” মা গো আমাকে কেউ তোলেনি, আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে ” না ফেরার দেশে একরত্তি অঙ্কিতা, সন্তান হারা শোকে মা এবং বাবা
অঙ্কিতার মৃত্যু সবাইকে বাঁচিয়ে দিলো এই ঘটনার কৈফিয়ত দেওয়ার হাত থেকে

তিয়াসা মিত্র : ” মা গো আমাকে কেউ তুললো না আমি নিজে গামলা থেকে বেরিয়ে এসেছি, আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে মা !” এই ছিল অঙ্কিতার জীবনের শেষ কথা তার মা-এর কাছে। মানবিকতা আজ বিলুপ্ত প্রায় এই ঘটনা তার প্রমান। একটি সাড়ে চার বছরের শিশু শিকার হলো সেই অমানবিকতার গ্রাসে। গরম জ্বলে পুড়ে মারা যেতে হলো তাকে। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের মেছেদা-তে।
সূত্রে জানা যাচ্ছে , ৩১-সে ডিসেম্বর সকাল ১২ টা নাগাদ কোলকাঘাট থানার লাগেনা চিলড্রেন্স পার্কে মা-এর সাথে খেলতে গেছিলো একরত্তি অঙ্কিতা। কিন্তু তারপর কি হলো ? তার মা জানাচ্ছেন-” মেয়েটার খিদে পেয়েছিলো বলে সামনের দোকান থেকে চলা ভাজা কিনতে গেছিলাম, এসে আমি চমকে উঠি মেয়েকে দেখে। তার সারা শরীর লাল হয়ে গিয়ে ফোস্কা পরে গেছে আর সে বলছে মা আমাকে কেউ তোলেনি আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে মা গো ! ” জানা যাচ্ছে সেই চিলড্রেন্স পার্ক লাগোয়া একরি মিষ্টির দোকান আছে যেখানে ঠিক ওই পার্কে ঢোকার রাস্তার পাশেই মিষ্টির দোকানের কর্মচারীরা এক গামলা ফুটন্ত গরম জল রেখে দেয় এবং কোনো ভাবে সেই গামলাতেই পরে যায় ছোট্ট অঙ্কিতা। কিন্তু কেউ তাকে তুলতে এগিয়ে আসেনি সবাই সামনে দাঁড়িয়ে দেখে গেছে এই মর্মান্তিক ঘটনা। কোনো ভাবে অঙ্কিতা নিজেই ওই গামা থেকে বেরিয়ে আসে এবং তার মা-কে এই হৃদয়ে বিদারী কথা গুলি বলে।
অঙ্কিতার বাড়ি শান্তিপুরের বিদ্যাসাগর কলোনী-তে, তার বাবা অর্ণব গোস্বামী পেশায় একজন গাড়ি চালক। খবর পেয়ে সেই জখমিত শিশুকে নিয়ে যাওয়া হয় তমলুকের সরকারি হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে ভর্তি করা হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের বার্নিং ওয়ার্ড-এ। সেখানেই টানা ৫ দিনের যন্ত্রনা সহ্য না করতে পেরে মারা যায় সেই ফুটফুটে অঙ্কিতা। শুন্য হয়ে যায় তার মা-এর কোল। মারা যাওয়ার খবর পাওয়া মাত্রই সেই ‘ শোভা মিষ্টান্ন ভান্ডার’ ভাংচুর করে স্থানীয়রা এবং সেই দোকানের মালিক এবং মালিকের বৌকে অপরাধী বলে ধিক্কার জানাই তারা। চিকিৎসকেরা বলেন ,” মেয়েটিকে যদি আর একটু আগে ওই গামলা থেকে বের করা যেত তাহলে এতো ক্ষতি হতো না, তার ক্ষতির হার অনেক বেশি ছিল, ঘাড় ,গলা,পেট ফোস্কাতে ভোরে গেছিলো। ” আগামীকাল অঙ্কিতা মারা যে এসএসকেএম হাসপাতালে।
পুলিশ সেই দোকানকে বন্ধ করার আদেশ দিয়েছেন এবং মালিক এবং মালিকের বৌকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে কেন সেই গামলা রাস্তাতে রাখা হয়েছিল তা এখনো জানা যায়নি। মৃতার বাবা বলেন, ” বাচ্চা গুলোকে সচেতন করেনি সেই দোকানের কর্মচারীরা, কেউ একবার বলেনি যে এইখানে এস না গরম জল আছে। আজ আমাদের বুকটা ফেটে যাচ্ছে শোকে। ” সত্যি এই ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমান করে দিয়ে গেলো যে আমাদের সমাজে কত অমানবিক অবয়ৰ ঘুরে বেড়াচ্ছে।