Education Opinion

২০২১ এর মাধ্যমিকের সিলেবাসে কোপ, ছাঁটাই হল সিলেবাসের ৩০-৩৫ শতাংশ

সিলেবাস কমলে ক্ষতি হবে পড়ুয়াদেরই, মন্তব্য সৌগত বসুর

দেবশ্রী কয়াল : বর্তমান করোনা (Corona Virus) পরিস্থিতির জেরে, শিক্ষাক্ষেত্রে পড়েছে ব্যাপক প্রভাব। এখনও অনিশ্চিত রয়েছে ২০২১ সালের মাধ্যমিক (Madhyamik Exam) ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা (Higher Secondary Exam)। কিভাবে হবে বা কবে হবে সেই নিয়ে এখনও চলছে আলোচনা। পূর্বেই জানানো হয়েছিল সিলেবাসের (Syllabus) উপর পড়বে কোপ। যেহেতু ক্লাস এখন অনলাইনে হচ্ছে, সেইভাবেই স্কুল থেকে পড়ুয়াদের প্রস্তুত করা যাচ্ছে না, তেমন কঠিন বিষয়ে পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আর তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শিক্ষা পর্ষদ থেকে। এই সিলেবাস কমানোর বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের কী মতামত তা জানতে আমরা যোগাযোগ করি পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর (Saugata Basu) সাথে।

সৌগত বসু জানান, “মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২১ -এর জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এবং পর্ষদের দাবি অনুযায়ী ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সিলেবাস কমানো হয়েছে। যদিও আমরা এখনো জানি না মাধ্যমিক ২০২১ পরীক্ষা কখন হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা অন্যান্য বছর প্রায় এক বছর আগে থেকে পরীক্ষার দিন জানতে পেরে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পায়, এবছর কোভিড অতিমারি পরিস্থিতিতে যখন বিদ্যায়তন-এ গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ -এর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে ক্লাস করা গেল না সেখানে এমনিতেই তারা যথেষ্ট অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় নভেম্বর মাসের শেষে এসে সিলেবাস কমানোর যে ঘোষণা করা হলো তাতে ছাত্র-ছাত্রীদের লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হবে। এই ঘোষণা বিভিন্ন বোর্ডের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বহু আগে করা বাঞ্ছনীয় ছিল।

দ্বিতীয়তঃ বিভিন্ন বিষয়ের সিলেবাস যেভাবে কমানো হয়েছে তাতে করে সিলেবাস -এর অন্যান্য অংশের উপর অতিরিক্ত প্রশ্নের ভার চাপবে। যতক্ষণ না পর্ষদের পক্ষ থেকে প্রশ্নের ব্লু প্রিন্ট প্রকাশ করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা বাড়তেই থাকবে।

তৃতীয়ত যেহেতু টেস্ট পরীক্ষা হবে না অতএব টেস্ট পরীক্ষা পরবর্তী টেস্ট পেপার থেকে অভ্যাস করার কোনো সুযোগ ছাত্রছাত্রীরা পাচ্ছে না, ফলে প্রশ্নের ব্লুপ্রিন্ট সামনে রেখে কিছু মডেল প্রশ্নপত্র পর্ষদের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা একান্ত জরুরী। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জোরালো ভাবে এই দাবি আমরা তুলছি।

বিভিন্ন বিষয়ে সিলেবাসে যেভাবে অংশগুলো বাদ দেয়া হয়েছে তাতে করে তাতে তাতে করে কতটা শিক্ষাবিজ্ঞান অনুসরণ করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভাবে কাজটি করা হয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে।বিভিন্ন বিষয়ের সিলেবাসের বেশ কিছু অংশ যেভাবে একেবারে বাদ দেয়া হয়েছে তার ফলে মাধ্যমিক পরীক্ষা (যা বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করে) তার উপযোগিতা হারাবে বলে মনে হয়। “

শিক্ষক সৌগত বসুর মতে সিলেবাস কমে যাওয়া মানেই পড়ুয়াদের আরও বেশি করে ক্ষতি হয়ে যাওয়া। এই বিষয়ে আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করি কী কী বা কত রকমের ক্ষতি হতে পারে পড়ুয়াদের। তখন তিনি প্রত্যেকটি বিষয়ে বলেন সংক্ষেপে। দেখে নেব বিষয় গুলি আমরা এক নজরে :

ভৌত বিজ্ঞান : সিলেবাসে জৈব রসায়ন, ধাতুবিদ্যা এবং অজৈব রসায়ন এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দেয়া হয়েছে। যারা আগামী দিনে উচ্চমাধ্যমিক এবং অন্য স্তরে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করবে তারা অসুবিধায় পড়বে।

জীবন বিজ্ঞান : অভিব্যক্তি ও অভিযোজন এবং পরিবেশ অধ্যায় সম্পূর্ণ বাদ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর সামগ্রিকভাবে বেড়ে ওঠার সঙ্গে এই দুটি অধ্যায় অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পৃক্ত। ফলে এই অজানা অংশ কখনোই তারা শেখার সুযোগ পাবে না।

ইতিহাস: ইতিহাসের ষষ্ঠ সপ্তম অষ্টম অধ্যায় সম্পূর্ণ বাদ দেয়া হয়েছে। এই অধ্যায়গুলি গুলির কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেখে অন্যান্য অধ্যায় থেকে কিছু কিছু করে অংশ বাদ দিলে সামগ্রিকভাবে ইতিহাস সম্পর্কে এবং বিশ শতকের বিভিন্ন আন্দোলন সম্পর্কে জানার সুযোগ থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হল।

ভূগোল : প্রাকৃতিক ভূগোলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ হয়ে গেছে ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের আগামীদিনে ভূগোল নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হবে। এছাড়া আঞ্চলিক ভূগোল এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রশ্নের চাপ পড়ার ফলে সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক এবং আঞ্চলিক ভূগোলের প্রশ্নের সমতা লঙ্ঘিতে হবে।

গণিত : গণিতের সিলেবাসে ত্রিকোণমিতি অংশ বাদ পড়ায় আগামী দিনে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়বে।

English : In English, grammar and writing skills are appended at the end of each chapter. Does the WBBSE ensure that questions in Grammar and Wring will remain restricted within the 5 prescribed chapters for MP 2021 ? Further clarification is needed in this regarded.

অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতির জেরে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে প্রকোপ পড়েছে তা আগামী দিনে পড়ুয়াদের জন্যে আরও সমস্যা তৈরী করে তুলবে। ভবিষ্যতের পড়াশোনাতে এই বাদ চলে যাওয়া সিলেবাসের অংশ গুলি একটা খামতি হয়েই রয়ে যাবে।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button
%d bloggers like this: