” বসন্তের সন্ধ্যা আজ নির্জীবিত “- ‘গীতশ্রী’ শ্রদ্ধার্ঘ-এ ওপিনিয়ন টাইমস
স্বর্ণালী যুগের শেষ নক্ষত্রপতন, সুরলোকের পথচারী "গীতশ্রী "

তিয়াসা মিত্র : ‘ আমরা বাঙালি ‘ এই শব্দটি যে যে কারণে আমরা এতো গর্বের সাথে বলতে পারি, তার মধ্যে অদ্বিতীয় কারণ হলো ” গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ” স্বর্ণালী যুগের বাহক হিসেবে ওনাকে সম্মোধন করলে হয়তো ভুল হবে না। সেই যুগের আধুনিক গানের কান্ডারি ছিলেন এই দিগ্বিজয়ী গায়িকা, ওনাকে দিগ্বিজয়ী গায়িকা বলার নেপথ্যে রয়েছে তার কর্ম জীবনের খতিয়ান। তবে বাঙালির যুগান্তরের ফারাক হয়েছে বিস্তর, কিন্তু এম কিছু গান যা আজ বাজে প্রতিটি ঘরে ঘরে।

১৯৩১ সালের ৪-ই অক্টোবর ঢাকুরিয়াতে জন্মগ্রহণ করে এই গায়িকা, পরিবারের সব থেকে ছোট সদস্য ছিলেন তিনি। সারেগামা-এর প্রথম হাতে খড়ি হয় তার বাবার কাছ থেকে এরপর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে নিজের অস্তিত্ব পাকা করতে তালিম নেওয়া শুরু করেন ‘উস্তাদ বোরে গুলাম আলী খান’-এর সান্নিধ্যে। হাতে লাল সুতো পরিয়ে গীতশ্রীকে নিজের শিষ্য হিসাবে আখ্যা দেন উস্তাদজী। তবে ভাগ্যচক্রে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতে জন না বেশি জনপ্রিয় তার থেকেও বেশি জনপ্রিয়তা পান স্বর্ণালী যুগের আধুনিক গানের প্লে ব্যাকে। তার কর্মজীবন শুরু হয় বোম্বাই শহর থেকে, যেখানে ১৯৫০-এ ‘ তারানা ‘ চলচিত্রে একটি গান দিয়ে তার সুরেলা সফরের শুভারম্ভ হয়। কিন্তু কোনো ব্যক্তিগত কারণে স্বপ্নের শহর থেকে গীতশ্রী ফিরে আসেন নিজ শহরে ১৯৫২ সালে। এর পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে কবি শ্যামল গুপ্তের সাথে অনেক শুভপরিনয় সম্পন্ন হয়। সুরেলা কর্মজীবনে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় জুটি ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যা-এর সাথে। সেই যুগের মহানায়ক এবং মহানায়িকা, অর্থাৎ “উত্তম সুচিত্রা “কণ্ঠের নেপথ্যে এই গাওক গায়িকা যুগলের কণ্ঠ ছাড়া অন্য কিছু ভাবাই যেতোনা কোনো ভাবে।
তার কর্মজীবনের সাথে তার পুরস্কার প্রাপ্তি এবং সেই পুরস্কারের কাহিনী যেন এক ইতিহাস সমান। ” নিশিপদ্ম” এবং ” জয়জয়ন্তী ” চলচিত্রে তার গায়কিতে ১৯৭১ সালে সম্মানিত করা হয় শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার-এ। এছাড়াও ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয, তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এই সমস্ত কিছুর মধ্যে তার অনুরাগীদের দল তার শিষ্যগণ সকলে বসন্তের সন্ধ্যাতে “সন্ধ্যাহীন” হয়ে পড়লেন, যা সত্যি শোকার্ত। কয়েকদিন আগেই আমরা কিংবদন্তি গায়িকা লতা মুঙ্গেশকরকে হারালাম আর সেই শোকের ক্ষততে পলিস্তর পড়তে না পড়তে আরো এক নক্ষত্র পতন যা সত্যি বিষাদের সুর বহন করে নিয়ে চলেছে এই বসতে মৃদুমন্দ আকাশে। আজো এমন কোনো লক্ষীপুজো যায় না যেখানে গীতশ্রী-এর সৃষ্টি ” এসো মা লক্ষী” সুরের সাথে মাকে আহ্বান জানানো হয় না। তবে, মৃত্যু তো দেহের হয় এবং আত্মা বিলীন হয় এই পঞ্চগর্ভে। আর সেই বিলিনি আত্মার ছত্র ছায়াতে সংগীত এবং সুর সুরক্ষিত থাকবে এবং গীতশ্রী-এর সৃষ্টি হয়ে থাকবে অমর