লকডাউনে শিথিলতা, “আগামীতে বিপদ” : বেসরকারি কর্মীদের কি ?
সংস্থা পক্ষ থেকে ফোন কল, হুমকি। নির্দেশ অনুযায়ী না চললেই ইস্তফা।
পল্লবী কুন্ডু : বর্তমান পরিস্থিতি যা এসে দাঁড়িয়েছে তাতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মারাত্মক রকম ঝক্কি পোয়াতে হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা গুলিকে। আর বিষেশতভাবে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি এই মুহূর্তে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা হলো কর্মরত শ্রমিকদের নিয়ে। বর্তমান অর্থিনীতির কু-প্রভাব সরাসরি পড়ছে তাদের ওপর, লকডাউনের ক্ষতি পূরণ কাটিয়ে উঠতে পারছেনা তার মধ্যেই খোয়াতে হচ্ছে কাজ। অন্যদিকে, মুখে রা কাটার ক্ষমতাও তাদের নেই কারণ ইতিমধ্যেই সুপ্রিমকোর্ট জানিয়েছে দিয়েছে যে, কোনো বেসরকারি সংস্থা যদি বেতন না দেয় বা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে কোনো নির্দেশ জারি করে তবে তার পরিপ্রেক্ষিতে কোনোরকম পদক্ষেপ সেই সংস্থার কর্মীরা নিতে পারবেন না। আর এবার এই একই সমস্যার পথে হাঁটছেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা।
সরাসরি কড়া অভিযোগ এবার শহরের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা কগনিজেন্ট-এর দিকে। সেখানে কর্মরত কর্মীরা সংস্থার দিকে আঙ্গুল তুলে অভিযোগ জানাচ্ছে যে, সংস্থা পক্ষ থেকে কর্মীদের ফোন কলে হুমকি দিয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করছে। তাদের অভিযোগ, সংস্থা থেকে জানানো হচ্ছে তিন মাসের প্যাকেজ নিয়ে ইস্তফা দিতে, আর এই কথা মতো না চললেই সোজা বরখাস্ত পত্র উঠে আসবে হাতে। সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে যদি সংস্থার কাছে জবাব চাওয়া হয় তবে তারা রীতিমত এড়িয়ে গেছেন সমস্ত বিষয়। তবে কর্মরত এক কর্মী জানান, ‘আমি যে প্রোজেক্টে ছিলাম সেটা একটা ব্রিটেনের বিমান সংস্থার প্রোজেক্টে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। আমাকে বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর আমি সংস্থার পোর্টালে অন্য প্রোজেক্ট খুঁজি। কিন্তু কোথাও আমার জায়গা হয়নি। এখন আমাকে বলা হচ্ছে আমি প্রোজেক্ট খুঁজে পাইনি।’ ‘আমার কাজ তো প্রোজেক্ট খোঁজা নয়। সংস্থার দায়িত্ব আমায় নির্দিষ্ট প্রোজেক্টে যুক্ত করা।’
এই কর্মী জানান যে, তারপরেই নাকি ম্যানেজমেন্ট পক্ষ থেকে রীতিমত হুমকির শুরে তাকে বলা হয় ওই তিন মাসের প্যাকেজের কথা। আর তাতে রাজি না হলে সরাসরি ইস্তফা। এই অভিযোগ শুধুমাত্র যে এই কর্মীর তা নয়, সংস্থার একাধিক কর্মী এই একই অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন। তারা এটিও জানাচ্ছে যে, যদি আইনি পথেই সমস্ত কিছু করা হয় তবে তাতে সংস্থা পক্ষের ক্ষতিপূরণের মাত্রা অধিক পরিমান বাড়বে আর তাতেই এই পথ অবলম্বন করছে সংস্থা। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীদের সংগঠন ফোরাম ফর আইটি এমপ্লয়িজের কলকাতা চ্যাপ্টারের সভাপতি দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমরা এই অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কর্মীদের বলেছি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। ম্যানেজমেন্টের এই হিটলারি কায়দার কাছে কোনও অবস্থাতেই মাথা নোয়ানো যাবে না।’
তারা জানাচ্ছে, উচ্চমহলে এই বিষয় নিয়ে অভিযোগ তুললেও কোনোরকম সারা মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও এই অভিযোগ তোলা হয়। সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে লেবার কমিশনকেও জানানো হয়েছে। এখন তাদের সিদ্ধান্তের উপরেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা কর্মী মহল। তবে এই মুহূর্তে যে বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে প্রশ্ন উঠছে তা হলো, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যদি এই ভাবে কর্মী ছাটাইয়ের কাজে উঠে পড়ে লাগে সংস্থাগুলি তাহলে এই পরিস্থিতিতে তারা কি করবে ? তাদেরও পরিবার রয়েছে ! অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে একটি পোর্টাল খোলা হয়েছে যার নাম কর্মভূমি। মূলত তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের জন্যই এই পোর্টাল। দেখা যাক এই মুহূর্তে ঠিক কতটা কার্যকরী হতে পারে। তবে ইতিমধ্যেই এই বিষয় নিয়ে ঘুম কেড়েছে কর্মীদের।