দেবশ্রী কয়াল : করোনার জেরে সবাই ভয়ে ত্রস্ত। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছেন। যাঁরা জীবিকার দায়ে প্রতিদিন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন, রীতিমত ভয়ের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছেন তাঁরা ও তাঁদের পরিবার। ভয় একটাই এই না করোনা চলে আসে ! করোনার বাড় বাড়ন্তিতে প্রত্যেক সপ্তাহে দু দিন করে রাজ্যে সম্পূর্ণ লকডাউন করার ঘোষনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে অফিস কর্মীদের তো মিলছে ছুটি কিন্তু কী অবস্থা বাড়ির পরিচারিকাদের ? তারা কী পাচ্ছে ছুটি ? কেমন আছেন তাঁরা এই লকডাউনে ?
করোনা পরিস্থিতে বাড়ির বাইরে বের হওয়া মানেই বিপদ। কিন্তু কাজে না গিয়েও যে উপায় নেই। তাই সকল সুরক্ষা বিধির নিয়ম মেনেই বের হতে হচ্ছে সবাইকে। এই আনলক ২ পর্বে আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। কারন রোজগার না হলে খাবে কী ? যে কোনো গৃহস্থ বাড়িতে বাড়ির পরিচারিকাদের এক বিশাল ভূমিকা থাকে। তাদের ছাড়া সকল কাজ করা বেশ সমস্যার, তাই তাদের ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে তাঁরা কতটা সুরক্ষিত বা তাঁদের কাজের কী অবস্থা জানতে ওপিনিয়ন টাইমস পৌঁছে যায় তাদের কাছে। জানতে চায় তাদের অবস্থা লকডাউনে, করোনা পরিস্থিতিতে কেমন কাটছে।
হাজরা এলাকার এক পরিচারিকাকে করোনা পরিস্থিতি লকডাউনে তার দিন কেমন কাটছে জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ” কাজে তো যেতে হবেই, নাহলে সংসার চলবে কীভাবে ? স্বামীর রোজগার এখন বন্ধ, তাই আমি এখন আমার পরিবারের ভরসা। এখন চারিদিকে যা হচ্ছে, তাতে বাইরে বের হওয়া বিপদ তো অবশ্যই, কিন্তু তাও সকল সুরক্ষা মেনেই বের হই। তারপর কাজে গিয়ে জামা কাপড় ছেড়ে কাজ করা শুরু করি। বৌদি বাড়ি ঢোকার মুখেই স্যানিটাইজার হাতে নিয়ে তৈরী থাকে। এমনিতেই অনেকদিন কাজ বন্ধ ছিল। তাই এখন কাজ শুরু হওয়ার পর, খানিক স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু এখন আবার কাজ বন্ধ হয়ে গেলেই তো মাথায় হাত পড়বে। ”
বেহালার রিনি দিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যেখানে কাজ করতাম, তারা এখন ভয়ে কাউকে বাড়িতে আসতে দিচ্ছে না। এইভাবে চলতে থাকলে তো দু বেলা খাবার জুটবে না আর কদিন পর থেকে। প্রথম প্রথম তো টাকা দিচ্ছিল দিদি কিন্তু এখন আর দিতে পারছে না। সত্যিই তো আমি কাজ করছি না, কদিন বা এইভাবে বাড়ি বসিয়ে বসিয়ে মাইনে দিয়ে যাবে তাঁরা। কিন্তু আমাদেরও সংসারের অবস্থা অচল হয়ে উঠছে। অন্য বাড়িতে কাজের চেষ্টা করছি, কিন্তু পাচ্ছি না। জানি না কী হবে, কী করে সব সামাল দেব ! ”
যাদবপুরের এক দিদি কে তাঁর লকডাউন পরিস্থিতির কথা জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ” কপাল ভালো এখনও তাও কাজটা যায়নি আমার। এখন অবশ্য প্রতিদিন যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহে ৪ দিন যাচ্ছি। আর সকল নিয়ম মেনেই যাচ্ছি। নিজের বাড়ির লোকের সুরক্ষার কথা তো ভাবতেই হবে। তবে মাইনেতা একটু কমেছে। টাকার সমস্যা এখন চারিদিকে। সংসার চালাতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। স্বামী নেই, শ্বাশুড়ি, দুই ছেলে আর মেয়ের সংসার আমার। সবাই এখন পড়াশোনা করছে। বড় ছেলেটা টিউশানি পড়াতো কিন্তু সেটাও তো এখন বন্ধ হয়ে রয়েছে। কবে যে এই দুর্দিন কাটবে, তাহলে শান্তি পাবো। ”
এতো ছিল মাত্র তিনটি ঘরের গল্প। এমন আরও অনেকে রয়েছে যাঁরা এই পরিস্থিতির সাথে নিত্য দিন লড়াই করে যাচ্ছে, একটু খেয়ে পরে বাঁচতে চাইছে তাঁরা। তাই তাঁদেরকে সাহায্যের জন্য আসতে হবে এগিয়ে, যাঁরা আমাদের বাড়ির সকলের কাজ করে, তাঁদের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোই আমাদের সকলের কর্তব্য।