Live TV: অম্বুবাচী কামাখ্যা মন্দির থেকে : Opinion Times
মতামত জানান , আপনার অভিজ্ঞতায় কামাখ্যা মন্দিরে পূজা সম্পর্খে লক্ষ্য মানুষের ভিড় , সমগ্র মন্দির ঘুরছেন হাত জড় করে , মনের আশা আখাঙ্খা ও কমনা মা কামাখ্যার কাছে জানাচ্ছে
অম্বুবাচী’ একটি কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান। এর অর্থ ধরিত্রীর ঊর্বরাকাল। ৭ থেকে ১১ আষাঢ় (নিরয়ণ পঞ্জিকা মতে) চার দিন গ্রাম-বাংলার মহিলারা এই অনুষ্ঠান পালন করেন। চাষ বাসের কাজ এই সময় বন্ধ থাকে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে পিঠা-পায়েস বানাবার রীতি আছে। এই অনুষ্টানে বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে ব্রত রাখে। অম্বুবাচীর আগের দিন রান্না করা খাবার তারা তিন দিন ধরে খান। ঐ তিন দিন তারা কোন গরম খাবার খান না। এই তিন দিন কামরুপ কামাখ্যায় পূজা হয়। সমস্ত দেবী মন্দির বন্ধ থাকে। কামরুপ কামাহ্মায় মন্দিরের গরভ গৃহ থেকে লাল রং এর তরল (ভক্ত রা বলে মা এর রজস্রাবের রক্ত) বের হয়।
অম্বুবাচীকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতী ও বলে। হিন্দুশাস্ত্রে পৃথিবীকে মা বলা হয়। বেদে ও পৌরানিক যুগে পৃথিবীকে ধরিত্রীমাতা বলা হত। তাহলে দেখা যাচ্ছে পৃথিবী আমাদের মা, কারন সেখানেই শুধু আমাদের কেন ফুল, পাখী, গাছপালা এক কথায় সবাই আমরা পৃথিবীর সন্তান।
মহাজাগতিক ধারায় পৃথিবী যখন সূর্যের মিথুন রাশিস্থ আদ্রানক্ষত্রে অবস্থান করে সেদিন থেকে বর্ষাকাল শুরু ধরা হয়। আমরা জানি মেয়েদের ঋতুকাল বা রজঃস্বলা হয় এবং একজন নারী তারপরই সন্তান ধারনে সক্ষম হয়। ঠিক তেমনি প্রতিবছর অম্বুবাচীর এই তিনদিনকে পৃথিবীর ঋতুকাল ধরা হয়। এর সাথে প্রাচীন কৃষিভিত্তিক উৎসব ব্যবস্থা জড়িয়ে আছে। এই তিন দিন জমিতে চাষ কোন করা হয় না। বর্ষায় সিক্তা পৃথিবী নতুন বছরে নতুন ফসল উত্পাদনের উপযোগী হয় । উর্ব্বরতা কেন্দ্রিক কৃষিধারায় নারী এবং ধরিত্রী সমার্থক বলে গন্য করা হয় । আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী বা বসুমতী মাতা যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন তখন তাকে ঋতুমতী নারী রূপে গন্য করা হয় এবং শুরু হয় অম্বুবাচী, প্রবৃত্তির ঠিক তিন দিন পরে সেটা শেষ হয়, সেটা হল অম্ববুচি নিবৃত্তি। এই নিবৃত্তির পরই প্রাচীন কালে জমি চাষ করত কৃষকেরা। এখন ও বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ম রক্ষা হয় । ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে এটা রজোউত্সব নামে ও পালিত হয়। আসামের কামরুপে কামাখ্যা দেবীর মন্দির এই তিনদিন বন্ধ থাকে। আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ঋতুকালে মেয়েরা অশুচী থাকে। একই ভাবে পৃথিবী এই অম্বুবাচী বা অমাবতীর তিন দিন অশুচী থাকে বলে চিন্তা করা হয়। এ সময় ব্রহ্মচারী, সাধু-সন্নাসী , যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলা এরা কেউই অশুচি পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না কিছু খান না । বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে থাকেন এই তিন দিন। যাই হোক এটা ধর্মের একটা লৌকিক আচার। প্রতি বছর আষাঢ় এর ৭ তারিখে এটা শুরু হয় এবং ১০ তারিখে শেষ হয়।