Uncategorized

সাংবাদিক সম্বন্ধে কুরুচিকর মন্তব্যের জন্যে বয়কটের মুখে সাংসদ মহুয়া মিত্র

ভোটের মুখে বেকায়দায় তৃণমূল, সাংসদ মহুয়া মিত্রকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নিন্দার ঝড়

দেবশ্রী কয়াল : সংবাদ মাধ্যমকে (News Media) গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। তার মর্যাদা আলাদা। কিন্তু সেই সম্মানজনক এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ পেশাতে যারা কাজ করেন তাদের প্রতি আঘাত হানলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মিত্র (Mahua Moitra)। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে একজন সাংবাদিকের পেশাগত সংগ্রাম ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু সেই পেশার উপরেই নিম্নমানের কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন, কৃষ্ণনগরের সাংসদ ও নদিয়া জেলা তৃণমূলের (TMC)সভানেত্রী মহুয়া মিত্র। যার জেরে তার বিরুদ্ধে মানুষ জানিয়েছেন তীব্র নিন্দা। সংবাদমাধ্যমকে “২ পয়সার প্রেস” এর আখ্যা দিয়েছেন এই তথাকথিত শিক্ষিত তৃণমূল নেত্রী। বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে তার নিজের দলের কর্মীরাও এই ঘটনাটা জানিয়েছেন তীব্র নিন্দা। বলেছেন তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্যে।

মহুয়া মিত্রের এমন কুরুচিকর মন্তব্য কখনই মেনে নেওয়ার ছিল না। তার পাল্টা জবাব দিতে ছাড়েনি প্লেস ক্লাব (Press Club)কলকাতা। তাই ঘটনার একদিন পরেই গতকাল সোমবার প্রেস ক্লাবের তরফ থেকে দেওয়া হয় একটি বিবৃতি। যেখানে বলা হয়, ” কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র সাংবাদিকদের সম্বন্ধে যে মন্তব্য করেছেন তাতে প্রেস ক্লাব, কলকাতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং তীব্র প্রতিবাদ করছে। তাঁর এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত, অপমানজনক।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাংবাদিকতার গুরুত্ব এবং এই পেশার সম্মান সর্বজনবিদিত। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে একজন সাংবাদিকের পেশাগত সংগ্রাম ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি রয়েছে।
সেই মহান কাজের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকদের আঘাত করার কোন অধিকার কারও নেই। ধিক্কার জানাই সাংসদের মন্তব্যে।
আশা করি, সাংসদ তাঁর এই মন্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করবেন।”

এই মুহূর্তে মহুয়া মিত্র কৃষ্ণনগরের সাংসদ ও নদিয়া জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী। ১৭তম লোকসভায় ২০১৯ সালে তিনি কৃষ্ণনগরে ভোটে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন। রাজনীতির ময়দানে নামার আগে তিনি একজন ব্যাংকার হিসাবে কর্মরতা ছিলেন নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনে । কিন্তু ২০০৯ সালে নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদকে ছেড়ে রাজনৈতিক জগতে নিজের নাম লেখান। এরপর তিনি যোগদান করেন ন্যাশনাল কংগ্রেস (Indian National Conggress) পার্টিতে। যেখানে রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi)হাত ধরে, “আম আদমি কে সিপাহী” র প্রজেক্ট করেন। তবে সেখানেই ছিল তার শেষ। এরপর তিনি যোগদান করেন অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসে। তারপর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের (AITC)একজন রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নাদিয়া জেলার করিমপুর (বিধানসভা এলাকা) প্রতিনিধিত্ব করেন।

কিন্তু লোকসভাতে জয়লাভ করার পরেই আসন বিধানসভার ভোটের আগেই সুর বদলাতে দেখা যায় মহুয়া মিত্রের। যার প্রমান গত কয়েকদিনের ঘটনা। সংবাদ মাধ্যম এর পেশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,মর্যাদাময় ও চ্যালেঞ্জের। কিন্তু সেই সংবাদ মাধ্যমকে দু দিন নানাভাবে আক্রমন করেন এবং বলেন অনভিপ্রেত, নিন্দনীয়, কুরুচিকর মন্তব্য। এই ঘটনার সূত্রপাত, কয়েকদিন আগের। এবং আর একটি গত রবিবারের। চাকদার ঘটনার একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, কর্মিসভার মঞ্চ থেকে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি মহুয়া মিত্র বার্তা দিতে গিয়ে বলছেন, ‘‌আপনারা মোবাইল সরিয়ে রাখবেন। এটা ভিডিয়ো রেকর্ডিং বা ছবি তোলার ব্যাপার নয়।’‌ ঠিক সেই সময় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধিকে ভিডিও রেকর্ড করতে দেখে তাঁকে মহুয়ার সটান প্রশ্ন, ‘এখানে প্রেসের ঢোকার কোনও অনুমতিই নেই। আপনাকে এখানে ঢুকতে কে দিল?’

আর এর পরের ঘটনা গত রবিবারের, হরিণঘাটার। রবিবার গয়েশপুরে করিমপুর ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মিসভা ছিল। সেখানে সংবাদমাধ্যমকে ‘দু’‌পয়সার প্রেস’ বলে আক্রমণ করে বসেন সাংসদ মহুয়া। ভিডিওতে মহুয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘‌কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে?‌ সরাও প্রেসকে এখান থেকে। কেন দলের মিটিংয়ে প্রেস ডাকো তোমরা?‌ কর্মী বৈঠক হচ্ছে আর সবাই টিভিতে মুখ দেখাতে ব্যস্ত। আমি দলের সভানেত্রী, আমি আপনাদের নির্দেশ দিচ্ছি, প্রেসকে সরান।’ পরে এ ব্যাপারে মহুয়ার প্রতিক্রিয়া, ‘‌ছেড়ে দাও ভাই।’‌ তিনি ভাবেন কেবল এই কথা বলেই হয়ত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কে তিনি এড়িয়ে যাবেন এবং কোনো সমালোচনার মুখে পড়বেন না। কিন্তু এই বিষয় এখানেই ছেড়ে দেওয়ার নয়। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে এই মন্তব্যের সমালোচনা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandyapadhay)এর এতদূর এগিয়ে আসাতেও একটা বিরাট বড় ভূমিকা পালন করেছে সংবাদ মাধ্যম। তার কাজ ও সমালোচনা দুটোই সবসময় সংবাদ মাধ্যম করে গেছে। পূর্বে সংবাদ মাধ্যমের কৃতজ্ঞতা মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করলেও আজ যখন তাঁর দলেরই অন্যতম সভানেত্রী সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে এমন নিন্দাজনক, কুরুচিকর মন্তব্য করে তখন কিন্তু চুপ হয়ে রয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। মহুয়া মিত্রকে বা তার বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। আজ রানিগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ছিল, সকল সংবাদ মাধ্যমের আশা করেছিল আজ হয়ত মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন কিন্তু না তা হয়না। রবিবার মহুয়া মিত্রের করা এই মন্তব্য আজ সকল সাংবাদিককদের করেছে একযোগে। তারা সবাই আজ মহুয়া মিত্রের বিরুদ্ধে তো বটেই, অনেকটা দলের বিরুদ্ধেও। মহুয়া মিত্রের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের পাল্টা আক্রমন জানিয়েছেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর (Snehashish Sur)। দিয়েছেন সরকারি বিবৃতি।

অবশ্য মহুয়া মিত্রের এই মন্তব্যে তার দলের কেউই কিন্তু সরাসরি তাকে কিছুই বলছে না। সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন এটা নাকি মহুয়ার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত তাতে দলের বলার কিছু নেই। তাঁর দলের বেশিরভাগ কর্মীরা বলেছেন কোনো পেশাকে অসম্মান করা উচিত নয়। সাংবাদিকরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কিন্তু কেউই এখনও মহুয়া মিত্র নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

মমতা ঘনিষ্ঠ সাংসদ মহুয়া মিত্রের বক্তব্য সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ কোনো কথা উচ্চারণ করেননি অথবা দলের মহাসচিব ও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য সেইভাবে করেননি। যার ফলে মহুয়া মিত্রের ক্ষমা চাওয়া বা দল তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগে এখনও পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দ্রুততার সঙ্গে মহুয়া মিত্র সংবাদ মাধ্যমের কাছে ক্ষমা না চাইলে সংবাদ মাধ্যম এর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এর সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়বে। ওপিনিয়ন টাইমস (Opinion Times) এর পক্ষ থেকেও সাংসদ মহুয়া মিত্রের এমন কুরুচিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে ক্ষমা চাইছেন ততক্ষন মহুয়া মিত্র সম্পর্কে কোনো আগামী রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে না। অর্থায় বয়কট করা হচ্ছে মুহুয়া মিত্রকে।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button
%d bloggers like this: