মেডিকেল পড়তে গিয়ে বিক্রি হয়েছে এক মাত্র সম্বল “জমি”, তবে এখন যুদ্ধে অনিশ্চিত এমবি বি এস ডিগ্রী ! ভবিষতের চিন্তাতে সাহিল
এরকম শত শত সাহিলের জীবনের অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে তাদের এবং তাদের পরিবারকে
তিয়াসা মিত্র : কতবেল থেকে পড়া শোনাতে ভালো সাহিল, তাই বাবা মায়ের সামর্থ না থাকলেও ছেলেকে ডাক্তার হতে দেখার আশাতে বিক্রি করেছিল নিজেদের জমি। তারপর ইউক্রেন পারি দেয় সেই ছাত্র। ছ’বছরের পাঠক্রমের খরচ ২৮ লক্ষ টাকা। দু’বছরে ইতিমধ্যেই ১৮ লক্ষ টাকা লেগে গিয়েছে। এর বাইরে দৈনন্দিন খরচ তো আছেই। কিন্তু কে জানত যুদ্ধ বাধবে। যে দিন বোমা পড়া শুরু হল, কলকাতার বাসিন্দা ছাত্রটি সুদূর কিভে বসে প্রমাদ গুনেছিলেন অন্য সঙ্কটের। কবে ক্লাস আবার শুরু হবে বা আদৌ হবে কি না, এর পরে ইউক্রেনে ফিরে গেলেও যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে সেখানে জীবনযাপনের খরচ কতটা বাড়বে, তা নিয়েই এখন চিন্তিত দক্ষিণদাঁড়ির শাহিল সর্দার ও তাঁর পরিবার।
বহু ঝক্কি সামলে শনিবার শেষ রাতে কলকাতায় পৌঁছেছেন শাহিল। গত দু’বছর ধরে তাঁর ঠিকানা ছিল ইউক্রেনের কিভ। সেই শহরে রাশিয়ার লাগাতার বোমাবর্ষণের ছবি দেখে হতাশ ডাক্তারির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রটি। বাবা শাহজিব সর্দার পেশায় ফলস সিলিং তৈরির কারিগর। পরিবারের বল-ভরসা বড় ছেলে শাহিলই। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছোটবেলা থেকেই। মা আসমা হক সর্দার জানান, পড়াশোনায় ভাল হওয়ায় তাঁরাও ছেলের ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। ইউক্রেনে শাহিলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে উত্তর ২৪ পরগনার গুণরাজপুরে নিজেদের জমিও বিক্রি করে দিয়েছেন আসমা-শাহজিব।
ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে যাঁদের ইন্টার্নশিপ শেষ করা সম্ভব হয়নি, তাঁদের ভারতে তা করার সুযোগ দিয়েছে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন। শুধু ইউক্রেনই নয়, ফিলিপিন্সে পড়তে যাওয়া ডাক্তারি পড়ুয়ারাও করোনার কারণে ভারতে ফিরে এসেছেন। ইন্টার্নশিপের প্রশ্নে তাঁদেরও ভারতে সুযোগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনএমসি। কিন্তু ইউক্রেনে যাঁদের মাঝপথেই ডাক্তারি পড়া থমকে গিয়েছে, তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছে না কমিশন। বর্তমানে ভারতে ডাক্তারিতে আসন রয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার। ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন, এমন প্রায় কুড়ি হাজার পড়ুয়া ভারতে ফিরে এসেছেন। ফলে মোট আসনের এক-চতুর্থাংশ পড়ুয়াকে বর্তমান ব্যবস্থায় যে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়, তা কার্যত মেনে নিয়েছে এনএমসি। এই অবস্থায় যুদ্ধ দ্রুত শেষ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পড়ুয়ারা ফিরে যাবেন, আপাতত সেই আশাতেই রয়েছেন এনএমসি-র কর্তারা।