হাসপাতালের বেড থেকে পরে মায়ের কোলে টানা চার ঘণ্টা পর মৃত্যু হলো কিশোরীর
কিশোরীর বাবার অভিযোগ, 'আমার মেয়েটাকে ওরা চিকিত্সা না দিয়েই মেরে ফেলল'।

পল্লবী কুন্ডু : ফের রোগীদের প্রতি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলো নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল। আরো এক মর্মান্তিক ঘটনার সম্মুখীন রইলো শহরবাসী।সোদপুরের মহিষপোতার বাসিন্দা ওই কিশোরী ফাল্গুনী দেবনাথ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল। সোমবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভরতি করা হয় সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোরীকে। ফাল্গুনীর মা তার মেয়ের সাথে ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাতটা নাগাদ মা বাথরুমে যান। সেখান থেকেই মেয়ের চিত্কার শুনতে পান। সাথে সাথে দৌড়ে এসে দেখেন মেয়ে বেড থেকে মেঝেতে পড়ে গিয়েছে।
তবে তারপরেই চিৎকার শুনতে পেয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে শত ডাকাডাকিতেও আসেননি একজনও চিকিত্সক। টানা চার ঘণ্টা পর মায়ের কোলেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর।কীভাবে চিকিত্সাধীন একটি মেয়ে বেড থেকে পড়ে গেল, কেন সে সময় আশপাশে কোনও নার্স ছিলেন না, উঠছে প্রশ্ন।কিশোরীর বাবার অভিযোগ, ‘আমার মেয়েটাকে ওরা চিকিত্সা না দিয়েই মেরে ফেলল। মেয়ে পড়ে যাওয়ার পর আমি দৌড়ে ডাক্তারবাবুকে ডাকতে যাই।উনি জানান রাউন্ডে আছি, পরে আসছি। কিন্তু তিন ঘণ্টা মেয়েটা পড়ে থাকলেও কেউ আসেনি।’
অন্যদিকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের সুপার ডা. করবী বড়াল জানিয়েছেন, মৃতের পরিবার লিখিত অভিযোগ করলে নিশ্চয়ই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।যদিও চিকিত্সায় গাফিলতির সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফাল্গুনীর ওয়ার্ডের চিকিত্সক। তাঁদের পাল্টা দাবি, রক্তের ক্যানসারে ভুগছিল মেয়েটি। হাসপাতালে ভরতি করার সময় থেকেই সে সংকটজনক ছিল। সোমবারই পরিবারকে বলা হয়েছিল দুই ইউনিট রক্ত লাগবে। কিন্তু তাঁরা সে রক্ত জোগাড় করেননি। মঙ্গলবার ফাল্গুনী বেড থেকে পড়ে যাওয়ার পর লগবুকে সিটি স্ক্যানের উল্লেখ করে দেওয়া হয়। মাথার কোথায় চোট লেগেছে তা সিটি স্ক্যান না করলে জানা অসম্ভব। ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা চিকিত্সকের দাবি, ফাল্গুনীকে কোলে নিয়েই বসেছিলেন মা। সিটি স্ক্যান করাতেও যাননি।
কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভম নয় যে তার মেয়ের কি হয়েছে বা তৎক্ষণাৎ কি করণীয়। যেখানে তারা হাসপাতালের অধীনেই রয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, কেন গুরুত্ব বুঝে কিশোরীকে নিয়ে গেলেন না নার্সরা।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি কিছুটা দায়িত্বজ্ঞান বোধ যুক্ত হতেন তাহলে হয়তো এই অঘটনটি এড়ানো সম্ভব হতো।