ওপিনিয়ন পোল : করোনা আবহে এগিয়ে গেলেন সুজন, পিছিয়ে মমতা, দিলীপ ও মান্নান
বিশ্বাসের গোড়া নড়েছে নাকি, মমতা দিলীপের উপর মানুষের ভরসা হারিয়েছে, সুজনে জেগেছে বিশ্বাস

দেবশ্রী কয়াল : বর্তমান দিনে, সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু আমাদের সকলের জীবনে বেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়াতে যেমন এন্টারটেনমেন্ট পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় তথ্য। বিশ্বের নানান প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে যোগাযোগ এখন খুবই সহজ করে তুলেছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। আর সবথেকে বেশি জনপ্রিয় কিন্তু ফেসবুক। এই অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই বন্ধু থেকে অচেনা মানুষ সবার সাথেই যোগাযোগ করা খুবই সহজ সাধ্য হয়ে উঠেছে। তাহলে রাজনীতিবিদরাই বা বাকি থাকে কেন এই ক্ষেত্রে। যাঁরা ময়দানে নেমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, মানুষের স্বার্থে মানুষের জন্যে কাজ করে, তাঁদের ক্ষেত্রে নিজেদের অনুগামীদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখাটা কিন্তু ভীষণ প্রয়োজন। সবসময় কিন্তু মানুষের পক্ষে সভায় গিয়ে বা বসে টিভি দেখার সময় বা সুযোগ হয়ে ওঠে না। কিন্তু ফেসবুকের দৌলতে তা বেশ সহজ সাধ্য। তাই নিজেদের সকল কাজ, মতামত, বক্তব্য এখন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ফেসবুলের মাধ্যমে তুলে ধরছেন তাঁরা।
ঠিক এই সময়েই ওপিনিয়ন টাইমস সার্ভে তে উঠে এল নজরকাড়া বিশেষ তথ্য । লকডাউনে মানুষের পাশে যে সব নেতা নেত্রীরা কাজ করছেন তাদের প্রতি মানুষের সমর্থন ফেসবুকে কেমন আছে। জানতে চাই কোন নেতা বা কোন দল এগিয়ে আছেন ফেসবুকে তাঁদের অনুগামীদের কাছে। কার বক্তব্যে পাওয়া যায় বেশি সাড়া। আর তাই আমরা সোজা চলে যাই, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজে, যাই বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর ফেসবুক পেজে। এখানেই শেষ না এরপর আমরা দেখি বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ফেসবুকের পাতায়, আর সর্বশেষ সংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের ফেসবুকে।
এই সার্ভেটি হয় গত ১ মাসের ( 9th June-9th July ) তাদের ফেসবুকে ভিডিও পোস্টের ভিত্তিতে। যেখানে তাঁদের সেই পোস্টে মানুষের রিঅ্যাকশান, ভিউস, কমেন্টস, শেয়ারস, কমেন্টস খতিয়ে দেখা হয়। আর সেখানেই উঠে আসে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাই এখন মানুষের বিচারে, জনসাধারণের কাছে কোন দলনেতা বেশি গ্রহণ যোগ্য আর কে একটু কম গ্রহণযোগ্য তাই দেখার পালা। এবার দেখে নিতে হবে ময়দানে কে কোন স্থানে, কত হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রথমেই যদি মুখ্যমন্ত্রী দিয়ে শুরু করা হয়, তাহলে এটা আশা করা যায় যে, মানুষের বিচারে তিনি অনেক এগিয়ে থাকবেন। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে বহু মানুষ ফলো করবেন সেটাই কিন্তু স্বাভাবিক। সে তাঁর দলের হোক কিংবা বিরোধী দলের। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা কেমন তা জানাটা আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন এখন মুখ্যমন্ত্রীকে আদতে কতজন শোনে এবং কতজন তার সত্যিই এক্টিভ ফলোয়ার্স তা জানাটা বেশ প্রয়োজন। তাঁর ফেসবুক পেজের গত এক মাসের ভিডিওর রিঅ্যাকশান এবং শেয়ারস এর উপর সার্ভে করলে জানা যায়, ৩, ৯২৮, ৬৮৭ জন ফলোয়ার্স মমতা বন্দোপাধ্যায়ের। গত ৮ই জুন থেকে ৮ই জুলাই অবধি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রয়েছে ১১ টি ভিডিও পোস্ট। কিন্তু তাঁর পোস্টে কতজন আদতে অ্যাকটিভ জানতে দেখা যায়, তাঁর সকল ভিডিও পোস্টের একটি অ্যাভারেজ রিঅ্যাকশান ০.৫৪ % মাত্র। এবং শেয়ারস এর অ্যাভারেজ, ০.০৬ %।
এবার আমরা সরাসরি চলে যাই, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ফেসবুক পেজে। বর্তমান দিনে কিন্তু দিলীপ ঘোষ তার কাজের তুলনায় নিজের অবান্তর বক্তব্যের জেরে বেশি প্রচারিত সোশ্যাল মিডিয়াতে। দিলীপ ঘোষের ফেসবুক ফলোয়ারস এর সংখ্যা, ৬২৯, ৪০৩। গত ৯ই জুন থেকে ৬ই জুলাই অবধি দিলীপ ঘোষের রয়েছে ২৮ টি ভিডিও পোস্ট। এরপর তাঁর ফেসবুকে অ্যাকটিভ ফলোয়ার্স কজন, তার হিসাব বার করলে দেখা যায়, তাঁর সকল ভিডিও পোস্টের একটি অ্যাভারেজ রিঅ্যাকশান ১.৩ % এবং শেয়ারস এর অ্যাভারেজ ০.১২ %।
এরপর আসা যাক, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর ফেসবুক পেজে। বর্তমানে, তাঁদের অবশ্য ভোট ব্যাঙ্ক এর সংখ্যা কিন্তু বড্ড নিচে। তবুও ফেসবুকে রয়েছেন সক্রিয়। গতকাল 9th July পর্যন্ত তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা, ১৭৩, ৫৪৩ জন। গত ৯ই জুন থেকে ৯ই জুলাই অবধি সুজন চক্রবর্তীর রয়েছে ৩৪ টি ভিডিও পোস্ট। এরপর তাঁর ফেসবুকে অ্যাকটিভ ফলোয়ার্স কজন, তার হিসাব বার করলে দেখা যায়, তাঁর সকল ভিডিও পোস্টের একটি অ্যাভারেজ রিঅ্যাকশান ১.৭ % এবং শেয়ারস এর অ্যাভারেজ ০.৫৪%।
এরপর কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের ফেসবুকে উঁকি দিয়ে পাওয়া যায় তাঁর নিজস্ব অ্যাকাউন্ট। সেখানেই তিনি নিজের সকল কাজকর্মের হদিশ দেন। গতকাল 9th July পর্যন্ত তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা, ১৬, ২১৮ জন। গত ১২ই জুন থেকে ৮ই জুলাই অবধি আব্দুল মান্নানের রয়েছে ১১ টি ভিডিও পোস্ট।এরপর তাঁর ফেসবুকে অ্যাকটিভ ফলোয়ার্স কজন, তার হিসাব বার করলে দেখা যায়, তাঁর সকল ভিডিও পোস্টের একটি অ্যাভারেজ রিঅ্যাকশান ০.৮ % এবং শেয়ারস এর অ্যাভারেজ ০.১৪ %।

এখানে হিসেবটা কিন্তু বেশ স্পষ্ট, ফলোয়ার্স এর সংখ্যা কম হওয়াতেও কিন্তু সবার থেকে এগিয়ে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে বর্তমানে রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী যে দুই দল আছে তাদের অবস্থা এমন করুণ কেন ? যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ফলোয়ার্স এর সংখ্যা অত্যাধিক মাত্রায়, তাঁর কিন্তু শীর্ষে বিরাজ করার কথা ছিল, কিন্তু আজ এতটা কম সংখ্যায় কেন তিনি ? তাহলে বিশ্বাসের গোড়ায় কী এবার ভাঙন দিয়েছে ? কেন মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুকে আজ এত কম সংখ্যক মানুষ অ্যাকটিভ ? যদিও সেই উত্তর খোঁজার উদ্দেশ্যে আমরা নেই। অন্য এক সময় আমরা হাজির হবো সেই প্রশ্নের সাথে।
এদিকে যদি আমরা বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পেজ দেখি, সেখানেও নির্নয় কিন্তু অসন্তোষজনক। রাজ্যে ১৮টি আসন জয়লাভের পরেও বিজেপি দল কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার জনগনের কাছে তাঁদের গ্রহণ গ্রহণযোগ্যতা তেমন ভাবে বাড়াতে পারেনি। এই মুহূর্তে রাজ্যে শাসক দলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে কিন্তু বিজেপি দল। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে তেমন অ্যাকটিভ ফলোয়ার্স দিলীপ ঘোষের কিন্তু তেমন নয়। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর থেকে তিনি এই রেসের খেলাতে এগিয়ে রয়েছেন।
এরপর আসা যাক, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, এক্ষেত্রে অন্যান্যদের তুলনায় কিন্তু তাঁর ফলোয়ার্স এর সংখ্যা ভীষণ ই কম। তাঁর রিঅ্যাকশান এর অ্যাভারেজ সংখ্যা মমতা বন্দোপাধ্যায় এর থেকে কম হলেও কিন্তু তাঁর পোস্টের শেয়ার সংখ্যা এদের দুজনের তুলনায় বেশি। যেখানে এদের তুলনায় সাংঘাতিক কম তাঁর ফলোয়ার্স এর সংখ্যা। সুতরাং বলা বাহুল্য চর্চার মধ্যে, মানুষের মধ্যে রয়েছে তিনি।
তবে সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় উঠে আসে সুজন চক্রবর্তীর ফেসবুক থেকে। যেখানে তাঁর দলের ভোট ব্যাঙ্ক প্রায় নেই বললে চলে, গত মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা কিন্তু বেশ বেশি। আর শুধু বেশি নয়, মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং দিলীপ ঘোষের তুলনায় বেশ কম ফলোয়ার্স হওয়া স্বত্তেও কিন্তু তাঁর রিঅ্যাকশান এবং শেয়ারস এর অ্যাভারেজ সংখ্যা কিন্তু সর্বাধিক। তাহলে কী মানুষের জন্য কাজ, সুজন চক্রবর্তীকে আনছে আরও মানুষের কাছে ? কারন গত মাসের হিসাব ঠিক সেটাই বলছে।
এই সার্ভে কিন্তু তুলে নিয়ে আসছে এক নয়া তথ্য। প্রশ্ন জাগাচ্ছে অনেক গুলি। কারোর ক্ষেত্রে কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতায় উঠছে প্রশ্ন। কারোর ক্ষেত্রে ১৮ টি আসন সভার উপর জাগছে সন্দেহ। তাহলে ভোট ব্যাঙ্ক শূন্য মানুষটাই এখন মানুষের কাছের ? কারন সোশ্যাল মিডিয়াতে তার গ্রহণ যোগ্যতাটাই সবচেয়ে বেশি। তবে আগামী মাসে বদলাতে পারে চিত্র, আসতে পারে নতুন চমক। কিংবা হয়ত এই চিত্রই আরও একবার নিয়ে আসতে পারে বড় সংখ্যার একটি চমক।