কতটা সত্যি বাবা রামদেবের করোনিল ?
করোনিল সেবন করলে নাকি দূর হবে করোনা, তবে এবারে পালা প্রমান করার
দেবশ্রী কয়াল : করোনিল কী আদেও সুরক্ষিত ? এই নিয়ে উঠছে বারবার প্রশ্ন। উঠেছে বিতর্কের ঝড়ও। চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবারই লঞ্চ হয় পতঞ্জলির করোনিল। বাবা রামদেব বলেন, এই ঔষধেই সেরে যাবে করোনা। অর্থাৎ করোনার প্রতিষেধক তিনি বলেছেন এই করোনিলকে। এই ঔষধের সাফল্যর হার নাকি ১০০ শতাংশ। এই সময় অপরদিকে বুধবারই উত্তরাখণ্ডের আয়ুষ দফতর স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, পতঞ্জলিকে যে ড্রাগ লাইলেন্স ইস্যু করা হয়েছিল, তা করোনার ওষুধ বানানোর লাইসেন্স নয়, জ্বরের ওষুধ ও ইম্যুনিটি বুস্টার কিট বানানোর লাইসেন্স। সুতরাং এটা কখনোই দাবি করা যায় না তা করোনার প্রতিষেধক।
যতক্ষণ না সব কিছু ঠিক প্রমান হয় ততক্ষন পর্যন্ত ‘করোনিল’কে নিষিদ্ধ করেছে রাজস্থান ও মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সরকারের সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জয়পুরের এনআইএমএস-এ করোনা রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয় পতঞ্জলির ওষুধ। এ ঘটনা প্রকাশ আসার পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়েছে রাজস্থানের স্বাস্থ্য দফতর।
যদিও পতঞ্জলি সংস্থার দাবি, কোনও আইন ভাঙা হয়নি। ওষুধ বানানো ও লঞ্চ… পুরোটাই হয়েছে নিয়ম মেনে। বৃহস্পতিবার পতঞ্জলির মুখপাত্র এস কে তিজারাওয়ালা জানান, ”এই বিষয়ে কোনও ধোঁয়াশার জায়গা নেই। ওষুধের লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল অশ্বগন্ধা, গিলয় ও তুলসীর ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক গুণের উপর ভিত্তি করে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা যায় করোনা সারাতে সক্ষম এই ওষুধটি। সম্পূর্ণ বিধিনিয়ম মেনেই এই ট্রায়াল হয় এবং তার রিপোর্ট আমারা পেশ করেছি।”
পতঞ্জলির তরফে আরও দাবি করা হয়, ”সরকারের ধার্য করা নিয়ম মেনেই ওষুধ তৈরি ও বিক্রি হয়েছে। কারও ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা আদর্শের ওপর ভিত্তি করে ওষুধটি বানানো হয়নি। ওষুধের লেবেলের ওপর কোনও অনৈতিক দাবি করা হয়নি। সমস্তরকম নিয়ম মেনেছে পতঞ্জলি।”
যদিও এই বিষয়ে উত্তরাখণ্ডের স্টেট মেডিসিনাল লাইসেন্সিং অথরিটির যুগ্ম ডিরেক্টর ডঃ ওয়াই এস রাওয়াত জানান, ‘দিব্য ফার্মেসি করোনার ওষুধ বানানোর জন্য কিন্তু লাইসেন্সের আবেদন করেনি, তেমন কোনও ড্রাগ লাইসেন্সও তাদের দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র জ্বরের ওষুধ ও ইম্যুনিটি বুস্টার কিট বানানোর লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এখন যখন বিষয়টি আয়ুষ মন্ত্রকের নজরে এসেছে, তখন দিব্য ফার্মেসির বিরুদ্ধে নোটিস জারি হবে। যদি তাঁদের উত্তর সন্তোষজনক না হয়, তবে তাদের সমস্ত বর্তমান লাইসেন্স বাতিল করা হবে, বলেই জানা যাচ্ছে।”
তবে বাবা রামদেবের দাবি, হরিদ্বারের পতঞ্জলি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও জয়পুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স-এর যৌথ উদ্যোগেই নাকি তৈরি হয়েছে এই করোনিল ঔষধ। এটাই প্রথম আবিষ্কৃত করোনার ওষুধ। গুলঞ্চ, তুলসী ও অশ্বগন্ধার মিশ্রণে তৈরি হয়েছে করোনিল।তিনি আরও দাবি করে বলেন, ৩ দিনে ৬৯ শতাংশ করোনা আক্রান্ত সেরে উঠতে থাকে, ৭ দিনের মধ্যে ১০০ শতাংশ করোনা আক্তান্তের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এই ঔষধ প্রয়োগে একজন করোনা আক্রান্তেরও মৃত্যু হয়নি। দেখা দেয়নি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও।
বর্তমানে দুই পক্ষই জানাচ্ছে তাদের দাবি। তবে যতক্ষণ না সঠিক প্রমান হবে সকল তথ্য, ততদিন এই ঔষধের প্রাপয়গ আইনত অপরাধ। এই ঔষধের উপরে বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান সরকার।