বিশ্বাস ভাঙছে মানুষের , দলে বাড়ছে ক্ষোভ। রাজনীতি আজ বেশ মুনাফার দুর্নীতি
নিয়োগ দুর্নীতির জন্য জন-প্রতিনিধি দের থেকে অনেকেই দূরত্ব বজায় রাখছে। এতদিন যারা মঞ্চে সেভাবে সন্মান পেতেন না, বেজায় খুশি অনেকেই যারা যোগ্য কিন্তু তালিকার বাইরে ।

নিজস্ব সংবাদদাতা : শহর জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে বড় অংশের নেতারা দূরত্ব বজায় রাখছেন জন প্রতিনিধিদের থেকে। এমনিতে ২০১২ থেকে দলের মধ্যে এক কোনে পরে থেকেছেন যোগ্য ও ভরসা যজ্ঞ মুখেরা। যারা জন প্রতিনিধির ছাড়পত্র পেয়েছেন তারা কোনো মতেই গুরুত্ব দিতে নারাজ সংগঠকদের। নৈতিকতা ও কাজের ফারাক অনেকদিন ধরেই , কিন্তু সেভাবে কেউ-ই কথা শোনেন নি। ২০১৬ সালে মমতা ব্যানার্জী তৃণমূলের সুপ্রিমো যাই বলুন ” যে দলের পুরোনোদের সম্মান দিয়ে দল চালাতে হবে। ক্ষোভ এখানেই যে , দলের বিভিন্ন কমিটিতে পদের তালিকায় নাম থাকলেও এক তরফ নিয়ন্ত্রণ আছে অঞ্চলের জন প্রতিনিধিদের কাছে।
কলকাতা উত্তরের এক নেতা কথায় ক্ষোভ ঝরে পড়লো , তিনি জানান যে , আমরা প্রথমে কংগ্রেস তারপর তৃণমূলে। বাবা ছিলেন স্বদেশী নেতা , আজ আমার ৭২ হলো। কেউ বলতে পারেনা আজ যে আমি কোনো সুবিধে নিয়েছি , কিন্তু আজকে যারা জন প্রতিনিধি তারা না বললে কোনো কিছু-ই করা যাবে না। আজকের দিনে একটা ছোট মিটিং করলেও কম পক্ষে ৮০ হাজার থেকে ১লক্ষ ২০ হাজার খরচা হয়। কে দেয় এই টাকার যোগান। আমরা তো কোনো চাঁদা তুলি না , তাহলে এর উৎস্য কোথায়। দলের মাথা কখনও জানতে চায় নি , তার ফলেই আজ এই লজ্জার মুখে আমরা সকলেই।
দক্ষিণ কলকাতার এক প্রবীননেতা বললেন , আমি একবার ভোট দাঁড়িয়েছিলাম কিন্তু হেরে গেছি। সেই সময় আমি কিছু বন্ধুদের থেকে সাহায্য নিয়েছি আর নিজের থেকে খরচ করেছি কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেন তৃণমূল দল এর সংঘঠনটাই তৈরি হয়নি। এই দল হচ্ছে পদসর্বস্ব। আপনার জনপ্রতিনিধি হলেই মিলবে মান , আর আজ যে মানের জন্য আমরা সকলে মিলে লজ্জার সামনে দাঁড়িয়ে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি হয়নি , নিজেকে এই অবস্থান থেকে যত তাড়াতাড়ি সরিয়ে নেওয়া যায় ততই ভালো। যেহেতু দল এখন সরকারে আছে তাই কেও ডিল ছুড়ে মারছে না , কিন্তু যে দিন ক্ষমতা থেকে চলে যাবে সেদিন এই কান্ডটাই হবে।
SSC/TET অবস্থানে দাঁড়িয়ে গতকাল অফিস ফেরত ৫০ উর্ধ মানিকতলার বাসিন্দা দীনেশ মন্ডল বললেন , আজকের নেতাদের দেখলে ধান্দাবাজ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। বড় বাড়ি ঠান্ডা গাড়ি কোথা থেকে আসে বলুন তো ? আমি তো এখন যে পদে কাজ করি তাতে কেটে কুটে মাসে প্রায় ৯০ হাজার রোজগার করি। কিন্তু এই রকম তো করতে পারি নি। হ্যা আমার বাড়ি আছে , একটা মারুতি গাড়ি আছে , ছেলে মেয়ে ইংরিজি মাধ্যমে পড়েছে। বছরে দুবার ঘুরতে যাওয়া হয় , মাসিক সেভিংস আছে। মাসকাবাড়ি রোগের খরচ আছে। কোনটা নগদে কোনটা লোন করা। কিন্তু এরা কিভাবে করেন। প্রত্যেক ছোট নেতার সাদা রঙের স্করপিও থেকে ইনোভা ,আর মাঝারি থেকে বড় দের কথা ছেড়ে দিন। দেখবেন সামনের কাচের ভিতরে বেশ কিছু নানান অনুষ্ঠানের ব্যাচ রাখা থাকে। কারণ ওটাই হচ্ছে পরিচয় যে আমি একজন নেতা। কোনো ব্যবসা নেই নূন্যতম একটা দোকান পর্যন্ত নেই , দেখলেই বোঝা যায় এদের পথ টা সোজা নয়। ভালো লাগে না এদের দেখে।
এই রকম-ই চর্চা রাজ্য জুড়ে , সারদা- নারোদা হবার পর এতটা জনমানসে প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু এবার তা আর হল না। ২০১৬ ও ২০২১ সালে ভোটার প্রচারে মাননীয় মমতা ব্যানার্জী মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন দির্নীতির কারণে , তিনি বলেন যে আমাকে দেখে ভোট টা দেবেন। কিন্তু এবার কি বলবেন মাননীয়া ?