” তোমার তুলনা তুমি নিজে ” স্মরণে সুভাষ ভৌমিক তোমাকে প্রণাম
"স্মৃতিতে থেকে যাবে আমাদের প্রিয় সুভাষ বাবু" স্মৃতিচারণে তার জীবনী

তিয়াসা মিত্র : “ফুটবল” শব্দটি বাঙালির কাছে ভালোবাসার থেকেও বেশি আবেগের জায়গা অধিকার করেছে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে ফুটবল আমাদের বাঙালির রক্তে রক্তে ছড়িয়েছে আগুনের গোলার মতন। কতই না ইতিহাস রয়েছে এর সাথে ,এসব লিখতে গেলে একটি আলাদা লেখনীর পথ ধরতে হবে। তবে এই আবেগকে নিজের মতন করে ভালোবেসে যেই মানুষটি মাঠের যুদ্ধে জিতে গেছে বার বার আজ তাকেই হারালো ময়দান তথা ফুটবল প্রেমীরা। ” সুভাষ ভৌমিক ” নামটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে কত বছরের কত জেতার কাহিনী।

১৯৫০ সালে মালদাতে জম্ন হয়ে ওনার , ছোট থেকেই আর পাঁচজন সাধারক খেলোয়াড়ের মতন তার ফুটবল পথ শুরু হয় তবে , তিনি ছিলেন লম্বা রেসের ঘোড়া তাই তার আসল ফুটবল জার্নি শুরু ১৯৬৯ সালে প্রথম ঐতিহাসিক দল ইস্টবেঙ্গলে পা রেখে, সেটি যেন ছিল তার কাছে মাইলস্টোনের মতন। তারপর পর পর গোল পোস্ট পার করেছে সুভাষ বাবুর স্পাইক পরা পা। সাল ১৯৭০ মোহনবাগানের হয়ে খেলা শুরু করেন এবং নিজেকে আবারো প্রমান করেন আসল ফুটবল অনুগত রূপে। তবে ১৯৭৬ এ ফিরে আসেন মোহনবাগানে। এই সবের মাঝে ইতিহাস সৃষ্টি করার মতন প্রতিভা প্রদর্শন করেন কলকাতা আই.এফ.এ শীল্ডে ডার্বি ম্যাচে, যেখানে পরনে লাল হলুদ জার্সি তুলে সবুজ মেরুনকে ঘোল খাইয়ে ৫-০ গোলে হারায়। এরই সাথে ১৯৭০ সালে ভারতের হয়েও নিজেকে প্রমান করেন তিনি যেখানে ইন্ডিয়ান ফুটবল এশিয়ান গেমস-এ ব্রোন্জ পায়ে ভারত।
তার জীবনের পরবর্তী ধাপে তিনি কোচ হিসাবে নিজের ক্রাউন-এ যুক্ত করে আরেকটি পালক কোচ হিসাবে। ১৯৯৯-২০০০ সাল এবং ২০০২-২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ইস্টবেঙ্গলকে জেতার রাস্তা দেখিয়ে এসেছে। ২০০৩ সালে এশিয়ান কাপে ইস্টবেঙ্গল নিজেদের অন্য ভাবে পরিচয় করে সবার সামনে এবং সেই শোয়ে পার্থসারথি ছিলেন আমাদের প্রিয় এবং শিষ্যদের কাছে “পাপা দা” প্রায় সব ফুটবলারের কাছেই তিনি ছিলেন ‘পিতৃসম’। বকতেন, কথা শোনাতেন, কিন্তু প্রয়োজনের সময়ে তাঁদের বুকে জড়িয়েও ধরতেন। বকলমে এটাই ছিলেন কোচ সুভাষ ভৌমিক। শনিবার তাঁর প্রয়াণে স্বাভাবিক ভাবেই অ্যালভিটো ডি’কুনহা, রহিম নবি, সুনীল ছেত্রীরা প্রিয়জনকে হারালেন। একজন কোচ হিসাবে তার প্রথম লক্ষ্য ছিল প্রতিটি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে সেরাটা আদায়ে করার।

যে পথে তিনি হেঁটেছে সেই পথের পথিক আজ অনেকে, তাকে নিজেদের আইডল ভেবে নিজেদের খেলার মাঠের যুদ্ধে প্রস্তুত করা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অনেকের লক্ষ্য। পাকা জহুরির মতোই ময়দান থেকে প্রতিভা তুলে আনতে তাঁর কোনও বিকল্প ছিল না। সৈয়দ রহিম নবিই যেমন। ফুটবল জীবনের শুরুতে স্ট্রাইকার হিসাবে খেলতেন নবি। সেখান থেকে আক্রমণাত্মক উইং-ব্যাক হিসাবে নবিকে তৈরি করেন সুভাষ। সেই পজিশনে খেলেই জীবনের সোনালি সময় কাটিয়েছেন নবি। জাতীয় দলেও এই পজিশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ছিলেন। খেলার মাঠ এবং সেই জায়গার রাজনীতি দুই ওতপ্রোতভাবে জড়িত তবে সবের ওপরে গিয়ে তিনি তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিষ্ঠা এবং খেলাকে ভালোবাসা এই দুইকে তিনি দিয়েছেন বরাবর প্রাধান্য। ময়দানের বটগাছটি যেন কেউ কেটে দিলো, সত্যি জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেনা আমাদের প্রিয় ” সুভাষ গাঙ্গুলী”.
