে। বাদ যায়নি ইএম বাইপাসের বিভিন্ন ভেড়ি সংলগ্ন একাধিক পিকনিক স্পট-ও। এর পাশাপাশি, এ দিন ভিড় আছড়ে পড়েছে শহরের শপিং মল ও বাজারগুলিতেও।
উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক মহলের একটি বড় অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, “ওমিক্রনের প্রকোপ কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু এই বেপরোয়া উৎসব-যাপনের জেরে ফের রূপ ও গোত্র বদলে ফিরে আসবে না তো করোনাভাইরাস?” কিন্তু সেই বিষয়ে হুশ নেই বেপরোয়া জনাকয়েক-এর তাদের দল ময়দানে এসেছিলো পিকনিক করতে এবং তাদের কারোরমুখে ছিলোনা মাস্ক এবং একজনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল মাস্ক না থাকার কারণ বা এই বেপরোয়া হওয়ার কারণ সেই ব্যাক্তি যা উত্তরদিয়ে তাতে চক্ষু চড়কগাছ , ” দিনকয়েক আগে একটু সর্দি-জ্বর হয়েছিল। এমনিই সেরে গিয়েছে। চিকিৎসক করোনা পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি করাইনি। যে জিনিস ঘরে বসে থাকলেই সেরে যায়, তা নিয়ে ভাবনার কী আছে?’’ ইএম বাইপাসের একটি ভেড়ির ধারে দেখা গেল, ‘পিকনিক পার্টি’র গাদাগাদি ভিড়। তারস্বরে বক্স বাজিয়ে নাচ-গান চলছে সেখানে। মাস্ক পরে থাকা তো দূরের কথা, দূরত্ব-বিধি মানারও বালাই নেই। হাত জীবাণুমুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা কি আছে? লাইন দিয়ে মাটিতে বসেই শালপাতায় খেতে শুরু করা এক ব্যক্তির উত্তর, ‘‘পিকনিকের মধ্যে অত নিয়ম পালন করা যায় না। করোনার ভয়ে এই শীতটা নষ্ট করব নাকি!’’
এইসব উত্তর পাওয়া সত্যি লজ্জাজনক বলে মনে করা হচ্ছে। মানুষ যতই আনন্দে উল্লাস করছে, চিকিৎসকদের কপালে ততই ভাজ পড়ছে যা সেই সব মানুষের বোধগম্য হচ্ছে না। শপিংমল গুলির রেকর্ড দেখার মতন জানা যাচ্ছে, সাউথসিটি মাল এবং কোয়েস্ট মাল-এ পর্যায়ে ৭০,০০০হাজার লোক জমায়েত হয়েছে বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ। রাজডাঙা মেন রোডের একটি শপিং মলে আবার ভিড় টানতে আলাদা করে ‘প্রজাতন্ত্র দিবসের অফার’ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরিবার নিয়ে সেখানে হাজির এক মহিলার যা নিয়ে মন্তব্য, ‘‘অফিস ছুটি থাকার এই সব দিনে কেউ কি ঘরে বসে থাকে! পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার তেমন জায়গাও খোলা নেই। তাই শপিং মলই ভরসা। এর মধ্যে অফার হচ্ছে বাড়তি পাওনা।’’ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলে হাজির কলেজপড়ুয়া সুনয়না ঘোষের আবার দাবি, ‘‘দিদিমার করোনা হয়েছিল। পাঁচ দিন পরিবারের সকলে আইসোলেশনে ছিলাম। ভাল ব্যাপার হল, আজই সেই আইসোলেশনে থাকার সময় শেষ হয়েছে।’উদ্বেগ জনক পরিস্থিতি বই গেছে গতকাল কলকাতার ওপর দিয়ে। এই বিষয়ে চিকিৎসকেরা সত্যি চিন্তিত এবং ভৃত্যন্ত্রস্ত হয়ে আছেন।