আর কত প্রজাতন্ত্র গেলে ওদের পাকা ঘর হবে : নির্বাক রাষ্ট্র
ভোট আসে ভোট যায় , অবস্থা সেই একই তিমিরে। আক্ষেপের সাথে জানালেন সমাজকর্মীরা
পল্লবী : আমপানের দাপটে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে বাংলার অন্যতম সৌন্দ্যর্য সুন্দরবন। চারিদিকে থৈ থৈ করছে জল। চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে ঘরে মজুত সামান্যতম খাদ্য সামগ্রী। জীবনটা যেন থমকে গেছে পুরোপুরি। কি খাবে তারা কি পড়বে ? রাতে দুটো চোখের পাতা এক করতে পারছেনা মানুষগুলো। এত সময় ধরে জল জমে থাকায় ভেসে উঠছে অসংখ্য মৃত মাছ, মুরগি, ছাগল। অন্যদিকে জলও যাচ্ছে নষ্ট হয়ে। এর দেখা দিচ্ছে পানীয় জলের সঙ্কট। তার ওপরে এখনো বেশ কিছু প্রত্যন্ত জায়গায় এখনো পৌছোয়নি ত্রাণ। খিদের তাগিদে শেষে মুখে তুলে নিতে হচ্ছে মোর পশু-পাখি। তবে যে মানুষগুলির স্বাস্থ নিয়েও চিন্তা বাড়াচ্ছে !
গোসাবা ব্লকের রাঙ্গাবেলিয়ার বাসিন্দা সঞ্জিত মণ্ডল বলছিলেন, ‘প্রতিবারই এমন হয়। জল সরার পরেই পেটের অসুখ যেন দৈত্যের মতো আক্রমণ করে। এবার পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন। অসংখ্য বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যেভাবে জল ঢুকেছে, তাতে পান করার উপযুক্ত নেই একটি পুকুরের জলও। বহু দূরদূরান্তে মানুষ যাচ্ছেন একটু জলের জন্য। এবার সেই গুটিকয়েক পুকুরেও যদি জল ঢুকে যায়, মানুষ বাধ্য হয়ে এই জলই খাবে থিতিয়ে, ফুটিয়ে। আর তখনই আন্ত্রিক দেখা দেবে এলাকাজুড়ে।’
এই পরিস্থিতিতে এক পঞ্চায়েত কর্মী শ্যামল বাগ বলছেন, ‘এর আগেও এই কাজ করেছি। এমন দিশাহারা লাগেনি কখনও। লাখে লাখে মাছ, পাখি, মুরগি গুঁড়িয়ে (মাটি চাপা দিয়ে) শেষ করতে পারছি না। আগে এক বিঘা জমির জল যতদিন লাগত, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি লাগছে। কারণ, এত প্রাণী আগে কখনও মারা যায়নি। জলের এই অবস্থা হওয়ায় যে মাছচাষ হয়েছিল, তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল। এক একটা পুকুর সাফ করতে গিয়ে ১০-১২ কিলোর মাছের দেহ মিলছে। এ ক্ষতি যেন চোখে দেখা যায় না!’
সুন্দরবন এলাকায় কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সেফ’-এর কর্মী দিগন্ত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘খাবার-ত্রিপলের যতটা দরকার, ঠিক ততটাই দরকার ব্লিচিং, জিওলিন- এইসব। তবে এইসব দিয়েও যে বিপদ এড়ানো যাবে, তা নিশ্চিত বলা যায় না। তাই জল সরতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রচুর মেডিক্যাল সহায়তা দিতে হবে মানুষকে। যত সম্ভব শিবির করতে হবে। যে কোনও ঝড় তথা বন্যায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের সাহায্য করার এটাই সবচেয়ে জরুরি পর্যায়।’স্থানীয়রা বলছেন, ওই জল এক ফোঁটাও যদি কোনও ভাবে খাবার জলে মিশে যায়, বিপদের শেষ থাকবে না। সে বিপদ যেন আর দূরেও নেই খুব বেশি, মানুষগুলির চোখে মুখে মৃত্যু ভয় যেন স্পষ্ট।
যখন এই মানুষগুলি বিপদে পরে তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সবাই কিন্তু প্রতিটি ঝড় বৃষ্টির পর কেন এমন ভোগান্তি পোয়াতে হয় মানুষগুলিকে। সরকার প্রশাসন তরফে কি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় ? কালো জল ফোটালেও কি তা পানের যোগ্য হয় ! বেঘোরে প্রাণ খোয়াতে হবে মানুষ গুলিকে সাথে যে ছোট বাচ্ছারাও আছে। সভ্যতার আলো দেখার আগেই যে শেষ হয়ে যাবে তাদের ছেলে বেলা। তাই একটা স্থায়ী পাকা বাসস্থান খুব প্রয়োজন তাদের।