উৎসবের মরশুমে শুকনো মুখে পৌর কর্মীরা, মুখ্যমন্ত্রী মেয়রের পূজা উদ্বোধনে ব্যস্ত !
বিক্ষোভের মুখে পৌর কর্মীরা
দেবশ্রী কয়াল : করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউন, আনলক পর্যায়ে বহু মানুষ হারিয়েছে চাকরি, অর্থনৈতিক হাল হয়ে রয়েছে বেহাল। অনেকেই এখনও পাননি তাঁদের বকেয়া মাইনে। ঠিক মতো পরিবারের মুখে তুলে দিতে পারছেনা দুবেলা দুমুঠো খাবার। সামনেই দূর্গা পূজা, এই সময়েও বহু মানুষের পকেট ফাঁকা। অনেক সরকারি কর্মচারীরাই যোগ্য বেতন পর্যন্ত পাচ্ছেন না। সেই জায়গায় রাজ্য সরকার পূজার জন্যে প্রত্যেকটি পূজা কমিটিকে দিচ্ছে ৫০ হাজার করে টাকা। যেখানে মানুষ নিজেদের যোগ্য টাকার দাবিতে পথে অবরোধে নামতে বাধ্য হয়েছে তাঁদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না রাজ্য সরকার, বরং পূজার জন্যে প্রত্যেক পূজা কমিটিতে টাকা দিচ্ছে। না পূজা কমিটিতে টাকা দেওয়াটা ভুল না বা সেটা নিয়ে বিতর্কের বিষয় না, বিষয় হল কলকাতা পৌর নিগমের অন্তর্গত কঞ্জারভেন্সী বিভাগের ঠিকা শ্রমিকদেরকে নিয়ে। যাঁরা গতকাল মঙ্গলবার রাজপথে নামতে বাধ্য হয় নিজেদের দাবি নিয়ে। যাঁরা নিজেদের প্রাপ্য টাকার জন্যে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
যাঁরা সারা বছর এই তিলোত্তমা শহরকে আবর্জনা মুক্ত রাখে, পরিষ্কার-পরিছন্ন করে রাখে, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা প্রতিদিন নিয়মিতভাবে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে শহরকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এছাড়া আরও অন্যান্য পতঙ্গবাহিত রোগের থেকে মুক্তি দিয়ে যাচ্ছে আজ তাঁরা যখন নিজেদের প্রাপ্য টাকা চাইছে তখন কিন্তু রীতিমত মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে রাজ্য সরকার। তাঁদের দাবি, তাঁদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘ প্রায় ২০ বৎসর ধরে নিজেদের কাজ দায়িত্বের সাথে করে যাচ্ছেন কিন্তু ২০ বছর পরেও তাঁদের মাইনে শুধু মাত্র ৭ হাজার ২০০ টাকা। যা দিয়ে আজকের দিনে সংসার চালানো খুবই কঠিন। কিন্তু যাঁরা অস্থায়ী ঠিক কর্মী রয়েছেন তাঁদের বেতন কিন্তু তুলনায় অনেকটা বেশি। এখন তাঁদের আর সেই বয়েস নেই যে নতুন করে কোথাও চাকরি খুঁজতে যাবে, কারন নতুন জায়গায় চাকরি পাওয়া অসম্ভৱ। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা বহুবার জানিয়েছে আবেদন, কিন্তু তাঁদেরকে ফিরে আসতে হয়েছে প্রত্যেকবার। কিন্তু এবারে তাঁরা শেষমেশ বাধ্য হয়ে বেরিয়ে পড়েন রাজপথে।
কঞ্জারভেন্সী বিভাগের ঠিকা শ্রমিকরা এদিন কলকাতা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছেন তাঁদের কয়েকটা দাবি। সেগুলি হল:
১. কলকাতা পৌর নিগমের স্থায়ী কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কঞ্জারভেন্সী বিভাগের ঠিকা কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।
২. মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে সম-কাজে সম-বেতন অবিলম্বে চালু করা হোক।
৩. খুবই অল্প বেতন পেয়ে থাকেন স্থায়ী ঠিকা কর্মীরা যা তাঁদের সংসারের খরচ চালানোর পক্ষে একেবারে অনুপযোগী, তাই এই অগ্নিমূল্যের বাজারে তাঁদের মাসিক বেতন যেন নূন্যতম ১৮ হাজার টাকা করা হয়, এবং যতদিন তা না হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা হিসাবে আরও ৬ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হোক। ভারতের অন্যান্য রাজ্য যেমন কেরালা ও দিল্লি এর নূন্যতম মাসিক বেতন যথাক্রমে ১৮,০০০ ও ১৪,০০০ টাকা চালু হয়ে গেছে।
৪. এই নিগমের স্থায়ী কর্মীদের ন্যায় তাঁদের ও সকল প্রকার লীভ বা ছুটির ব্যবস্থা চালু করা হোক।
৫. প্রতি মাসের বেতন অনধিক ৫ তারিখের মধ্যে প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক।
এদিন পথে নেমে ঠিক কর্মীরা বলেছেন, তাঁদের দাবি যাতে অবিলম্বে মানা হয় সেই দিকে সরকার যেন দেখে। কারন তেমন না হলে এই পূজার পর আমরা কিন্তু আমাদের গোটা পরিবার নিয়ে রাস্তায় বের হব, প্রতিবাদ জানাবো। প্রয়োজনে আরও বড় ডাক দেব। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবিগুলি মানতে হবে এবং প্রাপ্য অধিকার দিতে হবে। তবে আমরা নিজেদের পরিষেবা চালিয়ে যাবো, নিজেদের দায়িত্ব থেকে পিছু হটবো না।
একদিকে এই ঠিকা কর্মীরা যখন তাঁদের প্রাপ্য বেতন টুকুর জন্যে করে লড়াই করছে তখন উপর মহল থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু পূজার সময় প্রত্যেকটি কমিটিকে রাজ্য সরকার ৫০ হাজার করে টাকা দিচ্ছে। এ কেমন বিচার ? যাঁরা দুবেলা ঠিক করে নিজেদের খবর জোটাতে পারছেন না, এই কঠিন সময়ে তাঁদের দিকে হাত না বাড়িয়ে দিয়ে সরকার টাকা ঢালছে পূজা কমিটির ক্লাব গুলির উপরে। যদি টাকা দিতেই হয় তাহলে সকল পক্ষকেই দেওয়া উচিত বলে মত অনেকেরই। এমন অর্থনৈতিক সঙ্কটে সরকারকে দাঁড়াতে হবে দুপক্ষেরই পাশে, আর এ কথা সাধারণ মানুষেরই। পূজা কমিটি গুলিকে টাকা দেওয়া যতটা প্রয়োজনীয় ঠিক ততটাই বরং বলা ভালো তার থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই ঠিক কর্মীদের দাবি গুলির দিকে নজর দেওয়া এবং সেই নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।