সংবিধানিক বৈঠকের নামে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজ্যপালের

রাজ্য সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, অমিত শাহকে জানালেন জগদীপ ধনকার

দেবশ্রী কয়াল : গতকাল রাজ্যের আইন শৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। এই বৈঠক নিয়ে শুরু থেকেই রাজনৈতিক মহলে চলছিল নানান জল্পনা। রাজ্যের সাথে রাজ্যপালের যে সংঘাত রয়েছে তার উপর আদতে নির্ভর করেই যে এই বৈঠক তার আভাস পাওয়াই গেছিল। যদিও গতকাল ট্যুইটে রাজ্যপাল বলেছিলেন এই সাক্ষাৎ ভারতীয় সংবিধান মেনেই। তিনি বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করেই নাকি এই বৈঠক করছেন। কিন্তু অনেকেরই মতে, এই বৈঠক রাজ্যপাল নিজের ব্যক্তিগত অভিযোগের জন্যই করেছিলেন।

গতকাল অমিত শাহের সাথে ১ ঘন্টার বৈঠকে, রাজ্য সরকারের কাজ নিয়ে অগাধ অভিযোগ জানান রাজ্যপাল। তিনি স্পষ্ট জানান রাজ্য কিন্তু ভালো নেই। তিনি এও বলেন যে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের জন্য তিনি ভালো করতে চান কিন্তু তার সেই কাজে দেওয়া হচ্ছে বাঁধা। লঙ্ঘন করা হচ্ছে রাজ্যপালের অধিকারকে। এদিন রাজ্যের পরিস্থিতি বলতে গিয়ে রাজ্যপাল অভিযোগ জানান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে। যেভাবে রাজ্যে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, মানুষ মারা যাচ্ছে, হটাৎ হটাৎ করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজ্য সরকার, সেখানে রাজ্য সরকার যে চরম ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ব্যর্থ সেই কথাই তুলে ধরেন রাজ্যপাল।

আম্ফানের জেরে যে ক্ষতি হয়েছে, সেক্ষেত্রে ত্রাণ দিতে গিয়েও কিন্তু দুর্নীতি করেছে রাজ্য সরকার। কখনও মিথ্যে বলে টাকা, কখনও রেশন চুরি। এরপর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও এদিন অভিযোগ জানিয়েছেন ধনকার। তিনি আগেও বলেছেন রাজ্যে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিছক খেলা খেলছে সরকার। শিক্ষা ব্যবস্থাতেও হচ্ছে রাজনীতির খেলা, আর এদিন এই কথার আবারও পুনরাবৃত্তি করেন। রাজ্যপাল বারবার কিন্তু একটাই কথা বলে গেছেন রাজ্যের ভালোর জন্যে, রাজ্যের মানুষের ভালোর জন্যই এই বৈঠক তিনি করেছেন।

তবে এই বৈঠকের পরে, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, রাজ্যপাল কী আদেও সংবিধান অনুযায়ী চলেন ? না, ছিলেন না। তিনি রাজ্যে বিরোধীদের হয়ে প্রচার করেন বেশি আর মানুষের বিষয়ে ভাবেন কম। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বলার আগে দিল্লি উত্তর প্রদেশ গুজরাটের মত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আগে বলুক দেখি। রাজ্যে কোনো সমস্যা তৈরি হলে সেটা কিন্তু রাজ্যপাল এসে সমাধান করেন না, কেবল অভিযোগ করতে থাকেন।

এদিন রাজ্যপালের এই অতিসক্রিয়তার বিরোধীতা জানিয়েছে সিপিএমও। সিপিএমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার তো নিজেই এই সকল দোষে অভিযুক্ত। তারা কারো বিচার কিভাবে করবে।

কিন্তু রাজ্যপালের কেন্দ্রের কাছে এই অভিযোগ কী আদেও কোনো নতুন মোড় নেবে ? তা কিন্তু মনে হয় না, কারন এখন কেন্দ্রীয় সরকার যদি রাজ্যপালের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নিতে যায়, তাহলে কিন্তু তা রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা হয়ে যাবে, যে পথে কেন্দ্রীয় সরকার কখনোই যাবে না। কারন তেমন হলে, মানুষের আস্থা চলে যাবে রাজ্য সরকারের প্রতি। কিন্তু মানুষকে নিজের পক্ষে রাখার জন্য সকল পক্ষ অপেক্ষা করছে নির্বাচনের কারন। কারন তার উপরেই এখন নির্ভর সবকিছু। এই মুহূর্তে কোনো দলই চাইবে না এমন কিছু ঘটুক। তাই নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকতে হবে সকলকে, রাজ্যপালকে কেবল জানিয়ে যেতে হবে তার অভিযোগ।

Exit mobile version