পরিষেবা শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত হল ট্রেন চালু করার ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ বা এসওপি
দীর্ঘপ্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে কাল, শুরু হচ্ছে লোকাল

পল্লবী কুন্ডু : নিরাপত্তার করা নজর আরো জোরালো প্রশাসনের। লোকাল ট্রেন (Local Train)পরিষেবা শুরুর আগেই হাওড়া স্টেশনের চিত্র সত্যিই ভাবায়। তবে সতর্কতার যেন কোনো রকম খামতি না থাকে সেদিকেই খেয়াল রেখে অধিক তৎপর রেল-রাজ্য উভয়েই। দীর্ঘ আট মাস পরে চলছে ট্রেন, কাল বুধবার থেকে রাজ্যে শুরু হচ্ছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা। দফায় দফায় বৈঠকের পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় রেল এবং রাজ্যের তরফ থেকে। আর এবার পরিষেবা শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত হল ট্রেন চালু করার ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ বা এসওপি।
রেলকে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি ও আইজি-কে, এবং বিভিন্ন জেলার ম্যাজিস্ট্রেটকে এই এসওপি-র কপি পাঠানো হয়েছে এবং তা মেনে চলতে বলা হয়েছে। এই কপিতেই রেলকে কি কি দায়িত্ব পালন করে চলতে হবে সেই বিষয় গুলিই স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।প্রথমত, প্রতিটি যাত্রী মাস্ক বা ফেস কভার যাতে পরে থাকেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জনস্বাস্থ্যর কথা মাথায় রেখেই সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ট্রেন চালাতে হবে রেলকে। তৃতীয়ত, ট্রেন চলাচলে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে রেলের উচ্চস্তরের তরফে কো-অর্ডিনেট করতে হবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে। চতুর্থত, ট্রেনের প্রতিটি কোচ ১০০ শতাংশ স্যানিটাইজ করতে হবে প্রতিদিন। পঞ্চম যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো, স্টেশনগুলির এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট চিহ্নিত করতে হবে। প্রয়োজনে কিছু অংশ ব্লক করে দিতে হবে। আরপিএফ এবং জিআরপি-কে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে যাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।
ষষ্ঠত, টিকিট পরীক্ষা করার জন্য সব স্টেশনে কর্মী থাকবেন। ভিড় এড়ানোর জন্য রেল অন্য কোনও পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারে। সপ্তমত, যাত্রার দুদিন আগে কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করতে পারে রেল। অস্তমিত, ট্রেনের টয়লেট নিয়মানুসারে সময় মেনে পরিষ্কার ও স্যানিটাইজ করতে হবে। সমস্ত স্টেশনের টয়লেটে সাবানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। রাখতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইাজারও। নবমত, প্ল্যাটফর্মগুলি নিয়মিত পরিষ্কার ও স্যানিটাইজ করতে হবে। ব্যবস্থা রাখতে হবে আইসোলেশনের, যাতে কারও সিম্পটম দেখা গেলে তাঁকে সেখানে রেখে ডাক্তারের কাছে পাঠানো যায়। দশম বিষয় হলো, ট্রেনের নতুন টাইমটেবিল সব জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, সোশ্যাল- সমস্ত মিডিয়ায় পাবলিশ করতে হবে ট্রেন সার্ভিসের সময় এবং বিধি।
এছাড়াও যে বিষয় গুলি রয়েছে তা হলো, প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনের টাইম ও অবস্থান জানিয়ে অডিও-ভিস্যুয়াল প্রচার চালাতে হবে। শারীরিক দূরত্ব-সহ অন্যান্য কোভিড বিধি বজায় রাখারও প্রচার করতে হবে। ডিসপ্লে বোর্ডগুলি এমনভাবে রাখতে হবে যাতে সকলে দেখতে পান। ট্রেনে কত যাত্রী উঠবেন, সে বিষয়টিও নির্দিষ্ট করে জানাতে হবে। সামাজিক দূরত্বের সঙ্গে আপস করা যাবে না। যাত্রীরা যাতে লাইন করে দাঁড়াতে পারেন টিকিট কাউন্টারের সামনে বা অন্যত্র, তার জন্য দাগ দিয়ে দিতে হবে। বদ্ধ পরিবেশের যাতে সৃষ্টি না হয় অর্থ্যাৎ সমস্ত জায়গায় যাতে হাওয়া-বাতাস ভালভাবে চলে, তা দেখতে হবে।রেলওয়ের কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে কম মানুষ এবং বেশি প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হবে। ই-টিকিট এবং ডিজিটাল লেনদেনে সকলকে আগ্রহী করতে হবে।
এই তো গেলো রেলের দায়-দায়িত্ব, সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে রাজ্যেরও দায়িত্ব রয়ে যায়। যে বিষয়গুলি রাজ্যের দায়িত্বে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। প্রথমত, রাজ্য সরকারের তরফে আইপিএস অফিসার এবং রেলের ডিজি শ্রী অধীর শ্রমা রেলের সঙ্গে কো-অর্ডিনেট করবেন। জেলাশাসকরা তাঁদের এলাকার সমস্যা জানাবেন অধীরবাবুকে। দ্বিতীয়ত, রেলের তরফে যদিও যথেষ্ট প্রচার চালানো হবে কোভিড-বিধি নিয়ে, তা সত্ত্বেও রাজ্য ব়্যান্ডম থারমাল স্ক্রিনিং চালাবে বিভিন্ন স্টেশনে। এ জন্য জেলাশাসকের তরফে লোক নিয়োগ করা হবে। কোনও যাত্রীর কোনও সিম্পটম মিললে স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম মতো তাঁর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তৃতীয়ত, স্টেশনগুলি থেকে অন্যত্র যাওয়ার সড়ক পরিবহণ পর্যাপ্ত রাখবে রাজ্য। বিশেষ করে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনের মতো বড় এলাকায় এ ব্যবস্থা পোক্ত করা হবে। ভিড় যাতে কম হয়, তা দেখতে হবে।এবং চতুর্থত যে বিষয়টি তা হলো, রাজ্যের তরফে সমস্ত নিরাপত্তা এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে যাতে নিরাপত্তার কোনও অভাব না হয়।
সাধারণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে যেমন লোকাল ট্রেন পরিষেবা শুরু হতে চলেছে, ঠিক তেমনি পরিষেবা শুরু হলে সেক্ষেত্রে রাজ্যবাসী কতটা সুরক্ষিত সে বিষয়টিও দেখছে রেল তথা রাজ্য।